অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধ হবে কবে
হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি
২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছিল ওই বছরের ১ অক্টোবর থেকে নেটওয়ার্কে নতুনভাবে যুক্ত সব অবৈধ হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ওই সময় অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধ না করলেও আড়াই বছর পর আবারও অবৈধ মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সাশ্রয় হবে ৬ হাজার কোটি ডলার। বন্ধ হবে ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি।
দেশে অবৈধভাবে আসা সব মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাবে অথবা চলতি বছরের জুলাই মাসের পর আর চালানো যাবে না অনিবন্ধিত মোবাইল হ্যান্ডসেট। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিটিআরসি বলছে, শঙ্কার কিছু নেই। বৈধ বা অবৈধ কোনো হ্যান্ডসেটই বন্ধ করা হবে না, যদি সেটি জুলাই মাসের আগে ব্যবহার শুরু করেন। তবে ৩০ জুনের পর অননুমোদিত মোবাইল কিনলে সেটি আর ব্যবহার করা যাবে না। জানা গেছে, গত সপ্তাহে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক বৈঠকে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আর কোনো অবৈধ মোবাইল ফোন চালু করা যাবে না। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে উৎপাদিত, সংযোজিত ও আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেটের তথ্য ভান্ডার তৈরি এবং স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধনের ব্যবস্থা বিটিআরসিতে রয়েছে। পাশাপাশি পরিচয় শনাক্ত নিশ্চিত করার সেবাকে আরও সহজলভ্য করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, নিবন্ধনহীন মোবাইল ফোন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেদিন থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে তার আগ পর্যন্ত আমাদের চারটি নেটওয়ার্কে যেসব হ্যান্ডসেট চালু আছে সেগুলো চালুই থাকবে। এসব ফোন যেখান থেকে যেভাবেই কেনা হোক।
আমরা অবৈধ মোবাইলের বাজার বন্ধ করতে চাই। বিটিআরসি সূত্র জানায়, দেশের ৯৮ ভাগ মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ ভাগের বেশি মানুষ ব্যবহার করেন ফিচার ফোন। আর ৪০ শতাংশের কম মানুষ ব্যবহার করেন স্মার্ট ফোন। দেশে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হয়। বৈধ পথে আসা এবং দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের সঙ্গে এই সংখ্যা যোগ করলে তা আরও বেশি হবে। চলমান ডলার সংকটের মধ্যেও প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে অবৈধ ফোনের কারণে।
তাই ডলার সাশ্রয়ে অবৈধ ফোনের কারবার বন্ধের উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে। বিটিআরসি বলেছে, দেশে প্রতি বছর বিক্রি হওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ অসাধু উপায়ে কর ফাঁকি দিয়ে বাজারে ঢুকছে। ফলে ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ২০২১ সালের জুলাই মাসে অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল বিটিআরসি। ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নামের এক ব্যবস্থায় অবৈধভাবে আমদানি করা মুঠোফোন চালু করা যাবে না বলে জানানো হয়েছিল। ওই বছর ১ অক্টোবর এনআইআর চালুও করা হয়। কিন্তু অক্টোবরের শেষ দিকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আড়াই বছর পর আবারও এনইআইআর ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে সংশয়।