Bangladesh

‘যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় প্রজন্মকে বাংলা শেখাতে ১০ হাজার ডলার ব্যয় হবে’

অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, ‘গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের বাংলা ভাষা শেখানোসহ তা ধারন ও লালনে উৎসাহিত করতে ১০ হাজার ডলার ব্যয় করা হবে। মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ইউএসএ চ্যাপ্টার এই ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানদের মাঝে বাংলা ভাষার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০ হাজার ডলার ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ।
   
গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, ‘গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদের বাংলা ভাষা শেখানোসহ তা ধারন ও লালনে উৎসাহিত করতে ১০ হাজার ডলার ব্যয় করা হবে। মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ইউএসএ চ্যাপ্টার এই ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বে প্রায় ৭ হাজার মাতৃভাষা রয়েছে। অনেক ভাষা মরে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বে যতদিন বাঙালি থাকবে, বাংলাদেশি থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাংলাভাষা মরবে না।’

‘বর্তমানে পৃথিবীর ১৭৫টি দেশে দেড় কোটি অভিবাসী বসবাস করে। প্রথম প্রজন্মে বাঙালি বাংলা ভাষায় পঠন, লিখন চালু রাখেন; বিপত্তিটা শুরু হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে, তারা কথা বুঝে কিন্তু ঠিকমতো বলতে পারে না। বাংলায় পড়তে এবং লিখতেও জানে না। এভাবে চললে প্রবাসে বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠিত না হয়ে তৃতীয় প্রজন্ম থেকেই বাংলা ভাষা বিলীন হয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার হল রুমে অভিবাসী বাঙালি নাগরিক সমাজ যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক গবেষক নুরুল বাতেন। 

লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন এবং নাট্যকার তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিউ ইয়র্কে নব নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা। আলোচক হিসেবে ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সিনিয়র প্রোগ্রামিং লাইব্রেরিয়ান সেলিনা শারমিন। 

অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘নিউইয়র্কে বাঙালি জনসমাজে এটাই আমার প্রথম অনুষ্ঠান। এখানকার অভিবাসীদের বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দরদ দেখে আমি অভিভূত। দ্বিতীয় প্রজন্মের মাঝে ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব আমরা।’ 

গবেষক নুরুল বাতেন বলেন, ‘কানাডার দুজন অভিবাসীর উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলাদেশের শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন কানাডার অধিবাসী রফিকুল ইসলাম। তিনি ১৯৯৫ সালে নিউইয়র্কে এসে দেখেছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জাতিসংঘের সামনে আন্তর্জাতিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়।’

অনুষ্ঠানে বিশ্বজিত সাহা বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার করে ফুল দেওয়া হয়, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পর সবচেয়ে বড় বইমেলার আয়োজন করা হয় এখানে, আগামী প্রজন্মের শিশু কিশোররা নিজেরা নিজেদের অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলায়, সব কিছুই সম্ভব হয়েছে উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং সহায়তায়। তাই এই গৌরবের কৃতিত্ব সবার। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ আমন্ত্রিত ৫০ জন নানা পেশাজীবী অভিবাসী উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান অতিথিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন কবি সামস আল মমিন, কবি ফকির ইলিয়াছ, সাংবাদিক সঞ্জীবন কুমার সরকার ও রিমন ইসলাম, অ্যাক্টিভিস্ট হাবিব রহমান হারুন। 

তাদের প্রশ্নের উত্তরে ড. হাকিম আরিফ বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কোর মাধ্যমে প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুবাদ কেন্দ্র চালু আছে, বাংলা ও ইংরেজিতে পাঁচ খণ্ডে মাতৃভাষা বিশ্বকোষ প্রকাশিত হবে, বহুভাষিক পকেট অভিধান প্রকাশিত হচ্ছে; পাঁচটি বইয়ে পনেরটি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসী প্রতিটি নাগরিক বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি। তাই সবাইকে বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পাশাপাশি নববর্ষ উদযাপন, বইমেলা, লালন-রবীন্দ্র-নজরুল বিভিন্ন সম্মেলনে দ্বিতীয় প্রজন্মকে ব্যাপক হারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একটি জাতির ভাষা আগে মরে এবং সব শেষে বিলীন হয় খাদ্যভ্যাস।’ 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button