গাজার টানেলে পানি ঢালতে শুরু করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নির্মূলে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে ইসরায়েল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সমুদ্র থেকে পানি টেনে নিয়ে গাজার টানেলগুলোতে ঢোকাতে শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করেছে। প্রতিবেদনটি ইহুদিবাদী সংবাদমাদ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ও প্রকাশ করেছে। দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যখন লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল, তখন নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করলো ইহুদিবাদী দেশটি।
গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে নির্বিচারে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর সঙ্গে গত ২৮ অক্টোবর থেকে উপত্যকায় স্থল হামলাও শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। লক্ষ্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল ও জিম্মিদের উদ্ধার করা। টানা ৪৮ দিন যুদ্ধ করেও সেই লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল। অবশেষে ৪৯তম দিন থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। টানা ৭ দিন যুদ্ধবিরতিতে ৮০ ইসরায়েলিসহ প্রায় ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ২৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।
সাত দিন পর হামাস জিম্মি ছাড়তে নতুন চুক্তির শর্ত দেয়। এতে বেঁকে বসে ইসরায়েল। তারা চায়, আগের শর্তেই বাকি জিম্মিদেরও মুক্তি দিক হামাস। অর্থাৎ প্রতি ইসরায়েলির বিনিময়ে তিনজন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে। কিন্তু হামাস তাতে রাজি নয়। পরে হামাস ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েল পুরোপুরি হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত আর কোনও জিম্মি মুক্তি দেওয়া হবে না।
এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি শেষে ১ ডিসেম্বর থেকে আবারও গাজায় হামলা শুরু করে ইহুদিবাদী সেনারা। এবার উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজাতেও নির্বিচারে বোমা হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গাজার স্বাস্থ্য দফতর তথ্যানুযায়ী, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৮ হাজার ৪১২ জন ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী, শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক তথা কিশোর।
এদিকে, হামাস নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় ৮০০ টানেল খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে প্রায় ৫০০টি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি ইসরায়েলি বাহিনী। তবুও হামাস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি ইহুদিবাদী ইসরায়েল।
ফলে হামাস নির্মূলে নতুন পরিকল্পনা নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। সেটি হচ্ছে, ভূমধ্যসাগর থেকে পাম্প দিয়ে পানি টেনে সব টানেল ভর্তি করা, যাতে ভেতরে থাকা হামাস যোদ্ধারা বের হয়ে আসে এবং তাদের সকল যুদ্ধ সরঞ্জাম সহজেই অকেজো ও ধ্বংস করা যায়। এবার সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে ইসরায়েল।
সে লক্ষ্যে গত মাসে গাজার আল শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের কাছে পাঁচটি পাম্প বসিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব পাম্প দিয়ে হাজার হাজার কিউবিক মিটার পানি টেনে অল্প সময়ের মধ্যেই হামাসের সব টানেল ভাসিয়ে দেবে ইসরায়েলি বাহিনী।
প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রধান হার্জি হালেভি বলেছেন, টানেলে পানি ঢালার ধারণা একটি অন্যতম ভাল পরিকল্পনা।
তবে টানেলে পানি ঢাললে তা পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে আশঙ্কা করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই পদক্ষেপ ওই উপত্যকার ভূগর্ভস্থ পানির উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
তাদের মতে, এর ফলে গাজার বিভিন্ন ক্ষেত্রের পানি এবং মাটির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, সমুদ্রের পানি টানেলের মধ্যে থাকা বিপজ্জনক পদার্থগুলোর সঙ্গে মিশে যাবে। এতে ওই উপত্যকার পানি ও মাটির ব্যাপক ক্ষতি হবে। একই সঙ্গে সেখানকার ভবনগুগুলোর ভিত্তিরও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা নিয়ে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনে মিশ্র মতামত দেখা দিয়েছে। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ইসরায়েলি পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আবার অন্যরা বলেছেন- তারা টানেল ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দেওয়া উচিত। এতে কোনও মার্কিনির বিরোধিতা করা উচিত নয়।