ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নতুন হাতিয়ার রিজওয়ান
আইএনএস ধ্রুব। ১৭৫ মিটার লম্বা এই যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহনীর প্রভাব বৃদ্ধির মোকাবেলায় ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার। এবার সেই ধ্রুবের পাল্টা ‘অস্ত্র’ হাতে পেল পাকিস্তান।
সম্প্রতি পাকিস্তানের হাতে এসেছে যুদ্ধজাহাজ পিএনএস রিজওয়ান। চীনের সাহায্যে এই জাহাজ তৈরি করেছে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে আরবসাগর-সংলগ্ন এলাকায় ইসলামাবাদের নজরদারি আরো জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পিএনএস রিজওয়ান একটি গুপ্তচর জাহাজ। পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধেও এই জাহাজকে কাজে লাগানো সম্ভব। ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণের উপর নজর রেখে সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং সরবরাহ করবে রিজওয়ান।
পাকিস্তানের কাছে একাধিক যুদ্ধজাহাজ থাকলেও এই ধরনের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গুপ্তচর জাহাজ এই প্রথম। সূত্রের দাবি, জাহাজটি তৈরি করতে পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা করেছে চীন।
পাকিস্তানের সাথে চীনের সখ্য কারো অজানা নয়। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কটেও তার পাশে দাঁড়িয়েছিল বন্ধু চীন। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার হাত তুলে নেয়ার পরও বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এই চীন। অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরিতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেই বন্ধুই।
পাকিস্তানের রিজওয়ান কাজ করবে ভারতের ‘ধ্রুবের’ মতোই। তবে ‘ধ্রুবের’ চেয়ে আকারে এই জাহাজটি অনেক ছোট। পিএনএস রিজওয়ান মাত্র ৮৭ মিটার লম্বা, যা ধ্রুবের চেয়ে ৮৮ মিটার কম।
আইএনএস ধ্রুবকে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র সন্ধানী যুদ্ধজাহাজ বলা হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের নৌবাহিনীতে এই জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং চীনের পরে বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে এই গোত্রের যুদ্ধজাহাজ পেয়েছে ভারত।
বিশাখাপত্তনমের ‘হিন্দুস্থান শিপ ইয়ার্ড’-এ তৈরি ১০ হাজার টন ওজনের ধ্রুবের প্রধান বৈশিষ্ট্য তার অতি সংবেদনশীল ‘অ্যাক্টিড অ্যারে স্ক্যান রেডার’। যা অন্য ভারতের গোয়েন্দা উপগ্রহের ‘গতিবিধি’ এবং পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের হদিস দেয়।
শত্রুর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও মজুত রয়েছে আইএনএস ধ্রুবতে। গভীর সমুদ্রে শত্রু ডুবোজাহাজের সন্ধান, সমুদ্রতলের গঠন সংক্রান্ত গবেষণার কাজেও সাহায্য করতে সক্ষম এই জাহাজ।
ভারত মহাসাগরে চীনের নজরদারির জবাব হিসেবে ২০২১ সালে আইএনএস ধ্রুবকে প্রকাশ্যে এনেছিল নয়াদিল্লি। এবার পাকিস্তানের নৌবাহিনীতেও একই ধরনের যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হলো।
পাকিস্তানের ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত কোনো এলাকাকে লক্ষ্য করে বাইরের দেশ থেকে যদি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, আগেভাগে তা জানতে পারবে রিজওয়ান। পাকিস্তান নৌবাহিনীকে তা নিয়ে সতর্কও করতে পারবে।
ডুবোজাহাজ থেকে যদি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, তা সামলাতেও পারদর্শী পাকিস্তানের রিজওয়ান। কৃত্রিম উপগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও রয়েছে এই জাহাজের।
ভারত মহাসাগরে চীনের খবরদারির জবাব হিসেবে আইএনএস ধ্রুবকে এনেছিল ভারত। এ বার সেই চিনই পিএনএস রিজওয়ানকে আনল পাকিস্তান-সংলগ্ন সমুদ্রে।
পাকিস্তানকে রিজওয়ান তৈরির জন্য আর্থিক সাহায্য করে চীন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চাইছে কি না, তা নিয়েও পর্যবেক্ষক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, পাকিস্তানকে মাধ্যম করে পিএনএস রিজওয়ান আসলে ভারতের বিরুদ্ধে চীনেরই ‘অস্ত্র’। আরবসাগর-সংলগ্ন এলাকায় যা চীনা নজরদারিকেও জোরদার করতে পারবে।