Hot

‘কোনো খাবার নেই, সন্তানদের মুখে কী তুলে দেব’: ত্রাণপ্রত্যাশীদের ওপর হামলা

‘কোনো খাবার নেই। সন্তানদের মুখে কী তুলে দেব? বাচ্চাদের এক বোতল দুধও জোগাড় করতে পারছি না। সেই ভোর থেকে ছুটে চলেছি, যদি কোনো উড়োজাহাজ থেকে খাবার ফেলা হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন উত্তর গাজার বাসিন্দা মোখলেস আল-মাসরি (২৭)। খাবারের তীব্র সংকটে মোখলেসের মতোই দিশাহারা উপত্যকাটির বাসিন্দারা। ত্রাণ নিতে গেলেও তাঁদের তাড়া করে ফিরছে মৃত্যু। কারণ, ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া মানুষের ওপরও প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

যেমন গতকাল বৃহস্পতিবার। উত্তর গাজার একটি সড়কে ত্রাণ নিতে ভিড় করেছিলেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা। তাঁদের ওপরও নির্বিচার গুলি চালান ইসরায়েলি সেনারা। এতে নিহত হন সেখানে থাকা অন্তত ২০ জন। আহত হন আরও ১৫৫ জন। আগের দিন বুধবারও উপত্যকার দক্ষিণে রাফা এলাকায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছিল। তাতে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ছয়জন।

বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনার পর হতাহত ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরি সেবা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ গুরাবের ভাষ্যমতে, মানুষজন যখন একটি খাবারের ট্রাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, তখন তাঁদের ওপর ‘সরাসরি গুলি চালায় দখলদার বাহিনী’। আর গাজা কর্তৃপক্ষের দাবি—ট্যাংক ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ে ওই হামলা চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার চালানো এ হামলার দায় অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচে আদ্রায়ে এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে হামলার যে দাবি করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। এ ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে দেখছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস। এতে অন্তত ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় প্রায় ২৪০ জনকে। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৩১ হাজার ৪৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৪৩৯ জন। এর মধ্যে আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৪৯ জন।

ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষ ‘হত্যা ঠেকানো সম্ভব’

গাজায় সংঘাত শুরুর পর বেশ কয়েকবার ত্রাণপ্রত্যাশী মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ত্রাণের বহরের ওপরও হামলা হয়েছে। আল-জাজিরার হিসাব বলছে, বুধ ও বৃহস্পতিবারের আগে ৭ নভেম্বর থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ছয়বার এ ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গাজা নগরীতে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর হামলায় অন্তত ১১২ জন নিহত হন।

এই ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টা শাইনা লো। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, এটা বিভিন্ন ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থা ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগের ব্যর্থতার কারণে হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যেন হামলা না হয়, সে জন্য তাদের অবস্থান সম্পর্কে ইসরায়েলকে আগে থেকে জানাতে হবে।

গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে ইসরায়েল। ফলে সেখানে খাবার ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের ভাষ্যমতে, গাজা দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণ ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, জর্ডান, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম।

সাগরপথেও গাজায় ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চলছে। উপত্যকাটির উপকূল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে স্পেনের ত্রাণ সরবরাহকারী জাহাজ ‘ওপেন আর্মস’। তাতে মার্কিন বেসরকারি সংগঠন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সরবরাহ করা প্রায় ২০০ টন খাবার রয়েছে। এই ত্রাণ জাহাজ থেকে খালাসের জন্য গাজা উপকূলে একটি জেটি নির্মাণ করেছে সংগঠনটি।

যদিও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফাম জানিয়েছে, আকাশ ও জলপথে পাঠানো ত্রাণ স্থলপথে পাঠানো ত্রাণের বিকল্প হতে পারে না। কারণ, আকাশ ও জলপথে যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ সম্ভব নয়।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাসের

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে সম্প্রতি মিসরের রাজধানী কায়রোয় আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের কাছে জমা দেওয়া ওই প্রস্তাবের শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চলাকালে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দী ৭০০ থেকে ১ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে। এই বন্দীদের মধ্যে ১০০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছেন।

হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের শর্তে প্রাথমিকভাবে রাজি হয়নি ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই প্রস্তাবে ‘অবাস্তব দাবি’ করেছে হামাস। আজ প্রস্তাবের বিষয়টি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদে তোলার কথা রয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আগে থেকেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে মিসর ও কাতার। হামাসের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি দোহা। অপর দিকে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি আজ বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এর লক্ষ্য, একটি চুক্তিতে পৌঁছানো এবং উপত্যকাটিতে বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ করা।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor