ওষুধে ভেজাল মেশালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার নির্দেশ
যুক্তরাজ্যের আদলে বাংলাদেশের জনগণের চিকিত্সাসেবা অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি একটি স্বাধীন ‘জাতীয় ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) ধারা মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ‘এইচআরপিবি ও অন্য বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য’ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা দেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের করের টাকায় সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তিরাসহ সামারিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিদেশে হরহামেশায় সরকারি অর্থে উন্নত চিকিত্সা গ্রহণ করছেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীদেরও আমরা দেখি হরহামেশাই বিদেশে চিকিত্সার জন্য গমন করতে। কিন্তু সাধারণ জনগণের বিদেশে উন্নত ওষুধে ভেজাল মেশালে চিকিত্সা গ্রহণের ন্যূনতম কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ যে জনগণের টাকায় উপরোল্লিখিত ব্যক্তিরা বিদেশে উন্নত চিকিত্সার জন্য গমন করেন সেই জনগণের কিন্তু বিদেশে উন্নত চিকিত্সা করার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের সাধারণ জনগণ, যারা সংবিধান মোতাবেক এই দেশটির মালিক, তারা কিন্তু বিদেশে উন্নত চিকিত্সার জন্য যেতে চান না। তারা চান দেশ-বিদেশের মতো উন্নত চিকিত্সা সুবিধা থাকুক সবার জন্য।
আদালত বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিত্সা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। তেমনি বিনামূল্যে ভেজালমুক্ত তথা, নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়াও প্রতিটি নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। কারণ দেশের বর্তমান বাস্তব অবস্থা এই যে উন্নত ও সুচিকিত্সা কেবল ধনী এবং উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমিত। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তসহ দেশের আপামর জনগণের বলতে গেলে উন্নত চিকিত্সা ও সুচিকিত্সা থেকে বঞ্চিত। তারা কেবল নামমাত্র সামান্য চিকিত্সা পায়।
রায়ের উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা
বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিত্সা সুবিধা পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার তার বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করতে হবে। ১৯৯১ সালে ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২৮ জন মোট ১০৪ জন শিশুর মৃত্যু ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কঠিন দায়। এই ১০৪ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ঐ ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি, ওষুধ কোম্পানি থেকে আদায় করতে পারবে। ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত জাতীয় ওষুধ নীতি-২০১৬ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ১০৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ২০১০ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঐ রিটের ওপর জারিকৃত রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বছরে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।