Bangladesh

বেতন সমন্বয়ের সামর্থ্য নেই বেসরকারি খাতের

নতুন অর্থবছর থেকেই মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন সমন্বয়ের সামর্থ্য নেই বেসরকারি খাতের। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলার সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাত চাপের মধ্যে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সরকারি চাকরজীবীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সরকার ঘোষিত এই নতুন বেতনকাঠামোর উল্লম্ফনের ফলে একদিকে যেমন সরকারের ব্যয় বেড়ে বাজারে সঞ্চারিত হবে নতুন অর্থ, তেমনি বেতন বৃদ্ধির খবরে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে নানা মহলে শুরু হবে মূল্যবৃদ্ধির তোড়জোড়। এটি মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিতে পারে। যাদের বেতন বাড়েনি, মূল্যস্ফীতি তাদের ওপর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রণোদনা কার্যকর হলে সেটা বেসরকারি খাতের জন্য বৈষম্যমূলক হবে বলেও মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের দেখাদেখি বেসরকারি কর্মচারীরাও বেতন বাড়ানোর দাবি তুলতে পারেন। এতে চাপ পড়বে কর্তৃপক্ষ বা মালিকদের ওপর। কিন্তু তাঁদের সে অবস্থা নেই।

কালের কণ্ঠকে ফজলুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারি চাকুরেদের বেতন বৃদ্ধি বেসরকারি খাতের জন্য বৈষম্যমূলক। মূল্যস্ফীতির মধ্যে কঠিন সময়ে এই প্রণোদনা মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। বেতন সমন্বয়ের সামর্থ্য এই মুহূর্তে বেসরকারি খাতের নেই। গ্যাস-বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাত চাপের মধ্যে আছে।’

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় সরকারি চাকরিজীবীর মোট পদসংখ্যা ১২ লাখ ৪৬ হাজার। তবে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। তবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের মোট সংখ্যার সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, এই সংখ্যা অবশ্যই সরকারি চাকরিজীবীদের কয়েক গুণ ছাড়িয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য : বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির হার সরকারি কর্মচারীদের প্রণোদনার কারণে আরেকটু বাড়বে। কোনো জায়গায় সুবিধা বাড়লে সেটার প্রভাব বাজারে পড়ে। মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে যদি সরকারি কর্মচারীদের ভাতা বাড়ানো হয়, তাহলে অন্য খাতেরও বাড়ানো উচিত। তা না হলে বৈষম্যমূলক অবস্থার সৃষ্টি করবে। তা না হলে এই চাপটা অন্যদের ওপর বেশি পড়বে।’

তবে বেসরকারি খাতের জন্য সরকারের কিছু করণীয় আছে বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাতের জন্য প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে ন্যূনতম কত শতাংশ বেতন সমন্বয় করতে হবে, তার নির্দেশনা দিতে পারে। একই সঙ্গে সরকার বিভিন্ন খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দিতে পারে। এখনো অনেক খাত এর বাইরে রয়েছে। সরকার যেসব প্রণোদনা দিয়ে থাকে, সেখানে ন্যূনতম মজুরিসহ কিছু শর্ত দিতে পারে। শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকার খোলাবাজারে যেসব পণ্য সরবরাহ করে, তার পরিধি ও পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। এভাবে বেসরকারি খাতের নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য সুরক্ষা দেওয়া যেতে পারে।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের বাজার মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। সরকারি কর্মীদের প্রণোদনার অজুহাতে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে, এ ব্যাপারে নজরদারি ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button