চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওবায়দুুল কাদেরকে প্রশ্ন বিদেশি সাংবাদিকের: বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় অনুশোচনা রয়েছে
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/01/34-20240105232015.jpg)
চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক বিদেশী সাংবাদিক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দলীয় সংবাদ সম্মেলন এক জাপানী সাংবাদিক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এমন প্রশ্ন করেন, যে চীন ও রাশিয়া সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভূূমিকা রাখছে? এ সম্পর্ক রাখার সুবিধা কোথায়? দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দিন আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি না থাকায় অনুসূচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এক বিদেশি সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশ কেন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে? জাপানের সেই সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ ও জাপানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের (চীন ও রাশিয়া) সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভূূমিকা রাখছে? এ সম্পর্ক রাখার সুবিধা কোথায়? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূূল কথা হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়। আমাদের সবার সাথে বন্ধুত্ব আছে। বিশ্বের অনেক দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে। উন্নত দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আমাদের উন্নয়নের জন্য। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পর্ক আছে কিছুু দেশের সাথে, যেমন ভারত, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স। মেট্রোরেলের অর্থ জোগাচ্ছে জাপান। আমার পার্থক্য করা উচিত হবে না। বন্ধু বন্ধুই। সবাই আমাদের বন্ধু।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পাশাপাশি কিছু বিদেশি সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। এতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। কখনো কখনো সাংবাদিকদের প্রশ্নকে ওবায়দুল কাদের পক্ষপাতমূলক বলেও অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করা হয়, মানুষের ধারণা আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ধারণা কী, তারা কয়টি আসন পাচ্ছে? মানুষের আরেকটি ধারণা, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হবে। বিরোধী দল কে হবে, সে বিষয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী? এমন দুটি প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ইনশা আল্লাহ নির্বাচনে বিজয়ী হব। কত আসন, সেটা আমি এখনই বলতে চাই না। আর নির্বাচনের ফলই বলে দেবে বিরোধী দল কে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কীনা সে বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে জানতে চাওয়াা হয়। জবাবে ওবায়দুল কাদের তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি না থাকায় অনুসূচনা করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, টার্ন আউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে। প্রধান বিরোধী দল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট (অনুশোচনা) করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে।’
বিদেশি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করছে, বাংলাদেশে একটি ওয়ান সাইডেড (একতরফা) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কারণ, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে ওয়ান সাইডেড ইলেকশন হচ্ছে না, এখানে হচ্ছে ওয়ান সাইডেড বিরোধিতা।’
বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার ডামি নির্বাচন করছে। ডামি প্রার্থী দিয়েছে। এখন ডামি ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল। বাংলাদেশে ডামি দল হচ্ছে বিএনপি।’
বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচন প্রতিহত করবে না। একই সময় তারা আবার হরতাল দিচ্ছে। এটা স্ববিরোধিতা কি না। খবরে দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি তাদের কর্মসূচি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন কি না। একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বায়াসড (পক্ষপাতমূলক) প্রশ্ন করছেন কেন? এটা বেশি বায়াসড।
আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট আশা করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা কথাই বলব, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে।
ভোটের দিন বিএনপির ডাকা হরতাল সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, হরতাল এমনিতেই আন্দোলনের মরচে ধরা হাতিয়ার। এই মরচে ধরা হাতিয়ার বিএনপি আগেও প্রয়োগ করেছে। কোনো লাভ হয়নি। সামনে লাভ হবে, এমন আশা করেও লাভ নেই।’
বিএনপি হরতাল ডেকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে বিএনপির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আহ্বান করবেন কি না। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে, তা তারা স্পষ্টভাবে বলেছে। নির্বাচনে এখন প্রকাশ্যে বাধা দিচ্ছে বিএনপি ও তার সমমনারা। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে কেন নিষেধাজ্ঞা আসবে না, কেন ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে না এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই জানতে চাই।’
বিএনপির হরতালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমবে কি না। যদি তা-ই হয়, তাহলে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা থাকবে? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নাই। সব সময় নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়, ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করা, কেন্দ্রে আনার জন্য নেতা-কর্মীদের টিম আছে। তারা সেই কাজ করবে। বেশির ভাগ ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। যারা একটুু হয়তো দেরি করছে, তাদের একটুু তাড়াতাড়ি আসার জন্য হয়তো অনুরোধ করতে পারে। সেটা আমাদের টিমগুলো করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন গঠনে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যার অধীনে সাংবিধানিক পদের অধিকারীদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন হলো উৎসব, গণতন্ত্রের উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং তীব্র শীত উপেক্ষা করে জনগণ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবং ২৯৯ আসনে মোট প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৯৭০ জন। যার মধ্যে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সুতরাং নির্বাচনটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে।