‘অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা’ আখ্যা দিলেও আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নেতানিয়াহুর: বর্বরোচিত রাফা হামলা
অবরুদ্ধ গাজার রাফা অঞ্চলে নিরীহ মানুষের উপর চালানো ইসরায়েলী বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে।আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রাফা অভিযান বন্ধের নির্দেশের পরে চালানো এই হামলার ব্যাপারে অবশেষে মুখ খুললেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর শক্ত সমালোচনার মুখে এ হামলাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা’ বললেন দেশটির যুদ্ধকালীন সরকার প্রধান। সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ভবন নেসেটে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন,ইসারেয়েলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় বেসামরিক মৃত্যু এড়ানোর জন্য ‘সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ নিয়ে আসছে।
ভয়াবহ এ হামলাতেও বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ আইডিএফ করেছে বলেও তিনি দাবি করেন।নেতানিয়াহু বলেন,রাফা অঞ্চল থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১ মিলিয়নের কাছাকাছি লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।এরপরেও সেখানে বেদনাদায়ক একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শরণার্থী শিবিরে চালানো এ হামলার পুরো প্রক্রিয়া তদন্ত করে এর ফলাফল সবার সামনে প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান। এ হামলায় অত্যাধিক বেসামরিক লোক নিহতের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বললেও ফের রাফা ও গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, ‘সমস্ত লক্ষ্য অর্জন হওয়ার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধের কোন অভিপ্রায় ইসরায়েলের নেই।যুদ্ধ থেকে এই মুহূর্তে সরে এলে উগ্রবাদীদের জয় হবে,ইরানের জয় হবে।’
গত রবিবার রাতে রাফা অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহতম হামলা চালায় ইসারেয়েলী বাহিনী। রাফায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত তাল আস-সুলতান এলাকার একটি আশ্রয়শিবিরে চালানো এই বিমান হামলায় সরাসরি বোমার আঘাত ও এর ফলে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে অনন্ত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক।
রাফায় নজিরবিহীন এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সাম্প্রতিক নির্দেশনা মেনে রাফায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই জোটের প্রধান কূটনীতিক জোসেফ বোরেল রোববারের হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।জাতিসংঘের শরণার্থী শিবির(ইউএনআরডাব্লিএ) এই হামলা গাজা উপত্যকা যে ‘পৃথিবীর নরকে’ পরিণত হয়েছে তার আরেকটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান। ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইলের গুইডো ক্রোসেত্তো গাজায় চলমান আগ্রাসনের ‘ আর গ্রহণযোগ্যতা নেই’ বলে উল্লেখ করেন।
নেসেটে এই বক্তব্য প্রদানকালে ইসরায়েলী সরকার প্রধান বেশ কয়েকবার জিম্মি পরিবারের সদস্যদের হট্টগোলের মধ্যে পড়েন। এ সময় তিনি জিম্মিদের মুক্ত করার ব্যাপারে হামাসের সঙ্গে চলমান আলোচনায় সরকারের ‘আন্তরিকতার’ কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।