Bangladesh

অস্থিরতায় পর্যটন খাতে ধস ক্ষতি হাজার কোটি টাকা

একের পর এক বুকিং বাতিল * পর্যটনকে হরতাল অবরোধের বাইরে রাখার দাবি

কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। একের পর এক বাতিল হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণের বুকিং। বছরের এ সময়ে পর্যটন নগরীর হোটেল-রিসোর্টে লাখো পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও দুই সপ্তাহ প্রায় ফাঁকা ছিল জেলার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস।

এ অবস্থায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে বলে দাবি পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধে পর্যটন মৌসুমের শুরুতে তারা ধাক্কা খেয়েছেন। বছরের এ সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করেন।

কিন্তু অবরোধে চলতি মাসের শুরু থেকে সব বুকিং বাতিল করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসার পথে গণপরিবহণ না পাওয়া ও রাস্তাঘাটে সংঘাত, সংঘর্ষের কথা চিন্তা করে ভ্রমণপিপাসুরা আসছেন না। ফলে মৌসুমের শুরুতে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম অক্টোবরে শুরু হয়। মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের সরগরম থাকে। এবার মৌসুমের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহ প্রায় ফাঁকা ছিল সব হোটেল-মোটেল। অবরোধের কারণে বুকিং বাতিল হয়েছে।

সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকতে তেমন পর্যটক নেই। পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন। পর্যটক না থাকায় বিচবাইক, ঘোড়া, ফটোগ্রাফার, জেটস্কি ও ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।

সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বিচবাইক চালিয়ে সংসার চালান শহরের সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক। তার উপার্জনে চলে বৃদ্ধ মা-বাবা, দুই বোন ও এক ভাইয়ের ভরণপোষণ। দুই সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। হরতাল-অবরোধে কমেছে পর্যটক। এখন মোজাম্মেলের আয়শূন্য। পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।

মোজাম্মেল জানান, করোনা মহামারির সময়ে সৈকতে পর্যটক আসা কমে যাওয়ায় কোনোরকমে সংসার চালিয়েছি। এখন বিএনপির হরতাল-অবরোধে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। দৈনিক আয় কমে গেছে। সংসার চলছে ধারদেনা করে কোনোমতে।

শুধু মোজাম্মেল নন, তার মতো দুই শতাধিক বিচবাইকার রয়েছেন সৈকতে। তাদের প্রত্যেকের সংসার চলছে কোনোমতে। বিকল্প রোজগারের উপায় খুঁজছেন অনেকে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয় সাইফুল আলমের সঙ্গে। পর্যটকদের ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে তার সংসার। অবরোধে কমেছে আয়। কয়েকদিন ধরে যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে মালিকের ভাড়া এবং ঘোড়ার খাদ্যের জোগান দিতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে তার সংসারও চলছে ধারদেনা করে।

একাধিক হোটেল-মোটেল মালিক জানান, অক্টোবরের আগে প্রতিদিন কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং থাকত। দিনে অর্ধলক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হতো। শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এ সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেত।

কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতায় তা নেমে এসেছে ১০ হাজারে। যারা আসছেন তাদের মধ্যে আবার স্থানীয়দের সংখ্যা বেশি। অবরোধ উপেক্ষা করে যারা বাইরে থেকে সৈকতে আসছেন, তাদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক।

শুক্রবার সৈকতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, টানা অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করেছেন তারা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকে বিমানযোগে ঘুরতে এসেছেন। তবে দুই-একদিনের মধ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন সাহেদুল ইসলাম ও আফরোজা আক্তার দম্পতি। তারা জানান, ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত ফিরে যাবেন। সৈকতে মানুষজন না থাকায় নিজেদেরই ভয় লাগছে। এ ভরা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পর্যটক থাকার কথা ছিল। কিন্তু পর্যটক নেই।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, এক কথায় পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। একের পর এক হরতাল-অবরোধে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ফাঁকা। অথচ প্রতি বছর এ মৌসুমে লাখো পর্যটকে মুখর থাকে কক্সবাজার। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব বাতিল করতে হবে। এ থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।

পর্যটকবাহী যানবাহন হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে কলাতলী-মেরিনড্রাইভ সড়ক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৌখিম খান বলেন, টানা অবরোধে পর্যটন ব্যবসায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পর্যটন খাতকে বাঁচাতে পর্যটকবাহী যানবাহন হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখা দরকার। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

কক্সবাজার চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করলে চলতি মৌসুমে পর্যটন খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor