Hot

বাজেটে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব বাড়াতে জোর

আসছে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে প্রাক্কলন করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের জন্য চার লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ শতাংশ বেশি। এই বাড়তি রাজস্ব আয় দিয়ে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার, যাতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব বাড়াতে জোর

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আগের বাজেটের চেয়ে সংকোচনমূলক নীতিতে করা হবে।

বাজেটে ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি কমিয়ে ধরা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন বাজেট প্রাক্কলন চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঘাটতি রোধে জোর দেওয়া হবে। অগ্রাধিকার প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে; যাতে যথাসময়ে সুনির্দিষ্ট ব্যয়ে দ্রুত প্রকল্প শেষ করা যায়।

আসন্ন বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করা, স্মার্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। বৈষম্য কমিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজস্ব আয় বাড়াতে জোর দেবে সরকার।

সম্প্রতি বাজেট মনিটরিং অ্যান্ড রিসোর্সেস কমিটি অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অন ফিসক্যাল, মনিটারি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেট পলিসির বৈঠকে শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বাজেটের খসড়া এই রূপরেখার অনুমোদন করেছেন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এ আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য চার লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

যদিও গত ডিসেম্বরে আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত আকারের একটি বাজেট রূপরেখা তৈরি করেছিলেন। নতুন অর্থমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বাজেটে আকার কমিয়ে সাত লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করছেন, যা জিডিপির ১৪.২০ শতাংশ।

জিডিপির অনুপাতে এটি গত এক দশকে সবচেয়ে ছোট বাজেট হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাথমিকভাবে জিডিপির ৫.২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেট সাত লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণে ঘাটতি কমে জিডিপির ৪.৬ শতাংশে নেমে আসে। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরে এই ঘাটতি জিডিপির ৪.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার আশা করছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে বছরজুড়েই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল।

অন্য বছরের মতো এবারও রাজস্ব আয়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হচ্ছে। আগের বাজেটে রাজস্ব আয়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অর্জনে অনেকটা পিছিয়ে ছিল এনবিআর। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর চেয়ে ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, বাস্তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ এক লাখ ৯১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

আগামী বছরে রাজস্ব আয় বাড়াতে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে বেশ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছরের ৫০ লাখ টাকার বদলে আগামী অর্থবছর থেকে ১০ লাখ টাকা বা তার অধিক পরিমাণ ভ্যাটের জন্য ই-পেমেন্ট বা স্বয়ংক্রিয় চালান বাধ্যতামূলক করা। জেলা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় বাড়াতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।

আগামী বছরে আয়কর আইন-২০২৩ বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন করদাতা শনাক্তকরণে সরকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ওই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আয়কর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বর্তমানে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। তবে উচ্চ সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে তা এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সুদব্যয়ের অতিরিক্ত সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

গত রবিবার ইআরএফের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি ভোগাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী প্রণয়নের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আসছে বাজেটে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যের দিকে বেশি নজর দেবে সরকার। যাতে বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীল ফিরিয়ে আনা যায়। পাশাপাশি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাইজেশনে মনোযোগ বাড়ানো হবে। বাজেট প্রণয়নের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, আগামীতে আরো হবে। সবার মতামত নিয়ে একটি যৌক্তিক বাজেট দেওয়া হবে।

জ্বালানি তেলের দাম প্রতি মাসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে জানিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আগামী বাজেটে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানে বাড়তি নজর দেবে সরকার।

জানা যায়, নতুন বাজেটে সম্ভাব্য ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৫০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৪.৬%)। ঘাটতি পূরণে বিদেশি সহায়তা আর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। বাকিটা অভ্যন্তরীণ উৎস (ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য) থেকে ঋণ নিয়ে পূরণ করা হবে।

এ ছাড়া সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে চলতি বাজেটে গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে। চাহিদার দিক থেকে অনেক কিছু হ্রাস করা হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button