Bangladesh

অবলোপন বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা

খেলাপি ঋণ আদায়ে অবলোপন নীতিমালা আরও শিথিল করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ঋণ তিন বছরের পরিবর্তে দুই বছর ‘মন্দ মান’ হিসেবে খেলাপি হলেই তা অবলোপন করে ব্যাংকের ব্যালান্সশিট থেকে বাদ দেওয়া যাবে। এ উপায়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ কমানো হবে। পাশাপাশি আলাদা কোম্পানির কাছে অবলোপন করা ঋণ বিক্রি, এমডির কর্ম মূল্যায়নে ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোরতা, ঋণ পরিশোধে আর নমনীয়তা না দেখানোসহ একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো এবং করপোরেট সুশাসন জোরদার বিষয়ে আলোচনায় সুনির্দিষ্ট ১৭টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনুকূলে সরকার ইস্যু করা বন্ড জামানত রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ধার, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসন পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ১ হাজার কোটি টাকার প্রাক-অর্থায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের শর্তের আলোকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকের ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ পরিশোধ না করেও যে উপায়ে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা করা যাবে না। 
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তবে আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। আইএমএফের শর্তের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি বা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ দুর্দশাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পরিচালক পর্ষদের সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, খেলাপিদের ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করে তাদের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। তারা নতুন করে জমি, বাড়ি ও গাড়ি কিনতে পারবেন না। নতুন ব্যবসাও খুলতে পারবেন না। ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমাতিরিক্ত ঋণ, বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং জালিয়াতি অথবা প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ প্রবণতা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দিয়েছে। কোনো ব্যাংক এর মধ্যে পড়লে আগামী বছরে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে যেসব ঋণখেলাপি ব্যাংকের পরিচালক আছেন, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোর্টের আদেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিতে পারে না।

খেলাপি কমাতে ১১ কর্মপরিকল্পনা
২০২৬ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশে নিচে নামাতে মন্দঋণ অবলোপনের সময় ৩ বছর থেকে কমিয়ে ২ বছর করা হচ্ছে। এখনকার তুলনায় এতে খেলাপি কমবে ৪৩ হাজার ৩০ কোটি বা ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এখনকার মতো শতভাগ প্রভিশন রেখে এসব ঋণ অবলোপন করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের এমডিদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে আলাদা একটি ‘অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট’ করতে হবে। ব্যাংকের এমডির কর্মমূল্যায়নে এই ইউনিটের সফলতা বিবেচনা করা হবে। এ ধরনের ঋণ কেনার জন্য বেসরকারি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইন করা হবে। এতে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট পরিষ্কার হবে।

আদায় না হলেও বিভিন্ন উপায়ে নিয়মিত দেখানো দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের বিপরীতে আয় দেখানো যাবে না। কেবল প্রকৃত আদায়ের বিপরীতে ব্যাংক আয় দেখাতে পারবে। এ ছাড়া করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি শিথিলতার কারণে ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি হচ্ছে না। এতে করে ঋণ পরিশোধের প্রবাহ কমে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। আগামীতে আর এ সুবিধা না দেওয়ায় নগদ প্রবাহ বেড়ে তারল্য সংকট কমবে। অন্যদিকে ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী খেলাপি করা হবে। এ ছাড়া বর্তমানে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। প্রতিটি ব্যাংকের আইন বিভাগকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

রোডম্যাপে আরও বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা নতুন জমি, বাড়ি-গাড়ি কিনতে পারবে না। এমনকি নতুন ব্যবসাও খুলতে পারবে না। আর খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারে কর্মকর্তাদের উৎসাহ দিতে বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। ভুয়া জামানত দিয়ে ঋণ নেওয়া ঠেকাতে ব্যাংকের নিজস্ব মূল্যায়নের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মূল্যায়ন করতে হবে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ৬ কর্মপরিকল্পনা : খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ৬টি কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় পর্ষদে। এর মধ্যে রয়েছে– যোগ্য পরিচালক নির্বাচনের লক্ষ্য বর্তমান নীতিমালা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য হালনাগাদ করা, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আলাদা সম্মানী এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন, ব্যাংক এমডি বাছাই প্রক্রিয়া কঠোরভাবে পরিপালন এবং পুনর্নিয়োগে কর্মমূল্যায়ন বিবেচনায় নেওয়া, খেলাপি ঋণ কমাতে এক গ্রাহকের ঋণসীমা যথাযথ মেনে চলা এবং কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা। এ ছাড়া ব্যাংকের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor