Bangladesh

অপকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ

১৫ বছরে হাজারো অপকাণ্ড খারাপ কাজ করে কেউ পার পায়নি, পাবেও না : ওবায়দুল কাদের :: এক নেতার ধর্ষণকাণ্ডে আমরা বিব্রত : ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক

ফের আলোচনায় ছাত্রলীগ। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের। গত ১৫ বছর ধরে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে আর সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। সংঘাত-সংঘর্ষ, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-ধর্ষণ-অপহরণ-জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, শিক্ষক পেটানো-চাঁদাবাজি এমন কোনো অপকর্ম নেই যা ছাত্রলীগ করেনি। এমনকি সংগঠনের নেত্রীদের পদ পদবি দেয়ার নামে সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করার অভিযোগও প্রায়ই খবর হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে ’৫২ ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এ গণঅভ্যুত্থান, ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সংগঠনটির নাম শুনলেই মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ছাত্রলীগ মানেই যেন আতঙ্কের নাম, ছাত্রলীগের নেতা মানেই যেন ভীতিকর কোনো ব্যাক্তি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংগঠনটি সরকারের মন্ত্রী এমপিদের ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ছাত্রলীগ যেন ফ্যাঙ্কেস্টাইন হয়ে গেছে। ফলে সংগঠনটি বার বার বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলছে। সংগঠনটির নেতাকর্মীর্ াএতোই বেপরোয়া যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত এক সময় সংগঠনটির সংগঠনিক অভিভাবকের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন।

কোন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে না অপরাধের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। নানা সময়ে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অপরাধ ও অপকর্মের কারণে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এই ১৫ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ইতিবাচক প্রচারও ম্লান হয়ে গিয়েছে ছাত্রলীগের অপকর্মে। যার মধ্য দিয়ে বিব্রত হতে হয়েছে সংগঠনটির অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগকে। সর্বশেষ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগ বিব্রত বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এ দিকে গতকাল সোমবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের উপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আপত্তিকর আচরণ নিয়মিত খবর ছিল ছাত্রলীগের অপকর্ম। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হায়রানী, মারধর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনটি। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের পিটিয়ে, নারী কেলেঙ্কারী, অর্থ কেলেঙ্কারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন হল দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যেই অসংখ্যাবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘাতে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সর্বশেষ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও তার কয়েকজন সাঙ্গ পাঙ্গ। যাদের মধ্যে বহিরাগতও রয়েছে। ওই ঘটনা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি। এর আগে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ চলাকালে পুরাণ ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে দরজি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল কর্মী নৃশংসভাবে কুুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করেন। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। সে সময় ছাত্রলীগের এই দুটি হত্যাকান্ড গণমাধ্যমে ব্যাপক সারা ফেলেছিল।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক। মোস্তাফিজুর সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ধর্ষণের ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ নেতার ওই অপরাধ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হলেও তাদের কোনো খারাপ কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। ওবায়দুল কাদের বলেন, খারাপ কাজ করে কেউ পার পায়নি, পাবেও না। বিশ্বজিৎ হত্যায়ও কাউকে বিচারহীন থাকতে দেওয়া হয়নি। সংগঠনে থেকে কেউ কেউ খারাপ কাজ করতে পারে। দেখতে হবে দল কোনো ছাড় দেয় কি না। তিনি বলেন, আমি এ কথা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।

এর আগে ২০১২ সালের ৮ জুুলাই সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়া হয়। এতে ৪২টি কক্ষ ভস্মীভূত হয়। আর ২০১৬ সালে ৩ অক্টোবর শাবি ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক বদরুল আলম সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এই দুটি ঘটনা সে সময় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। এর মধ্যে সে সময় ভস্মীভূত সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রবাস পরিদর্শনে গিয়ে কেঁেদ ফেলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোকে গত ১৫ বছরে ক্রমাগত রণক্ষেত্রে পরিণত করে ছাত্রলীগ। এই ১৫ বছরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছিলেন ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতারা। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয়রানি ও নির্যাতন করা থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যেতে থাকে এই সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে টেন্ডারবাজির অভিযোগে সরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজে উপাচার্যের কাছে তারা চার থেকে ছয় পার্সেন্ট চাঁদা দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগকে শোধারানোর জন্য এর পর জয়-লেখককে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তাদের নেতৃত্বে সময় খোদ ছাত্রলীগ থেকেই তাদের বিরুদ্ধে কমিটি বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের দায়িত্ব পান সভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসাইন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। এ সময় ছাত্রলীগের বড় কোন সংঘাত না হলেও ছোট খাট সংঘাত ও সংঘর্ষ চলমানই রয়েছে। অব্যাহত রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরার ঘটনাও। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে বর্তমানে সাদ্দাম-ইনানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। যা এখনও সেখানে আশার মুখ দেখে নি বলেন মনে করছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।

বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাদের সময়ও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘাত ও সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। গত শনিবার ঢাকার সরকারি তিতুমির কলেজে মদ্যপ অবস্থায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম ও শামীম মোল্লা দেশীয় অস্ত্র, রড, চাপাতি দিয়ে হামলা করেন। ওই ঘটনায় ৫ জন আহত হন। গত ৪ জানুয়ারী নাটোরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ আহত হয়েছেন ৪ জন। আর চলতি মাসে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়। এর আগে ২০২৩ সালেও ওই সংঘাত, অপরাধ, অকর্ম জারি রেখেছিল ছাত্রলীগ। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে এক ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের নামে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ইডেন কলেজে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে শিক্ষার্থীর হাতের আঙ্গুল ভাঙেন এক ছাত্রলীগ নেত্রী। ৭-৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে চার ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই গত এক বছরে একাধিকবার সংঘাত ও সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত ১ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপের নেতা-কর্মীরা প্রায়শই ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারী কটেজে মেয়ে নিয়ে যাওয়ায় দুই বন্ধুর মধ্যে হওয়া বাগবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দুইটি উপগ্রুপ ভিএক্স এবং সিএফসি। এ ঘটনায় দুই উপগ্রুপের অন্তত আটজন নেতাকর্মী আহত হয় বলে জানা গেছে। এর আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্ররীগ প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে, অবৈধভাবে হলের রুম দখল করে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মারধর করে, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাঙচুর করে, এমনকি শিক্ষকদের হুমকিও দেয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) কয়েক বছর আগে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘাতের কারণে ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর পরেও সেখানে ছাত্রলীগের সংঘাত-হামলা চলতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে ছাত্রলীগের নেতারা রয়েছেন। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ সংগঠনের নেতাদের অপরাধে জড়িয়ে পরা নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ইনকিলাবকে বলেন, সমাজ গঠনে নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ যে কোনো মানুষের জন্যই অপরিহার্য। তাই আমরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে নৈতিকতার চর্চা বেগবান করার জন্য বিভিন্ন সময়ে কাউন্সিলিং ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও এই কর্মপ্রয়াস অব্যাহত থাকবে। দেশের শিক্ষিত সমাজের মাঝে যদি নৈতিকতার বীজ বপন না করতে পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা চেষ্টা করি কেউ যেন অপরাধে জড়িয়ে না যায়, কিন্তু ছাত্রলীগের বিচ্ছিন্ন কিছু নেতাকর্মী সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। ব্যক্তি পর্যায়ের এসব অপরাধের দায় অবশ্য ছাত্রলীগের নয়। তবে ছাত্রলীগের যে কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি এবং তা সবসময় বহাল থাকবে। ছাত্রলীগ কখনো অপরাধকে প্রশ্রয় দিবে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইনান বলেন, একজন ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে নয়, দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়ে তারা যে অপরাধ করেছে তা খুবই বিব্রতকর। এই যুগে এসেও দেশের প্রথম সারির একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাঝে কিভাবে এমন মানসিকতা গড়ে ওঠে তা আমার বোধগম্য নয়।

এ দিকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোছা.জান্নাতী বেগম জানান, গতকাল সোমবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবের অনুসারী যাযাবর নাইমের নেতৃত্বে এই অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের একটি কক্ষে সিট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও মারামারিতে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। এতে আহত হয় একাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে একটি অংশের হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা। এতে গুরুতর আহত হন দৈনিক যায়যায়দিনের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবীব এবং আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফাহাদ বিন সাইদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী লুবন মোখলেসের নেতৃত্বে লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তুহীন (পূর্বে বহিষ্কৃত), রায়হান, চারুকলার ২০১৭-১৮ সেশনের শাহরিয়ার এবং চারুকলার ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহানসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন লাঠিসোটা, রড় সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে, উপর্যপুরি কিল ঘুসি, লাথি,সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। আহত দুই সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাথার দানে নেওয়া হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে রেফার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড সৌমিত্র শেখর আহত সাংবাদিকদেরকে মেডিক্যাল সেন্টারে দেখতে এসে বলেন, যারা হামলা করেছে, তারা যে-ই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ দিকে চেয়ে আহত সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের জীবনের নিরাপত্তা সহ দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তাদের।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button