International

জাপানে চালু হলো বিশ্বের বড় নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর চালুর মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের পথে নতুন এক মাইলফলকে পৌঁছেছে জাপান। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইনডিপেনডেন্ট বলেছে, নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই উপায়ে সীমাহীন শক্তি উত্পাদন সম্ভব কি না, তা পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুযোগ এনে দিয়েছে জাপানের ইবারাকি অঞ্চলে নির্মিত ‘জেটি-৬০এসএ’ নামের এই পরীক্ষামূলক চুল্লি। সূর্যের মতো নক্ষত্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমেই শক্তি তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় সেই বিক্রিয়া ঘটানোর কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। সত্যি সত্যি যদি পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটানো যায়, তার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত অসীম পরিমাণ শক্তি উত্পাদন করা যাবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে। এ প্রক্রিয়ায় কার্বন নির্গমন বা তিজস্ক্রিয় নিঃসারণের ঝুঁকিও তেমন বাড়বে না। ভবিষ্যতে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইবারাকিতে যৌথভাবে ঐ নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানিবিষয়ক মহাপরিদপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, এই ফিউশন রিঅ্যাক্টর অভ্যন্তরীণভাবে নিরাপদ। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে এটি নিজে নিজেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। উচ্চমাত্রার দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও তৈরি করে না। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই ফিউশন প্রক্রিয়া পরবর্তী প্রজন্মের বৈদ্যুতিক উত্স হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা একই সঙ্গে বিদ্যুত্ সরবরাহ ও বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম।

ফিউশন বিক্রিয়া নিয়ে পদার্থবিদেরা কাজ শুরু করেন ১৯৫০-এর দশকে। তবে তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বারবার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী অগ্রগতি এই প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদী করে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। তাদের ধারণা, আগামী এক দশকের মধ্যে এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে টেকসই বিদ্যুত্ উত্পাদনে সক্ষম হবে মানুষ। ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটিতে গত বছরের ডিসেম্বরে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে প্রথম বারের মতো লাভজনকভাবে শক্তি তৈরিতে সফল হন বিজ্ঞানীরা। তার ঠিক এক বছরের মাথায় জাপানের জেটি-৬০এসএ রিঅ্যাক্টর সক্রিয় করা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা যে প্রক্রিয়ায় কাজটি করেছিলেন, তাকে বলা হয় থার্মোনিউক্লিয়ার ইনারশিয়াল ফিউশন। তারা লেজারের মাধ্যমে নিউট্রনের গায়ে আইসোটপ ছুড়ে দিয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটান, যার মাধ্যমে তৈরি হয় তাপ। ঐ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ২.০৫ মেগাজুল শক্তি খরচ করে ৩.১৫ মেগাজুল বিদ্যুৎ তৈরি করতে পেরেছিলেন, যা মোটামুটি এক কেটলি ফোটানোর জন্য যথেষ্ট। এ বছরের শুরুতে দলটি পুনরায় পরীক্ষা চালায়, যেখানে প্রথম পরীক্ষার চেয়েও বেশি বৈদ্যুতিক শক্তি তৈরি সম্ভব হয়। 

ফিশন বিক্রিয়ায় একটি ভারী মৌলের পরমাণুকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করা হয়। তাতে ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস ভেঙে দুটি হালকা মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয়। তাতে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক শক্তি। এভাবে পারমাণবিক শক্তি তৈরির কৌশল মানুষ আয়ত্ত করেছে আগেই। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আর পারমাণবিক বোমা এই প্রক্রিয়ারই ফল। এই বিক্রিয়ার সময় ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস যখন ভেঙে যায়, তখন তিনটি নিউট্রনও উত্পন্ন হয়। সেই তিনটি নিউট্রন তখন আরো তিনটি নিউক্লিয়াসে আঘাত করে নতুন তিনটি বিক্রিয়ার সূচনা করে। তাতে পাওয়া যায় আরো শক্তি এবং ৯টি নিউট্রন। তত্ত্বীয়ভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হলে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে, সেজন্য একে বলে চেইন রিঅ্যাকশন। এই চেইন রিঅ্যাকশন অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকলে বিপজ্জনক পরিমাণ তাপ বিকিরিত হয়। এই মূলনীতিতেই তৈরি হয়েছে পারমাণবিক বোমা। কিন্তু চেইন রিঅ্যাকশনের সময় তৈরি হওয়া প্রতি তিনটি নিউট্রনের মধ্যে দুটি যদি শোষণ করার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এই ফিশন বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তখন বিপদ না ঘটিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় তাপ উত্পাদন করা যায়। এই কৌশল ব্যবহার করেই তৈরি হয় পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র। পারমাণবিক চুল্লিতে ইউরেনিয়াম পরমাণুকে একটি নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে এর ফিশন ঘটানো হয়। সমস্যা হলো, এর জ্বালানি সহজলভ্য নয় এবং এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয়। নিউক্লিয়ার ফিউশনের সূচনা হয় ফিশন বিক্রিয়ার উলটো প্রক্রিয়ায়। এক্ষেত্রে দুটি বা তার বেশি নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে এক বা একাধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণু তৈরি করে, সঙ্গে পাওয়া যায় বিপুল শক্তি। যেমন—হাইড্রোজেনের দুটি আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম যুক্ত হয়ে হিলিয়াম তৈরি করে। সেই সঙ্গে মুক্ত হয় একটি নিউট্রন। সূর্যে প্রচণ্ড মধ্যাকর্ষণের চাপের মধ্যে নিউক্লিয়ার ফিউশনেই ক্রমাগত শক্তি তৈরি হচ্ছে। সেখানে মোটামুটি ১ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঐ বিক্রিয়া ঘটছে। কিন্তু পৃথিবীতে ঐ মাত্রায় চাপ তৈরি করা সম্ভব নয়। ফলে যদি ফিউশন বিক্রিয়া ঘটাতে হয়, তাহলে তাপমাত্রা বাড়িয়ে মোটামুটি ১০ কোটি সেলসিয়াসে নিতে হবে। পৃথিবীতে এমন কোনো বস্তু নেই, যেটা ঐ তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে। সে কারণে ল্যাবরেটরিতে এই গবেষণা চালাতে বিজ্ঞানীরা ভিন্ন কৌশল নেন। প্রচণ্ড উত্তপ্ত গ্যাস বা প্লাজমাকে তারা শূন্যে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে। আগের গবেষণাগুলোতে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে যে পরিমাণ শক্তি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়া শুরুর জন্য তার চেয়ে বহু গুণ বেশি শক্তি খরচ করতে হয়েছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d