Bangladesh

ডলার সংকট ও রিজার্ভে চাপ: বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ও বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবিলায় সরকার বিদেশি ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবে ভারত ও সৌদি আরব থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আসন্ন প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরের সময় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ভারতের সঙ্গেও এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আরও কয়েকটি বিদেশি বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহত গতিতে কমছে। কোনোক্রমেই রিজার্ভে পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও ডলার সংকট সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ডলারের দাম বাড়িয়েও এর প্রবাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ালে খোলা বাজারেও বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

এদিকে গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে রিজার্ভ কমছে। ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে ওঠেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ কমছে। বৃহস্পতিবার গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪৩ কোটি ডলারে। আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ কমেছে ২ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২ বছরে রিজার্ভ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। রিজার্ভের বড় অংশই ব্যয় হয়েছে জ্বালানি উপকরণসহ অত্যাবশকীয় পণ্য আমদানিতে।

এদিকে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রধান উপকরণ রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। অক্টোবরে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। ওই মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ৩৭৬ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ৪৩১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের ঘরে ছিল। এবার তা ৩০০ কোটি ডলারের ঘরে চলে এলো। জুনে সর্বশেষ রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল।

রিজার্ভ বাড়ানোর দ্বিতীয় উপকরণ রেমিট্যান্সের গতিও নিম্নমুখী। যদিও অক্টোবরে গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২ শতাংশ। গত মাসে রেমিট্যান্স বেড়ে ১৯৮ কোটি ডলার এলেও আগামীতে শঙ্কা রয়েছে। কারণ ওমানে ভিসা দেওয়া বন্ধ, সুইডেনে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া মন্দায় প্রবাসীরা বিদেশে কাজের সংস্থান করতে পারছেন না। ফলে অনেকে রেমিট্যান্সও পাঠাতে পারছেন না। বৈদেশিক বিনিয়োগ, অনুদান ও অন্যান্য আয়েও চলছে মন্দা। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেছে। এ কারণে রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। এই চাপ কমাতে ও ডলারের প্রবাহ বাড়াতে সরকার বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর অংশ হিসাবে ভারতের সঙ্গে এখন আলোচনা চলছে। এছাড়া সৌদি আরব থেকেও ঋণ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহর সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তখন জ্বালানি তেল আমদানিতে সৌদি ক্রেডিট লাইনের সহায়তা চেয়েছেন। এবারের সফরেও বিষয়টি আলোচনায় আসবে। গত অর্থবছরে প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ রয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। বাকি অর্থ নিজস্বভাবে জোগান দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির সব উপকরণের দাম বাড়ছে। এতে এ বছর আমদানি ব্যয় আরও বাড়তে পারে। যে কারণে জ্বালানির উপকরণ আমদানিতে ডলারের সংস্থান করতে পারলে একদিকে ডলার ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। অন্যদিকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে।

সরকার রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় এর আগে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখা থেকে বাণিজ্যিক ঋণ নিয়েছিল। ওই ঋণ ইতোমধ্যে পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মতো এবারও বাণিজ্যিক ঋণ নিতে চাচ্ছে সরকার।

সৌদি আরব থেকে বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থিতি ছিল ২২ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ১২ কোটি ডলারে। এখন আরও নতুন ঋণ নিতে চাচ্ছে দেশটি থেকে। ভারত থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ খুবই কম। ভারতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ রয়েছে দেড় কোটি ডলার। এদিকে সৌদি আরবের বাংলাদেশে বিনিয়োগও তেমন নেই। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে ১৩ কোটি ডলার। যা মোট বিনিয়োগের সাড়ে ৩ শতাংশ। এছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশ পণ্য আমদানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে। ফলে দেশটি থেকে স্বল্পমেয়াদি ট্রেড ক্রেডিট নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ঋণ নিতে সরকার সুদের হার ও মুদ্রার স্থিতিশীলতাকেও বিবেচনায় নিয়েছে। সৌদি মুদ্রা এখন ডলারের বিপরীতে স্থিতিশীল। ফলে এ দেশটি থেকে ঋণ নিলে সুদ হার ও বিনিময় হারের ঝুঁকি কম। ভারতের মুদ্রাও ডলারের বিপরীতে সীমিত পর্যায়ে অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তবে যে দেশ থেকেই ঋণ নেওয়া হোক না কেন সুদের হার বেশি পড়বে। কারণ লাইবর রেট বা লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট এখন বেশ বেড়েছে। লাইবরের সঙ্গে ২ বা ৩ শতাংশ যোগ করেই সাধারণ সুদ হার নির্ধারিত হয়। করোনার আগে লাইবর রেট ডলারে ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হার ছিল দেড় থেকে ২ শতাংশ। এর সঙ্গে আড়াই থেকে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদ নির্ধারিত হতো। এ হিসাবে সুদের হার পড়ত ৪ থেকে ৫ শতাংশ। বর্তমানে লাইবর রেট বেড়ে ডলারে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ইউরোতে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছে। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করলে সুদের হার দাঁড়ায় ডলারে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ইউরোতে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। তিন শতাংশ যোগ করলে সুদের হার আরও বেশি পড়ে। ফলে ঋণের সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে।

সরকার জরুরিভিত্তিতে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাচ্ছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রণোদনার হার বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বসীমা ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ডিসেম্বরে পাচ্ছে ৬৮ কোটি ডলার। অন্যান্য সংস্থা থেকে মিলবে আরও ৬০ কোটি ডলার। এ দুটি মিলে ১৩০ কোটি মিলবে জানুয়ারির মধ্যে। এছাড়া পাইপলাইনে আটকে থাকা ডলারও ছাড় করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor