Trending

 ডান্সিং প্লেগ : নাচতে নাচতেই মৃত্যু হয় ৪০০ মানুষের

প্রতিনিয়ত কত ধরনেরই না ঘটনা ঘটে চলেছে এই বিশ্বে। এর মধ্যে অনেক ঘটনারই কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। যেমন বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে গেলে বিমান-জাহাজের হারিয়ে যাওয়া বা এরিয়া ৫১। স্থলভাগ সম্পর্কে অনেকটাই জানা গেলেও, সমুদ্রপৃষ্ঠের একটা বড় অংশই অজানা রয়ে গিয়েছে মানুষের কাছে। তবে শুধু কোনও জায়গা বা অঞ্চলই নয়, এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে, যার সঠিক ব্যাখ্য়া নেই। এমনই একটি ঘটনা হল ডান্সিং প্লেগ। যেখানে নাচতে নাচতেই মারা গিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ।

ইতিহাসের পাতা ঘাটলে উঠে আসে ডান্সিং প্লেগের কথা। প্লেগ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এক মারণ রোগ, যেখানে শত শত বা হাজার মানুষ মারা যায়। তবে ডান্সিং প্লেগ ছিল একটু আলাদা। ডান্সিং প্লেগে সত্যি সত্যই মানুষ নাচতে নাচতে মারা গিয়েছিলেন। ষোড়শ শতাব্দীতে, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ১৫১৮ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে ছড়িয়ে পড়েছিল ডান্সিং প্লেগ। রোমান শাসকদের অধীনে থাকাকালীনই এমন এক রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে সবাই পাগলের মতো নাচতে শুরু করেছিলেন এবং নাচতে নাচতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন।

কীভাবে ছড়াল ডান্সিং প্লেগ?

ফ্রউ ট্রোফেয়া নামক এক যুবতী একদিন হঠাৎই একা একা রাস্তায় নাচতে শুরু করেছিলেন। একঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা নয়, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে একা একাই নেচে যাচ্ছিলেন ওই যুবতী। কেন নাচছেন, তাও কাউকে বলেননি। ফ্রউ-কে নাচতে দেখে বাকিরাও নাচতে শুরু করেন।

রাতারাতি এক মাসের মধ্য়েই এই নাচ রোগের আকার নেয়। অক্লান্তভাবে নাচতে নাচতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনেকে। এভাবেই ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। কেউ ক্লান্তিতে, কেউ স্ট্রোক হয়ে, কারোর আবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হয়। উদ্বেগে প্রশাসন চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়। তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন, নাচই মুক্তির একমাত্র পথ। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। বাধ্য হয়ে সরকার প্রকাশ্যে নাচ করাই নিষিদ্ধ করে দেয়। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় প্রকাশ্যে গান বাজানোর উপরও। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ধীরে ধীরে রোগের প্রকোপ কমতে থাকে।

শুধু স্ট্রাসবার্গেই নয়, পরবর্তী সময়ে জার্মানি, হল্যান্ড ও সুইৎজ়ারল্যান্ডেও এই রোগ দেখা দেয়, যেখানে সাধারণ মানুষ বিনা কারণেই নাচতে শুরু করেন। তবে কোথাও রোগ স্ট্রাসবার্গের মতো মড়কের আকার নেয়নি। কোথা থেকে, কীভাবে এই রোগ ছড়িয়েছিল, তার কারণ আজও জানা যায়নি। এক তত্ত্ব হল, এক ধরনের ফাঙ্গাস থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। পাউরুটি বা শস্যের উপরে এমন এক ফাঙ্গি তৈরি হয়, যা অত্যন্ত বিষাক্ত। সাইকোঅ্যাকটিভ কেমিক্যাল থাকায় সকলে পাগলের মতো নাচতে শুরু করেছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button