Science & Tech

চলতি বছর বিক্রি হওয়া আইফোনের ১৪ শতাংশই ভারতে উৎপাদিত

ভারতকে আইফোন উৎপাদনের কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে অ্যাপল দেশটিতে বড় আকারে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। চীনের মতো সক্ষমতা অর্জন করতে ভারতের এখনো অনেক সময় প্রয়োজন হলেও দেশটিতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

ফক্সকনের কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে অ্যাপলের আইফোন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

ফক্সকনের কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে অ্যাপলের আইফোন।

তুলনামূলকভাবে শ্রমিকদের কম মজুরি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের তাদের মূল পণ্য আইফোন উৎপাদনের জন্য অনেকাংশে চীনের ওপর নির্ভরশীল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চীন-নির্ভরতা কমাতে ভারতের দিকে ঝুঁকছে অ্যাপল। 

ভারতকে আইফোন উৎপাদনের কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে অ্যাপল দেশটিতে বড় আকারে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। চীনের মতো সক্ষমতা অর্জন করতে ভারতের এখনো অনেক সময় প্রয়োজন হলেও দেশটিতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

অ্যাপলের ব্যবসায়িক তথ্য বিশ্লেষণকারী ও নিরপেক্ষ ব্লগার মিং-চি কো সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে যত আইফোন বিক্রি হয়েছে, তার ১৪ শতাংশই ভারতে উৎপাদন করা হয়েছে।

ভারতে আইফোন উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে

গত ১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন পাবলিশিং প্ল্যাটফর্ম মিডিয়ামে লেখা প্রতিবেদনে মিং-চি কো আরও জানান, ভারতে উৎপাদিত মোট আইফোনের প্রায় ৮০ শতাংশই উৎপাদন করেছে ফক্সকন। এই প্রতিষ্ঠানটিই সারা বিশ্বে আইফোনের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী।

মুম্বাইয়ের অ্যাপল স্টোর। ছবি: অ্যাপল ডট কম

মুম্বাইয়ের অ্যাপল স্টোর।

ফক্সকন বলেছে, আগামী বছরের মধ্যে তারা ভারতে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করবে।

মিং-চি কো ধারণা করছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে চীনের ঝেংঝুতে ফক্সকনের কারখানার আকার অন্তত ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। ফক্সকনের পাশাপাশি অন্যান্য উৎপাদকরাও চীন থেকে ভারতে তাদের কারখানাগুলো সরিয়ে নিচ্ছে।

বহু বছর ধরে অ্যাপল আইফোন উৎপাদনের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

তবে করোনা মহামারির সময় চীনের অনেক আইফোন কারখানা বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ রাখা হয়। যার ফলে আইফোন উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। অ্যাপলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ফক্সকনের কারখানায় দাঙ্গার ঘটনাও ঘটে এ সময়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিরোধ দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে এই বিরোধ কমার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইফোনের উৎপাদনব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অ্যাপলকে ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়েছিলেন। এসব কারণে অ্যাপল চীন থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার কথা গুরত্বের সঙ্গে ভাবতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য এখন ভারত।

ভারতের আইফোন কারখানায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি এ বছরই অ্যাপল প্রথমবারের মতো ভারতে অ্যাপল স্টোর খুলেছে। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাপল তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ব্রাজিল ও ভিয়েতনামেও বিভিন্ন কারখানায় বিনিয়োগ করেছে।

ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক। ছবি: এএফপি

ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, চীনের পর আইফোন উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় দেশটি ভারত।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ভারতে ৭০০ কোটি ডলার মূল্যমানের আইফোন উৎপাদন হচ্ছে। এই পরিমাণটি আগামী পাঁচ বছরে চার হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় অ্যাপল।

আগে শুধু পুরনো মডেলের কিছু আইফোন ভারতে উৎপাদিত হতো। এ বছরই প্রথমবারের মতো নতুন মডেলগুলোর উৎপাদন ভারতে শুরু হয়েছে।

মিং-চি কো বলেছেন, এটাই অ্যাপলের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি। ২০২৪ সালের শেষ দিকে অ্যাপল আইফোন ১৬ বা ১৭ (২০২৫ সালে বাজারে আসবে) মডেলের উৎপাদন ভারতে শুরু করতে পারে বলে মত দেন তিনি।

অ্যাপল চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে কতটা ভারতমুখী হতে যাচ্ছে, এই ভবিষ্যদ্বাণী এটাই প্রমাণ করে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button