Bangladesh

শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা: চতুর্থ পর্বে যুক্ত হচ্ছেন ১১৭ জন, শিক্ষক বেশি

২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস সামনে রেখে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকার চতুর্থ পর্ব। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের তালিকায় ১১৭ জন শহীদ বুদ্ধিজীবী গেজেটভুক্ত হতে যাচ্ছেন। তালিকাভুক্তদের মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা যাচাই-বাছাই ও গেজেট প্রকাশের জন্য গতকাল সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর সভাপতিত্বে যাচাই-বাছাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই সভায় তালিকার চতুর্থ পর্ব প্রকাশের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় গণহত্যা দিবসের আগের দিন ২৪ মার্চ তালিকাটি সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা যাচাই-বাছাই উপকমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক) গতকালের সভার পর বলেন, ‘সভায় আমরা একটা তালিকা উপস্থাপন করেছি। কমিটির সদস্যরা সবাই এর ওপর তাঁদের মতামত দিয়েছেন।

কিছু সংশোধনী হতে পারে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে ২৫ মার্চের আগে (২৪ মার্চ) আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করে তালিকা প্রকাশ করব।’

এবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এখনই আমি নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, শতাধিক শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম থাকবে এবারের তালিকায়।

এই নামগুলো আমরা পুরনো নথি, মাঠ পর্যায়ের আবেদন ও বিভিন্ন গবেষণা থেকে নিয়েছি।’

এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির আরেক সদস্য এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের বলেন, ‘এবারের তালিকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এই পর্বের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা সবাই প্রান্তিক পর্যায়ের। যাঁদের কেউ কখনো চিনত না। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও রাষ্ট্র তাঁদের নাম উচ্চারণ করেনি। সেসব অখ্যাত শহীদ বুদ্ধিজীবীর এই তালিকার মাধ্যমে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।

তালিকায় শিক্ষকদের প্রাধান্য

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আগের তালিকাগুলোর মতোই এবারের তালিকায়ও শিক্ষকদের প্রাধান্য থাকছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এবারের তালিকায় থাকা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ৪৭ জন শিক্ষক। এ ছাড়া তালিকায় চিকিৎসক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিকর্মী, প্রকৌশলী, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, চাকরিজীবী, আইনজীবী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, রাজনীতিক, ধর্মযাজকসহ অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষও রয়েছেন।

চার পর্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী ৫৫৯ জন

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২১ ও ২০২২ সালে তালিকার প্রথম পর্বে ১৯১ জন ও দ্বিতীয় পর্বে ১৪৩ জনের নাম প্রকাশ করে। বছর দেড়েকের বিরতির পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামসহ তালিকার তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হয়। এবার চতুর্থ পর্বে যুক্ত হচ্ছেন ১১৭ জন। গেজেট আকারে প্রকাশ পেলে সব মিলিয়ে চার পর্বে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৫৯ জন।

হঠাৎ তালিকায় গতি

দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু ২০২০ সালের নভেম্বরে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ৩৩৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করা হয়। এরপরই তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়।

বিষয়টি স্বীকার করে গত বছরের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ‘মাঝখানে আমাদের আগের সচিব সাহেব (সাবেক সচিব খাজা মিয়া, বর্তমানে ওএসডি) একটি মিটিংও করেননি। তাঁর জন্য দেরি হয়েছে। এখন আমরা তাগাদা দিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মন্ত্রীর নির্দেশ ও নতুন সচিব আসার পর থেকে তালিকা তৈরির কাজটি আবার গতি পেয়েছে। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য চৌধুরী শহীদ কাদের গতকাল বলেন, ‘নতুন সচিব (তালিকা প্রণয়ন কমিটির সভাপতি) আসার পর কাজ গতি পেয়েছে।’

কমিটি ও তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের নভেম্বরে ১১ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে।

বর্তমানে কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি আরমা দত্ত, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এই কমিটির সভাপতি। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার যুগ্ম সচিব কমিটির সদস্য। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ জহিরকে আহ্বায়ক করে কমিটির ছয় জন সদস্যকে নিয়ে একটি উপকমিটি করা হয়। উপকমিটি খসড়া তালিকা করে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মূল কমিটির কাছে উপস্থাপন করে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button