নিউইয়র্কে অপরাধ কমাতে পাতাল রেলে রক্ষীবাহিনী মোতায়েন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ পাতাল রেল স্টেশনে জাতীয় রক্ষীবাহিনী (ন্যাশনাল গার্ড) মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ক্যাথি হোকুলের নির্দেশে জাতীয় রক্ষীবাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ এর আগে মেয়র গত জানুয়ারীর শেষ দিকে প্রায় এক হাজার নিউইয়র্ক পুলিশ কর্মকর্তাকে পাতাল রেলে মোতায়েন করেন, কিন্তু তারাও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে ব্যর্থ হন৷
গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর জানুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক সিটির পাতাল রেলে শতকরা ৪৬ শতাংশ অপরাধ বেড়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ০১.১ শতাংশ অপরাধ কমেছে বলে জানিয়েছে সিটি ট্রানজিট বিভাগ। তবে নিউইয়র্কে সামগ্রিক অপরাধ কিছুটা কমলেও পাতাল রেলে অপরাধ ক্রমেই বেড়েই চলছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। চলতি বছরের প্রথম দু’মাসেই তিনটি হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু লোমহর্ষক অপরাধ কাণ্ড ঘটেছে সিটির পাতাল রেলের বিভিন্ন স্টেশনে।
নিউইয়র্ক পুলিশের সূত্রে জানা গেছে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উল্লেখযোগ্য অপরাধের মধ্যে ২৭টি খুন, ১১৩টি ধর্ষণ, ১,১৬৬টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসব অপরাধের মধ্যে ছিল ২১টি খুন, ১১৬টি ধর্ষণ ও ১,২২২টি ছিনতাইয়ের ঘটনা। সব মিলিয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা ছিল ৯,০২০টি আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা ছিল ৮,৯১৯টি। অপরদিকে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হেইট ক্রাইমের অপরাধের সংখ্যা ছিল ২৭টি আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হেইট ক্রাইমের সংখ্যা ছিল ২৮টি।
নিউইয়র্ক সিটির ট্রানজিট ব্যবস্থা নিয়ে যেসব এডভোকেসি গ্রুপ কাজ করে তারা এরই মধ্যে স্টেট ও সিটি গভর্নমেন্টকে পাতাল রেলে অপরাধের ভয়াবহতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, পাতাল রেলে অপরাধ অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সিটির গণপরিবহণ থেকে আস্থা হারাবে সাধারণ নাগরিকরা।
সিটির যাত্রীরা বলছেন, পেশাদার অপরাধী ছাড়াও হোমলেসদের উৎপাতে যাত্রীদের বিড়ম্বনা লেগেই আছে। এসব নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে শক্ত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তারা।
নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতিদিন তিন মিলিয়ন মানুষ পাতাল রেলে ব্যবহার করে যাতায়াত করে।ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের চলাচল নিরাপদ করতে প্রয়োজনে আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্টেট ও সিটি কর্তৃপক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে গভর্নর ক্যাথি হোকুল সীমান্তরক্ষী ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের কথা ভাবেন। পাতাল রেলে টহলে নতুন এক হাজার ফোর্সের মধ্যে ৭০০ জন ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন গভর্নর।
গত ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক পুলিশ ও ট্রানজিট পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ডরা তাদের টহল শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিটির বিভিন্ন পাতাল রেলে তাদেরকে যাত্রীদের লাগেজ, ব্যাগ এবং ব্যাকপ্যাক তল্লাশি করতে দেখা যায়।
গভর্নর হোকুল যাত্রীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে স্টেশনগুলোর প্রবেশমুখে আকস্মিক ব্যাগ তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছেন৷ কারো ব্যাগ তল্লাশিতে আপত্তি থাকলে তার সাবওয়ে ব্যবহারের প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন গভর্নর হোকুল৷