Science & Tech

মহাকাশের গভীরে উত্তপ্ত পানির সমুদ্র

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তাঁরা সৌরজগতের বাইরে এমন একটি দূরবর্তী গ্রহের (এক্সোপ্লানেট) সন্ধান পেয়েছেন, যেখানে গভীর সমুদ্র থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই পৃথিবীর বাইরে বাসযোগ্য কোনো স্থানের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সমুদ্র আচ্ছাদিত এই এক্সোপ্লানেটটির সন্ধান তাঁদের প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেবে বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের এক দল গবেষক। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা আমাদের সৌরজগতের বাইরের ওই এক্সোপ্লানেটটির বায়ুমণ্ডলে পানির বাষ্প, মিথেন ও কার্বন ডাই–অক্সাইডের রাসায়নিক নমুনা দেখার দাবি করেছেন। এই এক্সোপ্লানেটটির নাম টিওআই–২৭০ ডি।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ওই গ্রহটির আকার পৃথিবীর ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ এবং এটি পৃথিবী থেকে ৭০ আলোকবর্ষ দূরে।

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেন, তাঁরা যে রাসায়নিকের মিশ্রণ পর্যবেক্ষণ করেছেন, তা পানির এক দুনিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানে রয়েছে হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল আর গ্রহজুড়ে বিস্তৃত এক সমুদ্র।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন বলেন, ‘ওই গ্রহের সমুদ্রের যে পানি, তা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়েও বেশি উষ্ণ হতে পারে। বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অনেক বেশি থাকায় এই মহাসাগর তরল অবস্থায় বিরাজ করতে পারে।’ তবে ওই গ্রহ বসবাসযোগ্য কি না, তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।

অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স লেটারস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যাটির পক্ষে বলা হয়েছে। তবে কানাডার এক দল বিজ্ঞানী এই এক্সোপ্লানেটটি নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করে তাদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরাও এক্সোপ্লানেটটির বায়ুমণ্ডলে একই রাসায়নিক থাকার কথা বলেছেন। তবে তাঁদের যুক্তি, তরল পানির জন্য ওই এক্সোপ্লানেটটি অনেক বেশি উষ্ণ। তাঁদের যুক্তি, সেখানকার পৃষ্ঠ পাথুরে হতে পারে। এর বায়ুমণ্ডলে ঘন হাইড্রোজেন ও পানির বাষ্প থাকতে পারে।

তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যে মতটিই প্রাধান্য পাক না কেন, সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ থেকে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের অত্যাশ্চর্য অন্তর্দৃষ্টির বিষয়টিই সামনে আসছে। এ টেলিস্কোপ গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ফিল্টার করা তারকারাজির আলোকে ধারণ করে এবং তাতে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে সহায়তা করে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে মহাকাশে পাঠানো হয়। এটি পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত। ২০২২ সালের ১১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে ধারণ করা প্রথম পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি প্রকাশ করেন। ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের মধ্যে এটি মহাজগতের সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি বলে দাবি করা হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button