Bangladesh

ছোট দলের বড় মূল্য

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তার কিছু মনে করছে না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলনেও তেমন জোর নেই যে সরকারকে হটাতে পারে। বিএনপি না এলে বরং নিজেদের সুবিধা দেখছেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন নির্ভার মনোভাবের কারণ ছোট ছোট দলগুলো নির্বাচনে আসছে। এখন পর্যন্ত কমবেশি ২২টি দল নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। আগ্রহ দেখাচ্ছে আরও অন্তত চারটি দল। তবে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩০টি নির্বাচনে আসবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হবে না আড়ালে বিদেশিদের এমন চাপ সামাল দিতে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানছে আওয়ামী লীগ।

এ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে ছোট অনেক দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে গণমাধ্যমে। দুয়েকটি বড় দল নির্বাচনে না এলেও ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিদেশিদের কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ সামাল দিতে বেগ পেতে হবে না আওয়ামী লীগকে। এজন্যই আদর্শিক অবস্থানের সঙ্গে না মিললেও অন্য দলগুলোকে নির্বাচনের কাতারে টেনে আনছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্তমানে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর দলটি কঠোর কর্মসূচি দিয়ে চলেছে। তাদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও আন্দোলন করছে। তারা নির্বাচনের তসফিলও প্রত্যাখ্যান করেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশেষভাবে নেওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অনেক ছোট দলের নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধর্মভিত্তিক দলও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ মিলেছে। ছোট এসব দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে নির্বাচনে আসতে অনুরোধ করাসহ সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবও দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রথমে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ছোট দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের গণভবনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে ছোট দলগুলোর অনেক নেতা নির্বাচনে আসার অঙ্গীকার করছেন। গত এক সপ্তাহে অন্তত এক ডজনেরও বেশি ছোট দলের নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ছাড়াও নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ক্ষমতাসীনদের কাছে অঙ্গীকার করেছেন। তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এ তালিকায় আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টিও আছে বলে জানা গেছে।

নিবন্ধিত ছোট আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে আওয়ামী লীগের। শিগগিরই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেবে বলে জানায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, এত দল নির্বাচনে আসবে ধারণা ছিল না তাদের। ফলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে তা প্রমাণ করতে দেশ-বিদেশে আর সমালোচনা ও ঝামেলা পোহাতে হবে না আওয়ামী লীগকে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতার দাবি, বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না এটি যে ভুল ধারণা, প্রমাণ করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তারা বলেন, নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যত বেশি দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিয়ে নির্বাচনী ট্রেন চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ ট্রেনে যত বেশি দলকে তোলা যায়, সেই চেষ্টাই বেশি করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এ চার নেতা মনে করেন, নিবন্ধিত ছোট দলগুলোকে ভোটে আনতে সফল হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি সে দাবি করতে পারবে না বিদেশিরা। বিএনপির মতো বড় দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের বাইরে থেকে গেলেও নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল নির্বাচনে এলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা প্রমাণ করা সহজ হবে আওয়ামী লীগের জন্য।

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিন নেতা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বিদেশি শক্তিগুলো সরকারকে এখন চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিদেশি শক্তিগুলো প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় তারা। আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে যত বেশি দলকে নির্বাচনে টানা যায় সেই চেষ্টা করছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিএনপি না এলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে তা জোরালোভাবে প্রমাণ করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনমুখী করতে নানারকম লোভ দেখানো হচ্ছে ছোট দলগুলোর বড় নেতাদের। পাশাপাশি ছোট দলের নেতাদের দাবিদাওয়া মানতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী সংসদে ছোট দলের অনেক নেতাকে সংসদে দেখা যাবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই শতভাগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয় না। অনেক দল আছে যাদের নির্বাচন করার সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ বলেছে, ‘তোমার দেশে কি শতভাগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়’? জবাবে তারা স্বীকার করেছে, ‘হয় না’। ফারুক খানের দাবি, নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি তা বলার আর সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মানে হলো কত বেশি দল নির্বাচনে অংশ নিল। তিনি বলেন, ‘৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি বেশিরভাগ দল অংশগ্রহণ করে আর বিএনপি অংশ না নেয়, তাহলে কি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না? বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি নেই বলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না-ই পারে। তার মানে তো অন্য কিছু হতে পারে না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor