Bangladesh

কেনাকাটায় হরিলুট, বিল তুলে নেয় অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান

হাসপাতালের বেডের জন্য কাভারসহ প্রতি পিস ফোম কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ১৪০ টাকা। অথচ সাত বছর আগে সেই ফোম কেনা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ টাকা দরে! একইভাবে প্রিন্টারের একটি টোনার কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ টাকায়, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে ৯৫০ টাকায়। প্রতি পিস পর্দা কিনতে এখন খরচ পড়ছে ২৫২ টাকা, যা সাত বছর আগে কেনা হয়েছে ৮২০ টাকা দরে! এভাবে বাজারদরের দুই-তিন গুণ দরে ১৯ ধরনের সামগ্রী কেনাকাটা হয়েছে চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের জন্য। এভাবে লুটপাট হয়েছে কোটি কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় উঠে এসেছে এই চিত্র।হাসপাতালের বর্তমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষ বলছে, কেনাকাটায় অনিয়ম করে গত ১০ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।

জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালটি চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি প্রতিষ্ঠান। জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে এ হাসপাতালের সবকিছু দেখাশোনা করেন। সোসাইটির সেক্রেটারির অনুমোদনে হাসপাতালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্র কেনাকাটা হয়। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বাজারদরের বেশি দিয়ে কেনা হয়েছে কোটি কোটি টাকার জিনিসপত্র। যেমন একটি বালিশ এখন ২৫০ টাকায় কেনা সম্ভব হলেও ২০১৬ সালে তা কেনা হয়েছে ৬৫০ টাকা দিয়ে! শুধু তাই নয়; অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বিল দাখিল করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এভাবে গত ১০ বছরে টেন্ডার ছাড়াই অথবা পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটায় অন্তত ২০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যে বালিশের দাম এখন ২৫০ টাকা, সাত বছর আগে তা আরও কম দামে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে উল্টো! এভাবে আসলে অর্থ লুটপাট হয়েছে।’

অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের জন্য ইলেকট্রিক ও স্যানিটারি সামগ্রী ক্রয় এবং মেরামতে খরচ হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকা। অথচ হাসপাতালের বিভিন্ন কেবিন, ওয়ার্ড, ওটি রুম, দরজা-জানালা, দেয়ালের ভঙ্গুর অবস্থা। ২০১৬ সালে ‘ফুলকলি’ থেকে আড়াই হাজার প্যাকেট বিরিয়ানি কেনায় খরচ হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। অথচ বাস্তবতা হলো, মিষ্টির ব্র্যান্ড ‘ফুলকলি’ কখনও বিরিয়ানি বিক্রি করেনি, এখনও করে না! ওই বছর ইফতারে ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়, যা আগে কখনও হয়নি। এভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপ্যায়ন খরচ ২৭ লাখ টাকা। করোনায় লকডাউনের মধ্যেও আপ্যায়নে ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ টাকা, যদিও ওই সময় কোনো আপ্যায়ন ছিল না বলে সমকালকে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘মিটিং খরচ’ও অস্বাভাবিক। ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর মিটিংয়ে এক দিনে খরচ হয় দেড় লাখ টাকা, যার কোনো ভাউচার নেই। এভাবে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মিটিং করতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা।

কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় হয়েছে ওইসব কেনাকাটা? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের মেট্রোন মর্জিনা আক্তার পণ্যের চাহিদাপত্র উপস্থাপন করতেন স্টোরকিপার আবুল কাশেমের কাছে। সেই চাহিদাপত্র হাসপাতালের ইনচার্জ (উপপরিচালক) মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে গেলে তিনি জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারির অনুমোদন নিয়ে কেনাকাটার ব্যবস্থা করেন। সবকিছুর হিসাব রাখেন চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট এ এস এম গনিউল নুর।

চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে গত ৩ জানুয়ারি। ওই দিন থেকে জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল তদারকির দায়িত্বেও পরিবর্তন আসে। এই দায়িত্ব পান সোসাইটির নতুন চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। তার আগে ২০০৯ সাল থেকে হাসপাতালটির সবকিছু তদারকি করেন চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজম। দায়িত্ব গ্রহণের পর জেমিসন হাসপাতালের কেনাকাটায় অনিয়ম তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নতুন কমিটি। এ লক্ষ্যে একটি ‘অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফদৌল্লা সুজনকে। এ ছাড়া কমিটিতে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা (পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক)। ওই কমিটি গত ৯ আগস্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের কাছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়।

এদিকে সুনির্দিষ্ট কিছু অনিয়ম বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় স্টোরকিপার আবুল কাশেমের কাছে। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে গত ২৮ জুলাই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ১৫ জানুয়ারি মেট্রোন মর্জিনা আক্তারকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় নার্সিং ইনস্টিটিউটে। আর অনিয়মের অভিযোগ কাঁধে নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন হাসপাতালের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফদৌল্লা অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করার কথা নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সোসাইটির নতুন চেয়ার‌ম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে হাসপাতালের প্রতিটি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় ওই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে যে জিনিস ৮ হাজার ২০০ টাকায় কেনা হয়েছে, এখন তা ৩ হাজার ১৪০ টাকায় কেনা হচ্ছে। এভাবে গত ১০ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।’ সোসাইটির নতুন সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান বলেন, ‘হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে শুধু কাগজ-কলমে। তাই বাস্তবে কিছু চোখে পড়ছে না।’ তিনি জানান, নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি ঢাকায় রেড ক্রিসেন্টের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর পর কেন্দ্র থেকেও একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।

ডা. শেখ শফিউল আজম এখন চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান। কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকালে হাসপাতালটি ৩৫ থেকে ৯৫ শয্যা করেছি। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতিতে আমি জড়িত নই।’ নতুন যারাই সোসাইটির দায়িত্ব নেয়, তারাই এমন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তদন্তের মুখে চাকরি চেড়ে দেওয়া স্টোরকিপার আবুল কাশেম বলেন, ‘নতুন কমিটি আমাকে স্টোরকিপার পদ থেকে বদলি করায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেনাকাটা করে আমাকে মালপত্র বুঝিয়ে দিত। আমি কোনো অনিয়মে জড়িত নই।’

কেনাকাটায় অস্তিত্বহীন ‘ইউনিক বেডিং’

গত পাঁচ বছরে জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের জন্য সোয়া কোটি টাকার বেডশিট, পর্দা, ফোম কেনা হয় ‘ইউনিক বেডিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। বিল পরিশোধে তাদের ভাউচার ব্যবহার হলেও বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব মেলেনি। তা ছাড়া কোটেশন ও ভাউচারে দুই রকম ঠিকানা দেয় ইউনিক বেডিং। কোটেশনে ঠিকানা হলো ‘৫৪, অলি খাঁ মসজিদের পিছনের গলি’; আর ভাউচারের ঠিকানা ‘পাঁচলাইশ থানার মোড়ে, সোনালী ব্যাংকের বিপরীতে’। গত বৃহস্পতিবার দুই ঠিকানায় গিয়ে ইউনিক বেডিংয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

গাড়ির জ্বালানি খরচ আট গুণ

নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, এক যুগের ব্যবধানে তিনটি গাড়ির জ্বালানি খরচ হয়েছে আট গুণ। অ্যাম্বুলেন্সে লগবুক থাকলেও চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের গাড়িতে তা নেই। আর ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনটি গাড়ির জ্বালানি খরচ প্রায় কোটি টাকা। ২০১০ সালে হাসপাতালের তিনটি গাড়ির জ্বালানি খরচ ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গাড়িচালক মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, গত পাঁচ বছরে তিনি বেশির ভাগ সময় সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গাড়ি চালিয়েছেন। গাড়িটি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিবারের লোকজনই ব্যবহার করতেন। গাড়ির মতো লগবুক ছাড়াই চলেছে হাসপাতালের জেনারেটর। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেনারেটরের তেল কেনায় খরচ হয়েছে ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। লগবুক না থাকায় জেনারেটরের তেল কেনায় অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায়। এ বিষয়ে সাবেক ইনচার্জ (উপপরিচালক) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুটি গাড়িতে লগবুক দিয়েছিলাম। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি তা মেইনন্টেন করেননি। তাই খরচ বেশি হয়েছে।’

পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল সামগ্রী ক্রয়

জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের জন্য ‘চিটাগাং সার্জিক্যাল ট্রেডার্স’ থেকে সার্জিক্যাল কটন, থান গজ, গ্লাভস কেনা হয়েছে বছরের পর বছর। ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই খাতে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৫২ লাখ টাকার বেশি এবং এ কেনাকাটা হয়েছে টেন্ডার ছাড়াই। বিষয়টি বিশেষভাবে উঠে এসেছে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায়।

ওটি লাইট কেনা নিয়ে প্রশ্ন

হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কেনা হয় একটি ওটি লাইট। এ ধরনের লাইট সাধারণত চার থেকে পাঁচ বছর চলে। কিন্তু পরের মাসে আবার ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় আরেকটি ওটি লাইট কেনা হয়! ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এভাবে দুই কোটি টাকা ব্যয় হয় জরুরি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে। এই কেনাকাটা হয় নগরীর চকবাজারের মেসার্স ইউএসকে থেকে।

মেরামত মানেই মিন্টু মিস্ত্রি

হাসপাতালের মেরামত কাজে মিন্টু মিস্ত্রির নামে বড় বড় বিল পরিশোধ হয়েছে। ২০১৬ সালে ৩০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার কাজ হয়েছে মিন্টুর নামে। বিলের কাগজে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী গত শুক্রবার নগরীর জুবিলী রোডে সওদাগর এজেন্সিতে গিয়ে মিন্টু মিস্ত্রি নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কল করেও হদিস মেলেনি। অথচ তাঁর মাধ্যমে নার্সিং ইনস্টিটিউট হোস্টেলের রুম ও বারান্দা রং করায় ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং দরজার চৌকাঠ মেরামতে চার দফায় এক লাখ ১৮ হাজার টাকার বিল পরিশোধ হয়েছে। ১২টি এসি মেরামতে ব্যয় হয়েছে সাত লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা। তিনটি এসি পরে আবার মেরামত করতে হয় ৮২ হাজার ৩০০ টাকা খরচে। এভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যয় হয় ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এই ব্যয় ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

লকডাউনে আপ্যায়ন ব্যয় ১৯ লাখ টাকা!

করোনার কারণে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারাদেশে দফায় দাফায় লকডাউন চলে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ওই সময় ঘর থেকে বের হয়নি। অথচ ওই তিন বছরে জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আপ্যায়ন ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এই ব্যয় করেন মূলত সোসাইটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. শফিউল আজম ও সেক্রেটারি নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার। তা ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আপ্যায়নে ব্যয় হয় ৩১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ অতিথি আপ্যায়নে প্রতিদিন খরচ হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা! লকডাউনের সময় ১৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা আপ্যায়ন ব্যয়ের বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের সাবেক ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কেনাকাটায় শতভাগ স্বচ্ছতা ছিল– তা বলব না। তবে আমি কোনো অনিয়মে জড়িত নই।’

চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর চেয়ারম্যান থাকলেও হাসপাতাল চালিয়েছেন ডা. শেখ শফিউল আজম। পাঁচ বছরে মাত্র দুইবার সেখানে গিয়েছি। আয়-ব্যয় সব তিনি দেখতেন। পরে শুনলাম, নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘সেক্রেটারি বাহারকে অনিয়মের বিষয় বললে দেখবেন বলে জানিয়ে পরে আবার শফিউল আজমের সঙ্গে মিলে যেতেন। তারা আমার এবং পার্টির সম্মান রাখলেন না।’ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘শফিউল আমার কাছে এসে অনুনয় করে হাসপাতাল দেখার দায়িত্ব চাইলে আমি তাঁকে দায়িত্বটা দিয়েছিলাম। রাজনৈতিক সহকর্মী হওয়ায় বিশ্বাস করে তাঁকে ওই দায়িত্ব দিই।’

চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির গত কমিটির সেক্রেটারি নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সেবাদান প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর নাগরিক হিসেবে আমাদের কষ্ট দেয়। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে দুদকের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor