Bangladesh

গতির নেশা কাড়ছে প্রাণ, বড় বিপদ ডেকে আনছে ধনীর দুলালদের রেসিং কার

  • অনিরাপদ হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং
  • ঢাকায় চলছে ধনীর দুলালদের রেসিং
  • গভীর রাতে গতি নিয়ে বাজি

রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া এলাকায় ২০২২ সালের নভেম্বরে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় হৃদয়ের। বাবার চায়ের দোকান বন্ধ করে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে বাসায় ফিরছিল সে। দোকান থেকে কয়েকশ গজ দূরে স্বাধীন পরিবহনের বাসের চাকার নিচে পড়লে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় দশম শ্রেণির ছাত্র হৃদয়। আহত হয়েছিল মোটরসাইকেলের পেছনে বসা তার এক বন্ধু। মোটরসাইকেল চালানোর বয়স না হলেও গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছিল সে। 

হৃদয়ের মতোই লাইসেন্স পাওয়ার বয়স না হলেও মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস, লেগুনাসহ বিভিন্ন যানবাহনের স্টিয়ারিং ধরছে অনেক আনাড়ি হাত। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। লাইসেন্সবিহীন এ ধরনের চালক শুধু নিজের জীবনই ঝুঁকিতে ফেলছে না, তাদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো অন্য নিরীহ মানুষের জীবনও কেড়ে নিচ্ছে অহরহ। বড় বিপদ ডেকে আনছে ধনীর দুলালদের রেসিং কার। 

সর্বশেষ সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে ১৫ বছরের এক কিশোর প্রাইভেটকার চালাতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই দুর্ঘটনার ভীতিজাগানিয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকারটি যাত্রীবাহী রিকশাকে ধাক্কা দিলে তিনজন গুরুতর আহত হন। 

ওই রিকশার আরোহী একজন নারী ব্যাংকার ও তাঁর প্রকৌশলী স্বামীর অবস্থা সংকটাপন্ন। রিকশাচালক মারাত্মক আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন। মোহাম্মদপুরের এই দুর্ঘটনা আবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সহীন কিশোর-তরুণ চালকের নৈরাজ্যের বিষয়টি সামনে এনেছে। 

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কারও লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব নয়। তবে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে অনেক কিশোরকে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। লেগুনার অধিকাংশ চালকের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আবার রাজধানীর অভিজাত এলাকার অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি সন্তানদের দামি গাড়ি উপহার দিয়ে থাকেন। জন্মদিন বা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে উপহার হিসেবে তাদের মোটরসাইকেল বা গাড়ি কিনে দেন। বন্ধুদের কাছে বাহাদুরি দেখাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় তারা। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, সন্তানদের ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি। জেনেশুনে কেন তারা ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে গাড়ির চাবি দেবেন? আর ঢাকার রাস্তায় রেসিং কার চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ, এখানে সেই ধরনের অবকাঠামো নেই। রাস্তায় চলাচলকারী অন্য যানবাহন ও পথচারীরা রেসিং কারের গতি অনেক সময় বুঝতেই পারেন না। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর রাজপথে গাড়ির গতির নেশা অনেকের প্রাণ কাড়ছে। রাত গভীর হলে গুলশান, বনানী, হাতিরঝিল, উত্তরা, ৩০০ ফিট এলাকায় রেসের জন্য অনেকে বের হন। মোটরসাইকেল, দামি প্রাইভেটকার ছাড়াও অনেকের বাহন ‘স্পোর্টস কার’। গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে তারা গতির দানব হয়ে সব চুরমার করে ছুটে চলেন। তাদের গতির রেস দেখে মনে হবে, এ যেন হলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর কোনো দৃশ্য।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও একাধিক তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল রেসের সঙ্গে বেশ কিছু গ্রুপ যুক্ত রয়েছে। তাদের অধিকাংশই বিত্তশালী পরিবারের সন্তান। রাত হলেই তারা রেস শুরু করেন। গুলশান থেকে শুরু করে হাতিরঝিল, মহাখালী হয়ে কে কত কম সময়ের মধ্যে আবার গুলশানে পৌঁছতে পারবে– এটা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। এসব নিয়ে তারা বাজিও ধরেন। প্রায়ই ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে তাদের ছুটে যেতে দেখা যায়।

বেশ কয়েকজন তরুণ বলছেন, রাজধানীর অধিকাংশ লোকজন রেস ও স্টান্টকে এক করে ফেলেন। স্টান্ট হলো– সামান্য গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে নানা রকম কসরত দেখানো। তবে রেসের গতিবেগ থাকে অস্বাভাবিক। স্টান্ট ও রেসের সঙ্গে জড়িত গ্রুপের মধ্যে আছে ফেরোশাস ফ্লাশ, হান্ট রাইডার্স, অল অ্যাবাউট রোড রাইডার্স, এপাইল রাইডার্স, বিডি রাইডার্স ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ রাইডার্স, নোয়াখালী রাইডার্স, রাজশাহী রাইডার্স, সৈয়দপুর ক্রেজি রাইডার্স ও পটুয়াখালী রাইডার্স।

২০২১ সালের নভেম্বরেও ঢাকায় মহাখালীতে ঘটেছিল ভয়ংকর এক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গতির একটি পাজেরো স্পোর্টস কার ডিগবাজি খাচ্ছিল সড়কের ওপর। গাড়িতে সাতজন ছিলেন। এই ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হয়েছিলেন। তারা হলেন ফাহমিদ আহমেদ রায়হান (১৯) ও আয়মন (২২)। আয়মন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ওমর ফারুকের ছেলে। আহত স্বাধীন (১৯) সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ছেলে। ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া গতির গাড়িটি জাহাঙ্গীর গেট থেকে ঘুরে মহাখালীর দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ছয়বার ডিগবাজি খায়। থেমে যাওয়ার আগে গাড়ি থেকে দু’জনকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়।

চট্টগ্রামেও রেসিং শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রেসিং করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এক দল কিশোর। রাতে নেভাল ওয়েস্ট পয়েন্ট এলাকায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল তাদের একজন। গাড়িতে ছিল তার ৬ বন্ধু। রাতে দায়িত্ব পালনের সময় ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য তাদের আটক করেন। পরে মুচলেকা দিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিশোররা পুলিশকে জানায়, শখের বশে তারা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল।

Show More

8 Comments

  1. You really make it seem so easy with your presentation but I
    find this topic to be really something which I think I would never understand.
    It seems too complex and extremely broad for me.

    I am looking forward for your next post, I will try to get the hang of it!

    Here is my blog :: vpn definition

  2. Hey there! I just wanted to ask if you ever have
    any issues with hackers? My last blog (wordpress) was hacked
    and I ended up losing many months of hard work due to no backup.
    Do you have any solutions to stop hackers?

    Also visit my blog … vpn ucecf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button