টাকা দিলেই খাবার ঢোকে হাজতে!
মারামারির একটি মামলায় গত শনিবার ফটিকছড়ি থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সোলায়মানের ছেলে আলী হায়দার। গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে তাকে আনা হয় চট্টগ্রাম জেলা আদালতের হাজতখানায়। সেখানে তার জন্য খাবার নিয়ে আসেন বড় ভাই আবু তালেব। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ছোট ভাইয়ের জন্য খাবারগুলো হাজতখানায় পৌঁছাতে পারেননি তিনি। আবু তালেবের ভাষ্য, খাবার দেওয়ার জন্য পুলিশ টাকা চেয়েছে। পরে তিনি যখন টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, তখন পুলিশের এক সদস্য আলী হায়দারের জন্য আনা খাবারগুলো হাজতখানার ভেতরে নিয়ে যান।
এই চিত্র শুধু জেলার থানা ও আদালতের হাজতখানায় নয়, চট্টগ্রাম মহানগর থানা ও আদালতের হাজতখানারও। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের হাজতখানায় ঢুকে একনজর দেখতে এবং প্রিয়জনদের জন্য বাসা-বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। টাকা পেলেই হাজতখানায় বন্দি ও আসামিদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
গত শনিবার ৫৪০ পিস ইয়াবাসহ আবদুল মালেককে গ্রেপ্তার করে মিরসরাই থানা পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তাকে আনা হয় জেলার থানা ও আদালতের হাজতখানায়। স্বামীর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন মালেকের স্ত্রী। সঙ্গে এসেছেন শ্বশুর আবু ওমর এবং তার এক শিশুসন্তান। প্রায় দুই ঘণ্টা হাজতখানার সামনে দায়িত্বরত কনস্টেবলকে অনেক অনুরোধ করেও মালেকের কাছে খাবার পৌঁছাতে পারেননি তারা। আবু ওমর বলেন, ‘জামাইকে খাবার পৌঁছে দিতে তার বিনিময়ে ১ হাজার টাকা চায় পুলিশ।
অবশ্য হাজতে থাকা বন্দি ও আসামিদের খাবার পৌঁছে দিতে স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করার অভিযোগ অস্বীকার করে সেখানে দায়িত্বরত কনস্টেবল ইউনুছ বলেন, বন্দি ও আসামিদের জন্য তাদের স্বজনদের আনা খাবার দেওয়া হচ্ছে না। সবকিছু সিসিটিভি ক্যামেরায় সংরক্ষণ হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে খাবার পৌঁছানোর অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে মহানগর হাজতখানার ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের জন্য অপেক্ষা করলেও মামলার কাজে আদালতে যাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে সেখানকার দায়িত্বরত কনস্টেবল জাহাঙ্গীর বলেন, ‘একদম কড়া নির্দেশ। কারও কাছ থেকে এক টাকাও নেওয়া হয় না। সবকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ছে। হাজতখানার বন্দি ও আসামিদের জন্য পুলিশ দুপুরের খাবার সরবরাহ করছে।’
মহানগর থানা ও আদালতের হাজতখানায় বন্দি ও আসামিদের কাছে স্বজনদের আনা খাবার পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে পুলিশের টাকা দাবি প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘হাজতখানায় আগে এ রকম একটি পরিস্থিতি হয়তো ছিল। গত অক্টোবরে বন্দি আসামিদের খাবার নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখির পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। বন্দি ও আসামি যতক্ষণ হাজতখানায় থাকবেন, ততক্ষণ বাইরের কোনো খাবার অ্যালাউ করা হচ্ছে না। তবুও পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।’
বন্দি ও আসামিদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা দাবি বা গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আদালতের পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, ‘হাজতখানায় আসা বন্দি ও আসামিদের জন্য বাইরের খাবার দেওয়া নিষিদ্ধ। পুলিশের কেউ টাকা নিয়ে থাকলে বিষয়টি আমার জানা নেই। আবার স্বজনদের সুবিধা না দিলে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, থানা ও আদালতের হাজতখানার আসামিদের জন্য দৈনিক দুই বেলার খাবার বাবদ বরাদ্দ বর্তমানে ১৫০ টাকা। কিন্তু গত আড়াই বছরে আসামিদের দুপুরের খাবার না দিয়েও সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। যাদের স্বজনেরা হাজতখানায় আসতেন না কিংবা টাকা থাকে না, তাদের উপোস যেতে হতো কারাগারে।