Bangladesh

গুরুত্বপূর্ণ তিনের গুরুতর চ্যালেঞ্জ

বিরোধীদের আন্দোলন ও বিদেশিদের চাপ সামলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পর কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে নতুন সরকারের মন্ত্রীরা তা বলতে শুরু করেছেন। স্বাভাবিকভাবে রাজনীতি ও কূটনৈতিক চাপ তো সামলাতে হবেই, তার সঙ্গে অর্থনীতির ঝুঁকিগুলোও মোকাবিলা করতে হবে এ সরকারকে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যাত্রাপথে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ দুজন মন্ত্রীকে। অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন একজন প্রতিমন্ত্রীকে। রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে দলীয় নেতৃত্বের সম্মিলিত কৌশলের ওপর ভরসা রাখছে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন শেষ করে তিন দিনের মাথায় গত শুক্রবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ করে নতুন সরকারের পথচলাও শুরু করেছে দলটি। এ পথচলায় টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকার রাজনৈতিক নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। সরকার থেকে দলকে আলাদা করার কৌশল নিয়ে ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় রাজনৈতিক নেতাদের রাখার ব্যাপারে অনেকটাই সংবেদনশীল ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এবারের মন্ত্রিসভার ধরন দেখে বলা যায় তিনি সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

এবারের মন্ত্রিসভা চমৎকার হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতিকে গুরুত্ব দিয়েই মূলত রাজনৈতিক মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ঝুট-ঝামেলা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির। তাই নতুন মন্ত্রিসভায় রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকা নেতাদের টেনে নিয়েছেন তিনি। অন্যবারের চেয়ে এবারের মন্ত্রিসভা ‘গর্জিয়াস’ করার পাশাপাশি বেফাঁস মন্তব্য করা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও কম রাখা হয়েছে।

তারা বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে নজর দিয়ে কাজ শুরু করবে নতুন সরকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে জনজীবনে স্বস্তি দিতে চান ‘ক্যারিশম্যাটিক’ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তাই অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এনে যাত্রা শুরু করেছে টানা চতুর্থবারের এ মন্ত্রিসভা।

গত সরকারের দুজন মন্ত্রী এবার নতুন দপ্তর পেয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ পেয়েছেন এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বৈশ্বিক চাপ সামলানোর মতো গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে ড. হাছানকে। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি কয়েক মাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হাছান মাহমুদ বন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও মন্ত্রী ছিলেন। পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় ফিরেছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি এবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাবেন। ২০১৪ সালে গঠিত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করা এ পেশাদার কূটনীতিক বছর দুয়েক একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন। দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা গত কয়েক বছরে সবচেয়ে দুর্বল এবং আস্থাহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। গত পাঁচ বছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রী থাকার পরও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। আহসানুল ইসলামকে (টিটু) প্রথমবারেই নিতে হবে সেই চ্যালেঞ্জ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ হালকা হয়ে গেছে। এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা হবে। নির্বাচন ইস্যু করে হালকা হওয়া সম্পর্ক নির্বাচনকে পুঁজি করেই সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার দাবির পাশাপাশি নির্বাচনের বৈধতা নিতে চান প্রধানমন্ত্রী।

এ নেতারা আরও বলেন, একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমীহ করার বিকল্প নেই পশ্চিমা বিশ্বের। কারণ, দেশ-বিদেশে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে সরকার। ছয় মাসের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা দাবি করেন, সম্পর্কোন্নয়ন করতে বিদেশিরাই এখন আসবে। নতুন সরকার প্রথম ছয় মাস সম্পর্ক ঝালাই করতে কাজ করবে। এই ছয় মাস অন্য দেশগুলোর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগ বেশি দেওয়া হবে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।

গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে নতুন দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পূর্ব-পশ্চিম সবার সঙ্গে সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটাব।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের অবনতিশীল সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চমৎকার মন্ত্রিসভা হয়েছে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে নতুন সরকার।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি সুন্দর নির্বাচন দাবি করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সমর্থ হবেন।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা ও সিন্ডিকেটমুক্ত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন এ সরকার। তিনি বলেন, ‘বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সক্ষম হলে দেশের রাজনীতি ঠা-াই থাকবে। সরকারবিরোধী কোনো শক্তির হাতে রাজনীতি অস্থির করে তোলার ইস্যু আর থাকবে না।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, বাজার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। তাই এ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আপাতত দায়িত্ব পালন করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার এ মন্ত্রণালয়ে মনোযোগ দেবেন। মূলত বাজার ব্যবস্থা ও আমদানি-রপ্তানিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে চান সরকারপ্রধান। সিন্ডিকেটমুক্ত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে শিগগিরই বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এ মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীও শিগগিরই দেওয়া হবে বলে তারা জানান।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আরও বলেন, অর্থনীতিতে বিশ্বমন্দা চলছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। অর্থমন্ত্রী পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে দুর্বল অর্থনীতি সবল করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে এ মন্ত্রণালয়কে কাজ করার নির্দেশনা দেবেন সরকারপ্রধান। মন্ত্রী মাহমুদ আলীর ওপর ভরসা করে এ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button