International

জেনেভা ভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা: ফিলিস্তিনের পক্ষে দেশে দেশে বিক্ষোভ অব্যাহত

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে একদল মুখোশধারী পুলিশ। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টির শত শত শিক্ষার্থী গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিলেন।

প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে স্লোগান দেওয়ামাত্র ছদ্মবেশী পুলিশ তাদের ওপর হামলা শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের।      
শিক্ষার্থীরা জানান, অন্তত ২৫ জন পুলিশ সদস্য অতর্কিত বিক্ষোভস্থলে প্রবেশ করে হামলা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছিলেন। পুলিশের অভিযানের সময় অনেক শিক্ষার্থী ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পও ভেঙে দেয়। শিক্ষার্থীদের অপরাধীর মতো চেপে ধরে পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর তাদের জড়ো করার পর ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে পুলিশের গাড়িতে তোলার আগ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনপন্থি স্লোগান দিতে থাকেন। মঙ্গলবার স্পেনের মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়েও বিশাল বিক্ষোভ হয়। এদিন প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেন। এদিকে বুধবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে কয়েকশ শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দেয়।

জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমিরা নামে মরক্কোর এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশের অনেক সদস্য বেসামরিক লোকের ছদ্মবেশে ছিলেন। তারা শিক্ষার্থীদের অপরাধীর মতো হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। এতে আমরা মর্মাহত। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা কিছুই করিনি। কোনো হিংসা বা কোনো বৈষম্য বা ঘৃণার পথ বেছে নেইনি। পুলিশ ঠিক করেনি। এটা ভালো হয়নি। আমরা তো ছাত্র। আমরা গাজায় শান্তি চাই। 
ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল আকসা মসজিদে তা-ব চালিয়েছে ইসরাইলিরা। মঙ্গলবার একদল ইহুদি হঠাৎ আল আকসায় ঢুকে পড়ে। এ সময় এক ইসরাইলি পতাকা প্রদর্শন করে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, আল আকসা প্রাঙ্গণে এক ইহুদি ইসরাইলের পতাকা বের করে ধরে আছে। এ সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য তার সঙ্গে শান্তভাবে কথা বলছে।

পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর ওই ব্যক্তি কিছুক্ষণ পতাকা প্রদর্শন করে তা গুটিয়ে নেয় এবং মসজিদ প্রাঙ্গণের অন্যদিকে চলে যায়। শুধু তাই নয়, এদিন আল আকসা প্রাঙ্গণে একদল ইহুদি সংক্ষিপ্ত র‌্যালিরও আয়োজন করে। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে এই ধরনের র‌্যালির অনুমতি নেই। ইহুদিদের মধ্যে বেয়াদেনু গোষ্ঠী আল আকসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।

যারা মসজিদটিতে প্রবেশ করে তাদের অনেকেই এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ১৪ মে তারিখটি নাকাবা বা মহাবিপর্যয়ের দিন হিসেবে স্মরণ করে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের ইতিহাসে এটি একটি শোকাবহ দিন। কারণ এইদিন থেকেই ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়তে শুরু করেন। আর এই ফাঁকে ইসরাইল নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

বিক্ষোভের সময় নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম ভার্সিটিতে ছাত্ররা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। আমস্টারডাম ভার্সিটিতে ছাত্রদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় অনেক ছাত্র বিস্মিত হয়ে পড়েন। সারা ব্রেক নামের এক অধ্যাপক বলেন, পুলিশের ভূমিকা সত্যিই ভয়ংকর। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হঠাৎ হামলা শুরু করে। এরপর প্রায় একশ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসরাইলপন্থি কৌতুক অভিনেতা জেরি শেনফিল্ডকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।  বিষয়টি শিক্ষার্থীরা শোনামাত্র সমাবর্তন অনুষ্ঠান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীরা তৎক্ষণাৎ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে সমাবর্তনস্থল ত্যাগ করেন।

গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৫০ জন অধ্যাপককে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে কেউ সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন আবার কেউ তাদের প্রতি সংহতি জানান। ফ্রান্স, ব্রিটেন, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি, পাকিস্তান, কানাডা, জাপান, ভারত, ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া, লেবানন, জর্দান, জার্মানি, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোয় ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ চলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button