Bangladesh

ধার করে চলছে ব্যাংক

বিপর্যয়ের মুখে দেশের ব্যাংকিং খাত ব্যাংকগুলো ধার করেছে ৭০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা :: কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একদিনেই ধার নেয় ২৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা :: তারল্য ঘাটতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কমছে আমানত

দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ব্যাংক। রাজনৈতিক কারণে অপ্রয়োজনীয় এতোগুলো ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ায় গোটা ব্যাংকিং সেক্টরে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬টি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৪৩টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক। এ ছাড়াও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। এই বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের বেশিরভাগ ব্যাংক খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। বৈধ-অবৈধভাবে ঋণের কারবারিতে জড়িয়ে পড়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক পুঁজির সঙ্কটে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুরবস্থা এমন পর্যায়ে পড়েছে যে ধার-দেনা করে চলছে ব্যাংকগুলো। গতকালও ব্র্যাক ব্যাংক তারল্য সঙ্কটের কারণে দেশের বাইরে কার্ড দিয়ে গ্রাহকদের ক্যাশ টাকা উঠানোতে নিরুৎসাহিত করেছে। ১৪টি ব্যাংকের অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, ওই সব ব্যাংকের টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। ৫টি ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা আরও শোচনীয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গ্রাহক চাহিদা মেটাতে গত বুধবার একদিনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ২৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে নানা ধরনের ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিকদের ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ায় এমন পরিণতিতে পতিত হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। এসব ব্যাংক পরিচালনায় যে তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ডলার সঙ্কটে কয়েকটি ব্যাংকের কারসাজি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতায় ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রহকদের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বিশিষ্ট ব্যাংকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন রশীদ বলেছেন, সাইফুর রহমান এভাবে গণহারে ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাকে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এভাবে ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার পরিণতি সংশ্লিষ্টরা এখন হারে হারে টের পাচ্ছেন।

জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের বড়ই অভাব। ব্যাংকগুলো এখন পর্যাপ্ত আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না। মূল্যস্ফীতিতে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। এতে উল্টো আর্থিক সঙ্কট মেটাতে মানুষের টাকার চাহিদা বেড়েছে। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দিতে ব্যাংকগুলো ধার করা বাড়িয়েছে। নীতি দুর্বলতার কারণে ঋণের অর্থ তুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় চাপ আরো বেড়ে গেছে। ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। প্রয়োজনে অনেক ব্যাংককে অন্যদের সাথে একীভূত কিংবা গুঁটিয়ে ফেলতে হবে। অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বছরজুড়েই বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকায় বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এতে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ভাঙার পাশাপাশি কমছে ব্যাংকে আমানত জমার প্রবণতাও। নতুন আমানত কম আসায় ব্যাংকে বাড়ছে তারল্য-সঙ্কট। তাই প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ধার নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। বেশিরভাগ ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চলছে। ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার যে সরবরাহ তাকেই তারল্য বলা হয়। কোন কারণে ব্যাংকে নগদ টাকার সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেলে তাকে তারল্য সঙ্কট বলে। তারল্য সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো তুলনামূলক বেশি সুদে আমানত নিলেও মানুষের আগ্রহ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তঃব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই ধার করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৮৭২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড।

গত বুধবার একদিনেই কিছু ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা ধার নিয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে একটি রেকর্ড। এর আগে নভেম্বর মাসেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চলেছে দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২১ সালের জুন মাসে তারল্য উদ্বৃত্ত ছিল দুই লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ এর জুনে এটি কমে দাঁড়ায় এক লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। গত শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩-এই ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ছোট-বড় ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এদিকে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ১৪ ব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এটি মূলত ব্যাংকগুলোয় অনিয়মের কারণে সঙ্কটময় আর্থিক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। অবশ্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে সুশাসনের ঘাটতি থাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের বিদ্যমান পরিষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিষদও গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সামনে আরও এ ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলো হলোÑ অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরের এই হিসাবটি ছিল সর্বোচ্চ ঘাটতি। এর আগে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো বাসেল থ্রি অনুসারে, ব্যাংকগুলোর জন্য ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর) ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ রাখতে হয় নিরাপত্তা হিসেবে। ১৪টি ব্যাংক ন্যূনতম সিএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতের সিএআর ছিল ১১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন সিএআর নিয়ে চলেছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এই ১৪ ব্যাংকের অধিকাংশেরই মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও চার ব্যাংক। এই চার ব্যাংক হলোÑ বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক এবং পাকিস্তানের হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ কার্যক্রম।

আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছে। আর তাই ব্যাংকগুলোতে তারল্য কমছে। একই সঙ্গে নানাবিধ কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ার জের ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে এবং ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা নানা পদক্ষেপ নিয়েও কাটানো যাচ্ছে না। এসবের জের ধরে বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশেরও বেশি হওয়ায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে জনজীবনে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অন্যদিকে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না রফতানি বাণিজ্যে আবার রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। আর তাই আর্থিক খাতে সঙ্কট বাড়ছে। অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ সামনে নির্বাচন। কিন্তু ‘নির্বাচনের নৈতিক মানদন্ডে দুর্বল’ একটি সরকারের পক্ষে তা সহজ হবে না। নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিতে পারলে অর্থনীতির মূল সূচক রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রফতানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংক খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণ কঠিন হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী, অস্থির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আরো বাড়াচ্ছে ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক না হলে সঞ্চয় সক্ষমতা বাড়বে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নগদ টাকার ঘাটতি বর্তমানে আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সঙ্কট মেটাতে অন্য ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নিতে হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি ধার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ব্যাংকগুলোর তারল্য চাহিদা মেটাতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৬১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এর আগে এক দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ধার দেওয়ার নজির নেই। ব্যাংকগুলোকে এই ধার এক থেকে ২৮ দিনের জন্য দেওয়া হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ ১৪ দিনের জন্য এই ধার দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তারল্য সঙ্কট মোকাবিলায় গত ২৫ অক্টোবর রেকর্ড ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা ধার দিয়ে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময়ে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের স্থিতি ছিল ৫৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। গত বুধবার পর্যন্ত ধারের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কলমানি বাজারে গড় সুদহার ওঠে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টানতে বাজারে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ অর্থনীতিবিদদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সাত দিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে ২৫টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিকপ্রতিষ্ঠান নিয়েছে ১২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা।

এক দিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে একটি ব্যাংক ৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা নিয়েছে। শরিয়াভিত্তিক ছয়টি ব্যাংক ৬ দশমিক ৭৫ থেকে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ১৪ দিন মেয়াদি ধার করেছে চার হাজার ২৭ কোটি টাকা। ‘স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি’ হিসেবে একটি ব্যাংক ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এক দিনের জন্য নিয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। আর একদিন মেয়াদি তারল্য সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংকে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে নিয়েছে সাত হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।

এদিকে তারল্যের চাহিদা থাকায় আমানতের সুদহার বাড়ছে। তারল্য সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো তুলনামূলক বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে। তারপরও মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখছে না। কিছু কিছু ব্যাংক থেকে বরং আমানত তুলে নিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৯ থেকে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে আমানত নিচ্ছে। ঋণের সুদহার যেখানে সাড়ে ১১ শতাংশের নিচে। ব্যাংকাররা জানান, সচেতন মানুষ আমানত রাখার ক্ষেত্রে সুদহারের চেয়ে যথাসময়ে ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার বিষয়টি বেশি বিবেচনায় নেয়। এজন্য সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদ অফার করলেও কাক্সিক্ষত আমানত পাচ্ছে না।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাম ও শহর দুই ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ছে। গ্রামীণ এলাকায় উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে এর আঘাত বেশি আসছে। এই ধারাবাহিকতায় নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার কারণে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির প্রায় সব সূচকগুলোকেই আঘাত করছে।

২০২৩ সালের জুনে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। এর আগের বছর তা ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও মূল্যস্ফীতির এই হিসাব নিয়ে নানামুখী আলোচনা আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ২০২৩ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমন এক সময়ে এই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে যখন আশপাশের দেশসহ সারাবিশ্বে এটি কমে আসছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়াটাই মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। তাদের দাবি পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সুদহার বাড়িয়ে যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে সেখানে বাংলাদেশ হেঁটেছে উল্টো পথে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে কৌশলে সুদহার কমিয়ে রাখা হয়েছিল। তাছাড়া বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ থেকে উত্তরণে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাকাকে আকর্ষণীয় করতে ছাপিয়ে ধার দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করার কোনো বিকল্পই নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d