উচ্চ দ্রব্যমূল্যে জনজীবন বিপর্যস্ত, তার মধ্যে সাংঘর্ষিক রাজনীতি হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’
বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স নেটওয়ার্ক (বিপিএসএন) আজ এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে
বর্তমানে যেখানে উচ্চ দ্রব্যমূল্য জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলছে, এ অবস্থায় সাংঘর্ষিক রাজনীতি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হবে বলে সতর্ক করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও গবেষকদের সংগঠন বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স নেটওয়ার্ক (বিপিএসএন)। বাস্তব পরিস্থিতির তাগিদ মেনে নিয়ে সঠিক রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ ও যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য নির্বাচন-ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সংগঠন বিপিএসএনের কেন্দ্রীয় কমিটির ২১ জন আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন বিপিএসএনের সভাপতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী, মু. আনসার উদ্দিন, আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, নাসিম আখতার হোসাইন, ভূঁইয়া মনোয়ার কবীর, জালাল ফিরোজ, সাব্বীর আহমেদ, গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী, মুহাম্মদ সোহরাব হোসেন, হাসান জাকিরুল ইসলাম, জায়েদা শারমীন, আসমা বিনতে ইকবাল, ফেরদৌস জামান, মু. শরিফুল ইসলাম, রফিক শাহরিয়ার, মামুন আল মোস্তফা, নিবেদিতা রায়, নাজিয়া আরিফা, শামসুন্নাহার ও শরীফ আহমেদ চৌধুরী।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের দ্বিমেরুকৃত রাজনৈতিক বিভাজন সাংঘর্ষিক রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা কিছুতেই কাম্য নয়।
অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নিবন্ধনকৃত সব দলের অংশগ্রহণে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং ব্যালটের মাধ্যমে দেওয়া জনগণের রায় বাধাহীনভাবে প্রকাশিত হোক—এটি দেশবাসীর একান্ত কাম্য বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তন বা সরকার গঠনের গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো পথ নেই উল্লেখ করে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেছেন, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা যেকোনো গণতান্ত্রিক সংবিধানের মূল স্তম্ভ বা কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অসাংবিধানিক। সংবিধান কাগজের কোনো পিণ্ড নয়, যা কথায় কথায় কাটাছেঁড়া করা যায়। সংবিধানের (অনুচ্ছেদ-৭) ঘোষণা: সকল ক্ষমতার মালিক জনগণই হবে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। রাজনীতিতে বিদেশমুখিনতা দেশের জন্য কল্যাণকর হয় না। উপরন্তু বর্তমানে যেখানে উচ্চ দ্রব্যমূল্য জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলছে, এ অবস্থায় সাংঘর্ষিক রাজনীতি হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংবিধান একটি জাতির সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। একে সমুন্নত রাখা একটি জাতির পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যদিকে একটি সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বিঘ্ন, প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এরূপ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান জাতীয় দায়িত্ব। তাঁরা মনে করেন, সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক ও জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান দুঃসাধ্য নয়। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে সহযোগিতামূলক পরিবেশ ভোটারদের নির্ভীকভাবে ভোটদানে উৎসাহিত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তবতা মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমন আন্দোলনরত দলগুলোর কর্তব্য। অনুরূপভাবে নির্বাচনকালীন দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান যে ‘সম্ভব’, তা প্রমাণ করা সরকার ও সরকারি দলের জন্য অপরিহার্য। এর কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটলে তা শুধু জনগণেরই নয়, তাদের জন্যও সমূহ বিপদ ডেকে আনবে।