Hot

ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে ফলের দাম

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন খান মিলন তার এসএসসি পরীক্ষার্থী সন্তানের জন্য গত ৮ মার্চ আঙুর কেনেন প্রতি কেজি ২২০ টাকা দরে। এক দিন পর সকালে আবারও আঙুর কিনতে গেলে বিক্রেতা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দাম চান। মিলন আঙুর না কিনে বাসায় ফেরেন। সেদিনই বিকেলে আবার আঙুর কিনতে গেলে বিক্রেতা দাম চেয়ে বসেন ৩০০ টাকা! শেষ পর্যন্ত আঙুর না কিনেই বাসায় ফেরেন মিলন। দুদিনের ব্যবধানে একটি ফলে দাম কীভাবে ৩৬ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে, সে হিসাব মেলাতে পারছেন না তিনি। রোজার আগে ফলের দামের এমন উল্লম্ফনে হিসাব নিয়ে খাবি খাচ্ছেন আরও অনেকে।

আজ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। অন্যান্য বছরের মতো এবারও আগে থেকেই বেড়েছে রোজায় চাহিদা বাড়া পণ্যের দাম। বিশেষ করে খেজুরের দাম ছুটেছে লাগামহীন। আগের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০ দিনের ব্যবধানে মেডজুল, জিহাদি, তিনেশিয়া, সুফ্রিসহ ছয় পদের খেজুর কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। ছুটছে আপেল-কমলার দামও। গত এক মাসের ব্যবধানে এসব আমদানি করা ফলের দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, অতিরিক্ত শুল্কায়ন, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণপত্র জটিলতার কারণে এ বছর খেজুরসহ আমদানি করা ফলের অতিরিক্ত দাম বেড়েছে।

সরেজমিনে গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ দিন আগে থেকে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মেডজুল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়, যা কয়েক দিন আগেও ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে  প্রতি কেজিতে জিহাদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা দরে। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে তিনেশিয়া ৫৫০ ও সুফ্রি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। এ ছাড়া সাধারণমানের এক কেজি জায়েদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০, আজওয়া ১ হাজার, মরিয়ম ১ হাজার ২৫০, দাবাস ৪৫০, বরই খেজুর ৪৫০ ও আদম খেজুর ৭৫০ টাকায়।

এদিকে বাদামতলী পাইকারি ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বছর পাইকারিতে মানভেদে কালমি খেজুর (পাঁচ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। মরিয়ম খেজুর (পাঁচ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪  হাজার টাকা। আজওয়া (পাঁচ কেজি) খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা। এ বছর মাবরুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

খেজুরের বাড়তি দাম নিয়ে কথা হয় হাতিরপুল বাজারের ফরিদপুর ভ্যারাইটিস স্টোরের ব্যবসায়ী আল-আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোজা শুরুর আগে থেকেই সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে। কিন্তু রোজা যত ঘনিয়ে এসেছে, বাজারে যেন খেজুরের দাম বাড়ার আরও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এবার সব থেকে বেশি মেডজুল, জিহাদি ও সুফ্রি খেজুরের দাম বেড়েছে।’

এদিকে খেজুরের মতো আমদানি করা ফলের বাজারেও দামের উত্তাপ দেখা গিয়েছে। রোজায় বহুল ব্যবহৃত আপেল-মালটা দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৯০ টাকা বেড়েছে। এদিকে বাজারে ফল কিনতে আসা অধিকাংশ ক্রেতা ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাগ্বিতন্ডায় জড়িয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০, লাল আঙুর ৩৬০ থেকে ৪০০, গালা আপেল ৩০০, গ্রিন আপেল ২৮০ থেকে ৩১০, নাশপাতি ২৬০ থেকে ২৮০ ও প্রতি কেজি আনার বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। 

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী তায়েফ বলেন, ‘সরবরাহ ভালো থাকলেও পাইকারি বাজারে প্রতি সপ্তাহে ফলের দাম বাড়ছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে। গত সপ্তাহে ২০০ টাকায় বিক্রি করা আঙুর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। শুধু আঙুর নয়, সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া মালটা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। প্রায় পচন ধরেছে এমন আনারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ আর ভালোমানের আনার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকায়।

ক্রেতারা বলছেন, রোজায় ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের জিম্মি করে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায়। কিন্তু সেটি দেখার কেউ নেই। বাদামতলী ফলের পাইকারি বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী নাঈমের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছর জুড়ে নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করেছেন। আমাদেরও বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে। এখন রমজানেও একই পরিস্থিতি।’

এদিকে দেশি ফলের সরবরাহ ঠিকঠাক থাকলেও বিদেশি ফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে। সব ধরনের ফলে গড়ে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক মাস আগে এক কেজি তরমুজ ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও রোজা শুরু আগেই প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি বরই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১৪০ টাকায়। কয়েক দিন আগে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০, মানভেদে প্রতি পিস আনারস ৪০ থেকে ৬০, প্রতি কেজি পেঁপে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হঠাৎ করে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পেঁপের বিষয় জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি ফলের মধ্যে রোজায় পেঁপের চাহিদা থাকে বেশি। তাছাড়া সিজন শেষ হওয়ায় বাজারে পেঁপের সরবরাহ কমেছে। সব মিলিয়ে এবারে পেঁপের বাজার বাড়তি।

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক করিম শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমদানি ব্যয়, ভ্যাট, করসহ নানা খরচের কারণে আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম এবার গতবারের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাস্টম ডিউটি ট্যাক্স ও রেগুলেটরি ডিউটি ট্যাক্স দাম বাড়ার প্রধান কারণ।’

ফল কিনে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘পাইকারি বাজারে আমদানির খরচের ওপর নির্ভর করে সব ধরনের ফল বিক্রি হয়। আমরা শুধু পাইকারি বাজারের বিষয় বলতে পারি। কিন্তু খুচরা বাজার আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button