ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য রুটে সম্ভাব্য বিপর্যয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সংযোগে প্রভাব পড়বে: সনোয়াল

ভারত-বাংলাদেশ পানিপথ প্রটোকল রুটে বড় ধরনের ব্যাঘাত দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করলেন ভারতের বন্দর, জাহাজ চলাচল ও পানিপথ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি প্রত্যাহার এবং নির্দিষ্ট বন্দর ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সনোয়াল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংযোগ রক্ষার যে ব্যবস্থাগুলি ছিল, সেগুলোর ওপরও এর প্রভাব পড়বে। কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংযোগ রক্ষাকারী ওই রুটে বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য হিন্দু বিজনেসলাইন।
ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিলের প্রভাব
গত ৮ এপ্রিল ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে দেয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ তৃতীয় দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে ভারতীয় স্থলবন্দর ব্যবহার করতো। এর মাধ্যমে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া সহ বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহন হতো। ভারতের দাবি, দেশের বন্দর ও বিমানবন্দরে অতিরিক্ত চাপ এবং লজিস্টিক জটিলতার কারণে এই চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতীয় সুতা ও টেক্সটাইল পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ভারতও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়- বাংলাদেশের প্রস্তুত তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য শুধু কলকাতা এবং নাওয়াশেবা বন্দর খোলা রাখা হয়। ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি স্থলবন্দর যেমন ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ি ও চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে পণ্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই বিধিনিষেধ বাংলাদেশের প্লাস্টিক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয়, তুলা এবং কাঠের আসবাব রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলবে।
আইবিপি রুটে কার্গো ট্র্যাফিকে পতন
সূত্র জানায়, বর্তমানে ইন্দো-বাংলা প্রোটোকল রুট (আইবিপি) দিয়ে পণ্য পরিবহন ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম ক্রুজ জাহাজ এমভি গঙ্গা বিলাসও এখন বাংলাদেশ জলসীমা এড়িয়ে সংক্ষিপ্ত রুট বিবেচনা করছে। এখনো পর্যন্ত এই ক্রুজে বুকিং শুরু হয়নি। এই রুট মূলত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদীর মাধ্যমে ভারত এবং যমুনা, মেঘনা, গোমতী নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশের জলপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সহজ করে।
কয়লা ছাই রপ্তানি ব্যাহত হবে
সনোয়াল বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪.৪৭ মিলিয়ন টন ফ্লাই অ্যাশ (কয়লার ছাই) বাংলাদেশে রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি বন্ধ হলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে। তিনি আরও জানান, এই জলপথে ভারতের যে সুবিধা ছিল- যেমন বাংলাদেশের মংলা বন্দরের একটি পৃথক ঘাট ব্যবহার করার অনুমতি, তা-ও প্রভাবিত হবে। মংলা বন্দর এবং এই রুটে থাকা অন্যান্য সংযোগ স্থাপনাগুলি সরাসরি বাণিজ্যিক অচলাবস্থার মুখোমুখি হবে।
আঞ্চলিক ভৌগোলিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা
এই পরিস্থিতি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান আঞ্চলিক বাণিজ্য সহযোগিতা ও সংযোগের ভবিষ্যতের ওপর একটি অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশ পারস্পরিক বাণিজ্যিক এবং ভৌগোলিক সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে আসছিল, যার বড় উদাহরণ ছিল আইবিপি রুটের কার্যকর ব্যবহার। কিন্তু সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং প্রতিশোধমূলক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।