তথ্যমন্ত্রী নিজের বিভ্রান্তি থেকেই বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন : টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নয়, বরং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেই বিভ্রান্তিপ্রসূত মনগড়া ও ভিত্তিহীন মিথ্যাচার করছেন বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তির পদমর্যাদার সাথে বেমানান এ ধরনের আচরণ থেকে তাকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সম্প্রতি টিআইবি কর্তৃক প্রকাশিত ‘নির্বাচনী হলফনামার তথ্যচিত্র : জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক বিশ্লেষণ সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত মন্ত্রীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
‘টিআইবির দেয়া কোটিপতির হিসাবে গরমিল আছে এবং তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘টিআইবি সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রী বিষেদগার করতে গিয়ে ‘কোটিপতি’ প্রার্থীর ব্যাখ্যায় নিজের মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টা করেছেন। অথচ টিআইবি যথানিয়মে এ সংক্রান্ত বিশ্লেষণে নগদ ও ব্যাংকে রক্ষিত টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও স্বর্ণালঙ্কারসহ শুধুমাত্র অস্থাবর সম্পদের হিসাব বিবেচনায় নিয়েছে। জমি, বাড়ি বা ফ্লাটের দাম কত, তার অবতারণা এক্ষেত্রে অবান্তর। তিনি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পার্থক্য বুঝতে পারছেন না বা চাচ্ছেন না বলেই ধরে নেয়াই যৌক্তিক।’
টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্যমূলক মর্মে তার বক্তব্যে যৌক্তিকতা রয়েছে এই অর্থে যে, টিআইবির কাজের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অবশ্যই রয়েছে। আর তা হচ্ছে, এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনস্বার্থে দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গবেষণা ও অধিপরামর্শভিত্তিক অবদান রাখা।
সরকারকে ‘বেকায়দায় ফেলা’ টিআইবির উদ্দেশ্য এই বক্তব্য হাস্যকর উল্লেখ করে ড. জামান বলেন,‘বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন নিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্র-কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে টিআইবি। মাননীয় মন্ত্রীর মনে রাখা উচিত যে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই হলফনামায় প্রার্থীর সুনির্দিষ্ট আট ধরনের তথ্য প্রকাশের বিধান করা হয়েছে। টিআইবি সকল প্রার্থীর হলফনামার সকল তথ্য ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করেছে এবং জনগণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। টিআইবি মনে করে, যেসব প্রতিষ্ঠান এই বিশ্লেষণ থেকে উপকৃত হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক দল, যাদের জন্য এই প্রতিবেদন আত্ম-জিজ্ঞাসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কথিত দুর্নীতির বিষয়ে টিআইবির অবস্থান সম্পর্কে মন্ত্রীর বক্তব্য ভিত্তিহীন ও মনগড়া উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন,‘টিআইবি কখনো বলেনি যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে; বরং বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছে এবং একইসাথে অত্যন্ত জোরালোভাবে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করার ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যায়িত করে, বিশ্বব্যাংকেরও জবাবদিহিতা চেয়েছে। তথ্যমন্ত্রী তথ্য বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে নিজেকে অবারিতভাবে বিব্রত করা থেকে বিরত রাখবেন, এই প্রত্যাশা করছি।