Bangladesh

নাড়া দিয়ে সাড়া নেই

ডিম, আলু, পেঁয়াজসহ ৫টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পর সরকার নির্ধারিত দামে তা বিক্রি না হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় সপ্তাহ দু’য়েক আগে বাজার তদারকির জন্য বিভাগীয় কমিশন ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা হাঁকডাক ছেড়ে গুদাম থেকে বাজার পর্যন্ত (সাপ্লাই চেইন) মনিটরিংয়ে মাঠে নামে।

এই নজরদারি ব্যবস্থাপনায় একযোগে কাজ শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ, আড়ত থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে নিয়মিত অভিযান চালাতে শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে তাদের এসব তৎপরতায় নিত্যপণ্যের বাজারে ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং বেশকিছু পণ্যের বাজার উল্টো আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

বাজার পর্যবেক্ষকরা জানান, মূল সংকটের সমাধান না করে এলোমেলোভাবে তদারকি বাড়ানোর কারণে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বরং কোনো কোনো পণ্যের বাজার উল্টো তেতে উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বাজারের লাগাম টেনে ধরতে হলে সবার আগে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধ মজুতদারদের কঠোর সাজার আওতায় আনা জরুরি। আর এসব কার্যক্রম সারা বছর তদারকি করতে হবে।

অথচ দেশে কোনো তৎপরতারই নিয়মিত মনিটরিং নেই। শুধু নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হলেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণের হাঁকডাক শুরু হয়। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব কার্যক্রম শুরুর আগেই বেশিরভাগ সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের প্রভাবশালীদের আঁতাত থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

এদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজার অস্থিতিশীল হলেও এর নেপথ্যে সরকারের তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্তের অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাসহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। তাই শুধু বাজার তদারকি করে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাবে না। বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বা প্রতিযোগিতা কমিশন- এসব প্রতিষ্ঠানের খবরদারিতে দুর্বলতা রয়েছে। আর এ কারণেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা মনে করেন, এসব প্রতিষ্ঠানের উচিত বাজারব্যবস্থাকে একটা নজরদারির মধ্যে নিয়ে এসে মূল্যস্ফীতি অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক নজর রাখা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। তার মতে, উৎপাদক স্তর থেকে ভোক্তা স্তর এবং আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তর- এই দুই পর্যায়ে যারা মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাদের হাতে বাজারটা একচেটিয়াভাবে চলে গেছে। তারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং এ কারণে যে মূল্যটা সেটা বাজারের প্রতিযোগিতার সক্ষমতার নিরিখে হচ্ছে না। তিনি বলেন, এই মধ্যস্বত্বভোগীরাই বাজারের মূল্য নির্ধারণ করছে এবং অনেক সময় সরবরাহকে প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে অব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে সামনে এনেছেন অর্থনীতিবিদ ডক্টর সেলিম রায়হানও। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ীরা একটা সাময়িক সরবরাহ সংকট তৈরি করে কোনো কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে ফেলে। যেটার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। চিনি বা ভোজ্যতেলের মতো খাতে সরবরাহকারীর সংখ্যাও হাতেগোনা, মাত্র তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে বাজারকে প্রভাবিত করার প্রবণতা আছে বলে মনে করেন তিনি।

বাজারে অ্যান্টি-কমপিটিটিভ প্র্যাক্টিসের (প্রতিযোগিতাহীন অবস্থা) নিদর্শন পাওয়া যায়, অথচ এগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ আমরা দেখি না- যোগ করেন সেলিম রায়হান।

এদিকে দেশের বাজারে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে বড় ধরনের দুর্বলতা থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, বাজারে চাহিদা কত, সরবরাহ কত, উৎপাদন কত, আমদানি কতটুকু করতে হবে এবং সেটা কোন সময়ে করতে হবে, সেই আমদানিটা উন্মুক্তভাবে হচ্ছে কি না- এসব তথ্যের ভিত্তিতে বেশিরভাগ সময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। ফলে যথেচ্ছভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

অন্যদিকে দেশে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার নেপথ্যে মুদ্রাস্ফীতিকেও দায়ী করেন বাজার পর্যবেক্ষক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা জানান, চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আঠারো দিনে সরকারকে সহায়তা করতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে দশ হাজার আটশ কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, এভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেওয়ার প্রভাব ঠিক তখনই না হলেও মূল্যস্ফীতি, অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এখন যে পণ্যের বাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলছে তার পেছনে এটাও একটা বড় কারণ। এদিকে, চাহিদার চেয়ে দেশীয় যোগান বেশি থাকলেও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে চড়া দরে বিক্রীত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্তেও নতুন করে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়ছে বলেও মনে করেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।

তারা মনে করেন, দাম কমাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে আমদানি না করে, বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বাজার ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং আমদানিনির্ভরতা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানি করা হলে সেটি বাজারে তেমন প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কৃত্রিমভাবে বাজারে পণ্যের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হলে, সেরকম ক্ষেত্রে আমদানি করার পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হয় না এবং দামও কমে না। তার ওপর আমদানি যথেষ্ট পরিমাণে হলে বড় ব্যবসায়ীরা তাদের হাতে থাকা পণ্য বাজারে ছেড়ে দিতে পারেন, ফলে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি পণ্যের দাম কমলেও ক্ষুদ্র ও মাাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেই সঙ্গে, দীর্ঘ মেয়াদে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করেন এই গবেষক।

এদিকে, বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ডিমের খামারিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ গত কয়েক মাসে ডিমের আড়তদাররা যে দামে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছিলেন, সেই দামের চেয়ে ডিমের উৎপাদন খরচ বেশি বলে দাবি করেন খামারিরা। এখন উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা না নিয়ে ডিম আমদানি করা হলে ওই ক্ষুদ্র খামারিরা বেশি খরচে ডিম উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবে। যেহেতু বাজারে ডিমের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু আমদানিকারকরা বিদেশ থেকে ডিম আনার কারণে দেশের উৎপাদন মূল্য ও বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে ডিম আনতে পারবেন এবং ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে পারবেন। এমন ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ডিম উৎপাদকদের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ছে। পাশাপাশি ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ যে চারটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয় তার কোনোটিই কার্যকর হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপও দেখা যায়নি। দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান ও অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করায় কয়েকটি কোল্ড স্টোরেজ মালিককে জরিমানা করে দায় সেরেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।

অথচ বাজারে সংকট না থাকলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৮-৯ টাকা বেশি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র পেঁয়াজের বাজারেও। দেশী পেঁয়াজের কেজি ৭৬ থেকে ৮৫ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে ২০ টাকা বেশি। আর ডিমের দাম স্থির হয়ে আছে ১৫০ টাকায়। যদিও সরকার ঠিক করে দিয়েছে ১৪৪ টাকা।

এদিকে, হাতেগোনা কিছু সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও বাকি সব সবজির দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, মুলা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি গোল বেগুন ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কচুরমুখি ৯০ টাকা এবং কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাজার তদারকির জন্য বিভাগীয় কমিশন ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়ার পর দু’এক দিন তোড়জোর তৎপরতা দেখা গেছে। তবে সপ্তাহ না পেরোতেই এসব হাঁকডাক থমকে গেছে।

Show More

8 Comments

  1. Spot on with this write-up, I honestly believe this amazing site needs far more attention. I’ll probably be back again to
    read more, thanks for the info!

    Visit my site :: vpn

  2. What i do not realize is if truth be told how you’re now not really much more neatly-preferred than you may be right now.

    You are so intelligent. You know therefore significantly relating to this topic, made me in my opinion believe it from so many
    numerous angles. Its like women and men aren’t fascinated until it’s
    one thing to accomplish with Lady gaga! Your individual stuffs outstanding.

    All the time handle it up!

    Feel free to visit my webpage; nordvpn special coupon code 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor