এরশাদের মতে ‘নির্বাচন’ ভারতের নির্দেশনা হাটেহাড়ি ভাঙবেন জিএম কাদের? জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভা আজ
অবশেষে মুখ খুলবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। কোন প্রেক্ষাপটে ‘২৬ আসন সমঝোতা’ তিনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন সে রহস্য দলের নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। গত সাপ্তাহে ইউটিউবে প্রচারিত ‘ডয়সে ভেলেতে ‘খালেদ মহিউদ্দিন জানতে চায়’ নামক অনুষ্ঠানে তিনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ‘কারণ’ ব্যাখ্যা করে কিছু কথা বলেছেন। তার এ ব্যাখ্যায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগে দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে ভারতের সঙ্গে কি কথা হয়েছিল সাংবাদিকরা জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেছিলেন, ভারতের নীতি নির্ধারকদের অনুমতি ছাড়া আলোচনার বিষয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। এতে করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন রহস্যের সৃষ্টি হয়। দিল্লিতে ভারতের সঙ্গে কি কথা হয়েছিল এবং দিল্লি কি নির্দেশনা দিয়েছিল সে ব্যপারে জিএম কাদের কথা বলবেন বলে জানা গেছে। যদিও জিএম কাদের ডয়সে ভেলের জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির এরশাদ দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনীতি করেছে; তিনি (জিএম কাদের) সে পথ অনুসরণ করছেন।
যদিও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘২৬ আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনে ‘সংসদীয় আসনে এমপির ভাগ’ না পাওয়ায় রওশন এরশাদে নেতৃত্বে দল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে; কিছু সুবিধাবাদী নেতার সমঝোতার এমপি হতে না পেরে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের পর রওশনের নেতৃত্বে জাপার প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়া এবং রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা হওয়া বিষয়টি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে মরহুম) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশবাসীর সামনে খোলাসা করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদ জানিয়েছিলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে তাকে (এরশাদ) চাপ দিয়ে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করেছে। সুজাতা সিং জাপার চেয়ারম্যানকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে জাপাকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। দিল্লি শেখ হাসিনাকে আবারও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়। ২০১৪ সালে এরশাদের এই বক্তব্য দেশে বিদেশী গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। কার চাপে পড়ে জিএম কাদের এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন সে ব্যাপারে আজ শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে (রমনা) অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের জানাবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জাতীয় পার্টিতে কী হয়েছিল, ‘ভিক্ষার ২৬ আসন’ নিয়ে নির্বাচনে যাব না ঘোষণা দেয়ার দুই ঘন্টার মাথায় লেজ গুটিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ওই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নানামুখী সমালোচনামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সবিস্তারে ব্যাখ্যা করবেন বিরোধীদলীয় এই নেতা। এ লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার জিএম কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেও বর্ধিত সভা করেছিলাম। এখন আবার করছি। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় অনেকগুলো বিষয় আলোচনা করেছিলেন। সেসব বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দল নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে কথা বলবো।’ ‘কী হয়েছিল, সামনে কী হবে, আমাদের কী করণীয়’ এসব নিয়ে আলোচনা হবে বর্ধিত সভায়।
বিগত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্র্টির মনোনয়নবঞ্চিতদের দাবি ছিল, সরকারের সঙ্গে ‘সম্পর্ক করেই’ বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন জিএম কাদের। ২৬ আসন নিয়েও সমঝোতা করেছিলেন জাপা চেয়ারম্যান। স্ত্রী শরিফা কাদেরকে ঢাকার একটি আসনে সমঝোতার প্রার্থী করতে ঢাকার কাজী ফিরোজ রশিদ, আবু হোসেন বাবলার দুটি আসন ছেড়ে দিয়েছেন জিএম কাদের।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রওশন এরশাদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে উদ্দেশ করে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘এমন একজন আছেন, যার কাছে দলের চেয়ে বউ বড়’। এই বক্তব্যের পরই দল থেকে বহিষ্কার হন আবু হোসেন বাবলা।
সর্বশেষ গত ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠন করা হয়। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমবারের ভাঙনের মুখে পড়ে। সাবেকর প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাপায় এ নিয়ে অন্তত ৮ বার বিভক্তি হয়েছে।
গণমাধ্যমকে জিএম কাদের বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে দল নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচনের সময় অনেক কিছু হয়েছে। সেগুলো আমরা ইভালুয়েশন করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।’
জিএম কাদের মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করছেন, তা ওয়ান পার্টির চর্চা। এভাবে চলতে থাকলে দেশে কোনও রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকবে না। এতে করে দেশে চরমপন্থার উত্থান হবে। আমি সংসদেও বলেছি, এখন যেভাবে ওয়ান পার্টি রুল চলছে, তাতে জাতীয় পার্টি, বিএনপি কেউ থাকবে না। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিও থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতি না থাকলে কোনও দলই টিকবে না। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্রও থাকবে না। অস্বাভাবিক রাজনীতির উত্থান হবে। জিএম কাদের ডয়সে ভেলের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দেশের স্বাধীনতা বিরোধী সব চেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটি গত ১৫ বছর যা করছে সবগুলো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উল্লেখ্য, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানিয়েছেন, শনিবার অনুষ্ঠেয় বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন জিএম কাদের এমপি। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপির পরিচালনায় কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।