Bangladesh

চোখ রাঙাচ্ছে গ্যাস পানি বিদ্যুৎ

ভয়াবহ গ্যাস সংকটের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎও পাচ্ছে না মানুষ। সেই সঙ্গে রয়েছে সুপেয় পানির আকাল। এরপরও অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় এই তিন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

এমন এক সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ দিশেহারা। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের বহু মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

গত ১৪ বছরে ১২ দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অন্তত ১২১ শতাংশ। আর পাঁচ দফায় গড়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭৫ শতাংশ। পরিবহন খাতের সিএনজির দাম বেড়েছে ছয় দফা। এ ছাড়া ডিজেলের দাম বেড়ে প্রায় ২৩৭ শতাংশ আর অকটেন ও পেট্রোলের দাম প্রায় ১৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে ১৪ বার।

এর আগে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার একক ক্ষমতা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। সেখানে দাম বৃদ্ধির পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম যুক্তি-তর্ক হতো। ফলে ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধির সুযোগ ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু গত বছর থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধির জন্য আইন করে। এরপর গণশুনানি ছাড়াই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম তিন দফায় ১৫ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এবারও একই কায়দায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে আগামী এপ্রিল থেকে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য সমন্বয় করারও প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সে ক্ষেত্রে দাম বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

রোজার আগে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম : ২০০৯ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গড়ে খরচ হতো আড়াই টাকার মতো। সেই ব্যয় বেড়ে এখন ১২ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুতের গড়মূল্য ৩ দশমিক ৭৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ২৫ টাকা।

বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকের জন্য তার চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রির কারণে প্রতি বছর পিডিবির লোকসান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সরকারের ভর্তুকি। গত অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। সরকারও এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভর্তুকি তুলে নিলে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৭৮ শতাংশ বাড়তে পারে। ভর্তুকি শূন্য করতে হলে পাইকারি দাম বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। তখন গ্রাহক পর্যায়ে দাম বেড়ে হবে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা। সংস্থাটির সুপারিশ হচ্ছে, ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করলে জনগণের জন্য সহনীয় হবে।

২০০৯-১০ সালে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ বিদ্যুতের দাম আর না বাড়িয়ে বরং কমানো সম্ভব হবে। কেননা, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল এ সময়ে। বড় কেন্দ্রগুলো চালু হলে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ আরও কমে যেত। কিন্তু সরকার সময়মতো সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এখন বড় সংকট তৈরি হয়েছে।

২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। তখন ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন ও অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে সেই সক্ষমতা এখন প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট হয়েছে। চাহিদার অনেক বেশি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সংকটের কারণে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘পিডিবির পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরও প্রতি ইউনিটে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। আবার ছয়টি বিতরণ সংস্থাও এখন লোকসান করছে। এটাকে সমন্বয় করতে হলেও তো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো দরকার। তবে যতটুকু বাড়ানোর দরকার তার চেয়ে কম দাম বৃদ্ধি করবে সরকার, যাতে সাধারণ মানুষের ওপর একবারে চাপ না পড়ে। সরকার এ ব্যাপারে হয়তো দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবে।’

ভোক্তা অধিকারবিষয়ক সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে সুবিধা দিতে সরকারি অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তা সত্ত্বেও বেসরকারি কেন্দ্রের বেশি দামের বিদ্যুৎ কিনে সরকার এ খাতে বেশি আর্থিক ঘাটতি সৃষ্টি করছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়ে লাভবান করা হচ্ছে। আবার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় বিদ্যুতের দামও দেওয়া হচ্ছে বেশি। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে সেটা অযৌক্তিক। বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণেরও ক্ষেত্রেও রয়েছে অস্বচ্ছতা।’

‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে’ যোগ করেন শামসুল আলম।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে না গিয়ে আর্থিক ঘাটতির দোহায় দিয়ে দাম বৃদ্ধি করছে। এতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘মানুষ যখন অভাবে বা বিপদে পড়ে তখন তার দোষ ধরার, উপদেশ দেওয়ার মানুষের অভাব হয় না। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট এ সবকিছু মিলেই অন্যান্য দেশের মতো আমরাও একটা সংকটের মধ্যে যাচ্ছি।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া : চলমান গ্যাস সংকট কাটাতে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর কথা বলে আবারও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগির এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রমতে, এবার শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম ৪৮ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে আবাসিক ও পরিবহন খাতে গ্যাসের দাম আপাতত বাড়ানোর সম্ভাবনা কম।

অবশ্য ভিন্ন উপায়ে বাড়তে পারে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম। কারণ আবাসিকে মিটারবিহীন বা পোস্টপেইড গ্রাহকরা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করেন এমন দাবি করে বিইআরসিতে মূল্যবৃদ্ধির আবদার করেছে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তাদের আবদার পূরণ হলে একমুখী চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ থেকে বেড়ে ১৩৮০ এবং দ্বিমুখী চুলায় ১০৮০ থেকে বেড়ে ১৫৯২ টাকা হতে পারে। এরপরও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যাবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে গত ডিসেম্বরের শেষদিকে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি।

জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে কারিগরি কমিটি। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিইআরসির সাবেক সদস্য (গ্যাস) মোহাম্মদ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘গণশুনানিতে তিতাসের হিসাবেই প্রমাণ হয়েছিল এক মাসে সর্বোচ্চ গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ ৪৫ ঘনমিটার। ভোক্তারাও যুক্তি এবং তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এটা দেখিয়ে দিয়েছেন। তারপরও আমরা ৬০ ঘনমিটার করেছিলাম। ধাপে ধাপে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল কমিশনের। এখন না বাড়িয়ে বরং আরও কমানো উচিত।’

এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাস থেকে তিতাসের প্রিপেইড মিটারযুক্ত গ্রাহকদের মিটার ভাড়া ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করেছে সংস্থাটি।

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে সর্বশেষ গত বছর ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এরপরও চাহিদামতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রায় ৪৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ২৬০ কোটি। ভয়াবহ গ্যাস সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে এসেছে। বাসাবাড়িসহ সবখানেই চলছে অস্থিরতা।

দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলার কারণে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় ভয়াবহ গ্যাস সংকটের মুখে ২০১৮ সালে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। ২০১৯ সালে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির কথা বলে গ্যাসের দাম ৩২ শতাংশের কিছু বেশি বাড়ানো হয়। কিন্তু পরে সরকার আমদানি ততটা করেনি। বাড়তি আদায় করা ৯ হাজার কোটি টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিতে বিইআরসি নির্দেশ দিলেও তা ফেরত দেয়নি পেট্রোবাংলা।

২০২২ সালে আবারও দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির আশ্বাস দিয়ে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। ওই সময় ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু সরকার ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে পারেনি। এদিকে অর্থের অভাবে গ্যাসের আমদানি বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকেও উৎপাদন কমে গেছে।

গ্যাসের অভাবে বিপাকে পড়া ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। চিঠি দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না দিলে গ্যাসে দাম কমিয়ে আগের দাম নেওয়া হোক।

পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব : গত ১৪ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সম্প্রতি আবারও পানির দাম শ্রেণিভেদে ২৪ থেকে ১৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

যদিও নগরবিদরা বলছেন, পানির দাম বাড়িয়ে ওয়াসা নিজের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের দায় জনগণের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় কম। উচ্চসুদে বৈদেশিক ঋণের টাকায় প্রকল্প করছে ওয়াসা। এসব ঋণের দায় চাপছে জনগণের ঘাড়ে। অন্যদিকে ঋণের টাকায় করা প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি মিলছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d