Bangladesh

জাপানিজ স্টাডিজে পরীক্ষা দেন ২৬ জন, পাস করেন ২৭ জন 

আসন ৪০টি। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন ২৬ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু রেজিস্ট্রার ভবনে ফলাফলের যে তালিকা পাঠানো হয়, তাতে দেখা যায় পাস করেছেন ২৭ জন। বিস্ময়কর এই ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অনিয়মিত স্নাতকোত্তর কোর্স ‘প্রফেশনাল মাস্টার্স ইন জাপানিজ স্টাডিজে (পিএমজেএস)।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ই-মেইলে ভর্তি পরীক্ষার্থী হিসেবে ২৬ জনের নাম পেয়েছেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার ভবনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফলাফলে ওই ২৬ জনের বাইরে মিঠু চন্দ্র শীল নামে আরও একজনের নাম রয়েছে।

নতুনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের স্নাতকোত্তর কোর্স শুরু হওয়ার পর এটাই প্রথম ব্যাচ। নিয়ম মেনেই পিএমজেএসের ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। 

জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং এই ভর্তি কমিটির প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পিএমজেএসের এই ভর্তি পরীক্ষা হয় গত ২২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায়। সেদিন বেলা আড়াইটায় লিখিত পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে লিখিত পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক পরেই মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে চূড়ান্ত ফলাফলে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওই ২৬ জনের সঙ্গে অতিরিক্ত একজনের নাম প্রকাশিত হয়। ওই ২৭ জনকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ভর্তি হন ২১ জন।

১৪ জানুয়ারি থেকে এই স্নাতকোত্তর কোর্সের ক্লাস শুরু হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানান, ক্লাস শুরুর পর মিঠু চন্দ্র ছাড়াও ইভা খাতুন নামের আরও একজনকে দেখেন যাঁকে লিখিত বা মৌখিক কোনো পরীক্ষায় দেখা যায়নি।

মিঠু চন্দ্র শীল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই পিএমজেএসে ভর্তি হয়েছেন। 

ভর্তি নিয়ে দুই রকম বক্তব্য

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পিএমজেএসের ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৩ ফেব্রুয়ারি পিএমজেএসে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী পরিচয়ে ওই প্রতিবেদক জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চান এ বছর আর ভর্তির সুযোগ আছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘কালকে অফিসে আসেন। চেয়ারম্যান স্যারের সাথে কথা বলে দেখি। কয়েকটা সিট খালি আছে।’ 

এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে আবার যোগাযোগ করা হলে সাইদুর রহমান বলেন, ‘ভর্তিপ্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে গেছে।’ এরপর প্রশ্ন ছিল, লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিল ২৬ জন; মৌখিক পরীক্ষায় কীভাবে ২৭ জন অংশ নেয় বা পাস করে? জবাবে তিনি বলেন, ভর্তিপ্রক্রিয়া যখন চলছিল, তখন অসুস্থ থাকায় বিষয়টি তাঁর ভালোভাবে জানা নেই।

কিন্তু ২৬ জন লিখিত পরীক্ষা দিলেও ২৭ জন কীভাবে পাস করল জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ঠিক মনে করতে পারছেন না।

পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে ভর্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ দেশের বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সান্ধ্য কোর্সসহ অনিয়মিত সব কোর্সে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার সময়োপযোগী বিধিমালা প্রণয়নে একটি কমিটিও করা হয় সেদিন। করোনা পরিস্থিতির পর বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে গেলে ২০২২ সালের ২১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে ওই কমিটির তৈরি করা একটি বিধিমালা অনুমোদিত হয়। এক সপ্তাহ পর সামান্য সংশোধন সাপেক্ষে সিন্ডিকেটেও সেটি অনুমোদিত হয়। নতুন সেই বিধি অনুযায়ী এ বছর অনিয়মিত স্নাতকোত্তর কোর্স পিএমজেএসে প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ।

জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং এই ভর্তি কমিটির প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম ৬ ফেব্রুয়ারি মুঠোফোনে বলেন, নতুনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের স্নাতকোত্তর কোর্স শুরু হওয়ার পর এটাই প্রথম ব্যাচ। নিয়ম মেনেই পিএমজেএসের ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। 

কিন্তু ২৬ জন লিখিত পরীক্ষা দিলেও ২৭ জন কীভাবে পাস করল জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ঠিক মনে করতে পারছেন না।

পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, ২২ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটায় লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মৌখিক পরীক্ষা নেন তাঁরা। মিঠু চন্দ্র শীল অসুস্থ ছিলেন, তাই তাঁর পরীক্ষা ২২ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষার পরপর নেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও যাঁরা অসুস্থ ছিলেন, তাঁদের পরীক্ষা এক সপ্তাহ পর নেওয়া হয়। পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তেই এটি করা হয়েছে। 

তবে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, ভর্তিতে অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদক খোঁজখবর শুরু করার পর পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সম্প্রতি পরীক্ষা নিয়ে কাগজপত্রে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখের পরে আলাদাভাবে কারও পরীক্ষা নেওয়া যায় না। এমন কিছু ঘটে থাকলে আমি সহ–উপাচার্যের (শিক্ষা) সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto