ইসরাইলের বোমার আগুনে পুড়ে মরছে ফিলিস্তিনিরা
দীর্ঘ সাত মাস পেরিয়ে গেছে গাজা যুদ্ধ। ইসরাইলের লাগাতার হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। তবুও থামছেই না ইসরাইলের বর্বরতা। বরং দিন দিন আরও নৃশংস হয়ে উঠছে ইসরাইলি সেনারা। ইসরাইলের অবিরত হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন অনেকেই। জীবন বাঁচাতে ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু নিরাপত্তা নেই সেখানেও। আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতেও পড়ল ইসরাইলের ভয়ংকর থাবা। জীবন্ত পুড়ে ছাই হতে হলো নিরাপদ ভাবা সেই জায়গাটিতেও।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাফাহর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী তাঁবু লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
রোববার রাতের (স্থানীয় সময়) হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। সোমবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নিরাপদ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত রাফাহর তাল আস-সুলতান এলাকায় তাঁবুর ভেতরে থাকা অনেক ফিলিস্তিনি ইসরাইলের বোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাহর তাল আস-সুলতানে জাতিসংঘ মিশন ইউএন-আর-ডব্লিউর লজিস্টিক স্পেসের পাশে অস্থায়ী তাঁবু বানিয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের বিশ্বাস ছিল, সেখানে থাকলে নিরাপদে থাকবেন। কিন্তু জনাকীর্ণ ওই স্থানে ৮টি শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। প্লাস্টিক ও কাপড়ের তৈরি তাঁবু হওয়ায় হামলার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।
ইসরাইলি বাহিনী হামলার পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামাসকে উদ্দেশ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। নিখুঁত বিমান হামলায় হামাসের দুই সিনিয়র নেতা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তারা। নিহত এই দুজনের মধ্যে পশ্চিম তীরে হামাসের চিফ অব স্টাফ ইয়াসিন রাবিয়াও রয়েছেন। মাত্র দুদিন আগেই আইসিজে রাফায় হামলা বন্ধে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এ ভয়াবহ হামলা চালাল ইসরাইল। এতে তাঁবু থাকা অনেকেই জীবন্ত পুড়ে মারা গেছেন। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮১ হাজার ২৬ জন আহত হয়েছেন।
ইসরাইলের বর্বরতা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে আরও অনেক দেশকে রাজি করাতে প্রচেষ্টা চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকাম ফিদান বলেছেন, স্বীকৃতি না দিলে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন চালানোর আরও সময় পাবে। রোববার ব্রাসেলসে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে করণীয় বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন প্রথম বৈঠকে ফিলিস্তিনকে ত্রাণ সরবরাহকারী দেশ এবং সংস্থাগুলো একত্রিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বৈঠকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপের কথা বলা হয়।
আইসিসিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসিতে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা আইসিসিতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হত্যা ও আহত করার দায়ে সোমবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। আরএসএফ জানিয়েছে যে, তাদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে, কিছু সাংবাদিককে স্বেচ্ছায় হত্যা করা হয়েছে এবং বাকিরা বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইডিএফের (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) নির্বিচার হামলার ভুক্তভোগী।
অভিযোগে আরএসএফ ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০ মে’র মধ্যে নিহত আট ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের কথা উল্লেখ করে। পাশাপাশি আহত হয়ে পরবর্তী নিহত হয়েছেন- এমন একজনের কথাও বলেছে সংস্থাটি। আরএসএফের অ্যাডভোকেসি ও অ্যাসিস্ট্যান্স পরিচালক অ্যান্টন বার্নার্ড বলেছেন, যারা সাংবাদিকদের হত্যা করে, তারা জনগণের তথ্যের অধিকারের বিরুদ্ধে হামলা করছে। এই অধিকার রক্ষা করা সংঘাতের সময় অত্যন্ত জরুরি।