Bangladesh

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের অনির্দিষ্টকালের ছুটি নিয়ে নানা প্রশ্ন

অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে গেছেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। গত ২২ নভেম্বর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান করছেন। তার এই রহস্যময় ছুটি সর্বমহলে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের পোশাক শিল্পমালিকদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এমন এক সময় ছুটিতে গেলেন যখন নানান ইস্যুতে দু’দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চরম অবস্থায় রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুতে র‌্যাবর কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। তার উপর বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র এবং নজিরবিহীন ভিসা নীতি কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া অত্যাসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে শর্তহীন সংলাপের আহ্বানসহ নানা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পক টালমাটাল অবস্থায় পৌঁছেছে। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের এমন ছুটি ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে দেশের চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি ঘোষণায় দেশের ব্যবসায়ীরা খুবই চিন্তিত। কেননা দেশে বর্তমানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিরা আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলন দমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে সংঘাত সংঘর্ষ হচ্ছে। দুইজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক। এ ছাড়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি যদি এদেশে প্রয়োগ করা হয় তাহলে দেশের পোশাক শিল্পের উপর চরম আঘাত নেমে আসবে এমনটাই মনে করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। তাই এ বিষয়ে দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতার গ্রহণের জন্য ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে সে দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের এই অনির্দিষ্টকালের ছুটি ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শের পোশাক খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বিধিনিষেধ ও ভিসা নীতির পর শ্রম অধিকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দেওয়া বক্তব্যটি এখন বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা প্রবাহের পর ঘোষিত এ স্মারক এখন উদ্যোক্তাদের নতুন করে ভীত করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) সই করেছেন। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নীতি নিয়ে অনেকের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বাংলাদেশের জন্য এ পদক্ষেপ নেয়নি। তারপরও পুরো বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা এবং সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষেই রাষ্ট্রদূত ছুটিতে রয়েছেন। কিন্তু তার বর্তমান অবস্থান কোথায়? সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। এ নিয়ে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াশিংটনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূত প্রায় এক মাসের ছুটিতে গেছেন। তিনি বর্তমানে তৃতীয় একটি মহাদেশে অবস্থান করছেন। যেখানে তার সন্তান এবং পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। সেখান থেকে তার ঢাকায় ফেরার কথা। তবে তিনি আদৌ দেশে ফিরছেন কিনা? ফিরলে কবে পৌঁছাবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়্িন।

সূত্রমতে, রাষ্ট্রদূত ছুটিতে যাওয়ার দিন অর্থাৎ ২২ নভেম্বর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস নোট ভারবাল পাঠিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি অবহিত করেছে। দূতাবাসের নোটে জানানো হয়, ২২ নভেম্বর মধ্যাহ্ন থেকে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকবেন। রাষ্ট্রদূতের অনুপস্থিতিতে দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মাহাদী হাসান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রদূতের ছুটি কবে শেষ হবে অর্থাৎ তিনি পুনরায় কবে কর্মস্থলে ফিরবেন? সেই দিনক্ষণ উল্লেখ না করে নোটে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের ফেরার বিষয়টি পরবর্তীতে (স্টেট ডিপার্টমেন্টকে) জানানো হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ডিসেম্বরে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক মাসের মধ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল ইসলামকে ফিরিয়ে আনে সরকার। মেয়াদপূর্তির আগে শহীদুল ইসলামের চাকরির চুক্তি বাতিল করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বছরের জুলাইতে নয়াদিল্লিতে থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করা পেশাদার ওই কূটনীতিক বর্তমানে সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করছেন। নয়াদিল্লিতে থাকা অবস্থায় তার চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়। পেশাগত জীবনে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার, জেদ্দা, অটোয়া, বন ও বার্লিনের বাংলাদেশ মিশন এবং হেডকোয়ার্টারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor