Hot

গ্রীষ্মের আগেই গ্রামে লোডশেডিং

শীত বিদায় নিতেই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। সঙ্গে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। দেশের কোনো কোনো জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষকে এখনই দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে।

অবশ্য দিনের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা এখনো উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একাংশ অলসই থাকছে। তবু লোডশেডিংয়ের কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। জ্বালানি আমদানির জন্য যথেষ্ট টাকা ও মার্কিন ডলার সরকার দিতে পারছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা এখন দিনে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। গ্রীষ্মকাল শুরু হলে অর্থাৎ এপ্রিলে তা বেড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়াতে পারে। জ্বালানির সরবরাহ না বাড়ালে তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পিডিবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো।

বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র বলছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গতকাল সোমবার দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল বেলা তিনটায় ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সরবরাহে ঘাটতি ছিল ৭৫৭ মেগাওয়াট, যা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার ছুটির দিনে রাত আটটায় সারা দেশে সর্বোচ্চ ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।

ঢাকায় বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে কোনো লোডশেডিং করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে দুই সংস্থা ডেসকো ও ডিপিডিসি। তবে কারিগরি কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পিডিবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো।

অবশ্য দেশের গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল দিনেও ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পেয়েছে তারা। এর মধ্যে বড় ঘাটতি হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগে। ফলে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরে লোডশেডিং বেড়েছে। টাঙ্গাইল, পিরোজপুর, কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার মূল্য দিতে হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না দিয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়।

ক্যাব জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম

পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৮ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। গতকাল দিনে গ্যাস থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হয়েছে সোয়া ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে সরবরাহের একটি টার্মিনাল বন্ধ। ফলে গ্যাস আমদানি কমেছে। টার্মিনালটি মার্চের শেষ দিকে চালু হতে পারে।

বড় ঘাটতি হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগে। ফলে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরে লোডশেডিং বেড়েছে। টাঙ্গাইল, পিরোজপুর, কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট। এখন কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোই বেশি চালানো হচ্ছে। সেখান থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে বড় অঙ্কের টাকা পায়। ওদিকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য নিয়মিত ডলার পাচ্ছে না তারা। ফলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

তেলভিত্তিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াট। সেখান থেকে দিনে এক হাজার মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। রাতে তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

ময়মনসিংহে লোডশেডিং বেশি

ময়মনসিংহের গ্রামগুলোতে লোডশেডিং বেশি। সেখানে কোথাও কোথাও দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। জেলার তারাকান্দা উপজেলা সদরের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষি উৎপাদন ও খামার পরিচালনায় সংকট তৈরি হয়েছে।

গরম বাড়তে থাকায় লোডশেডিং বেড়েছে বলে গতকাল ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয় বলে জানান ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্র-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর অধীন জেলার উত্তরের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, তারাকান্দা, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল ও গৌরীপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কেন্দ্রটির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল বেলা ১১টায় চাহিদা ছিল ৭৫ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৫৫ মেগাওয়াট।

লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষি উৎপাদন ও খামার পরিচালনায় সংকট তৈরি হয়েছে।

তারাকান্দা উপজেলা সদরের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম

দাম বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই

জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে না পারায় বিগত দুই বছর গ্রীষ্মে দেশে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং ছিল। এবার পরিস্থিতি ভালো থাকার আশা কম। বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকলেও তাদের ভাড়া দিতে হয়, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। গত অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অবশ্য বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। গত বছর ৫ শতাংশ করে তিন দফায় বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এ বছর সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার মূল্য দিতে হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না দিয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor