Bangladesh

পেঁয়াজের ‘সেঞ্চুরি’ সিমের ‘ডাবল’ মরিচের ‘ট্রিপল’ নিত্যপণ্য নিয়ে ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না, বাজারে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে

নিত্যপণ্য নিয়ে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না স্বল্প আয়ের মানুষের। আলু, পেঁয়াজের বেঁধে দেওয়া দাম তো কার্যকর হয়নি। এর মধ্যে নতুন করে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, সবজি ও কাঁচা মরিচের। এছাড়া পেঁয়াজের দাম আরো বেড়েছে। বাড়তি মাছের দামও।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও গ্রাম-শহর নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১২ শতাংশের ওপরে। গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলছে। ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ খেলায় কোনো ব্যাটসম্যান একশ রান করলে হলা হয় ‘সেঞ্চুরি’। আর কোনো বোলার পর পর তিন বলে তিনজন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারলে বলা হয় হ্যাট্রিক। কোনো খেলোয়ার সেঞ্চুরি করলে এবং কোনো খেলোয়ার হ্যাট্রিক করলে সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের উত্তাপ ছড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে দামে পেঁয়াজ ‘সেঞ্চুরি’, মরিচ ‘ট্রিপল’ করেছে। ডবল সেঞ্চুরি করেছে কেজিতে সিমের দাম। রসুঁই ঘরে তরকারির অতি প্রয়োজনীয় এই পণদুটি ভোক্তাদের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে। চড়া দামে এসব নিত্যপণ্য ক্রয়ে নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি অবস্থা। সংসারের নিত্যপণ্য কিনতে হাজার হাজার পরিবারের কর্তারা নিদারুণ দুর্দশায় পড়েছেন। গতকাল রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে কেজিতে পেঁয়াজের ‘সেঞ্চুরি’ মরিচের ‘হ্যাট্রিক’। প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। অথচ গতকালও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রংপুরে বলেছেন, সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিন সপ্তাহ আগে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার, তবে সেটি আটকে আছে ঘোষণাতেই। কেউ মানছে না সরকারের বেঁধে দেয়া দাম।
গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে আলুর কেজি রয়ে গেছে ৫০ টাকাতেই। যদিও তিন সপ্তাহ আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেটি কেবল ঘোষণাতেই আটকে আছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকার কয়েকটি কাঁচাবাজারে ওই বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ও আলু ১৪ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। আর বাজারভেদে কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।
চড়া মূল্যের বাজারে একটু কমে বাজার করতে যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজারে এসেছিলেন শনির আখড়ার মিজানুর রহমান; তবে বাজার ঘুরে হতাশাই প্রকাশ করলেন তিনি। বললেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। বাড়তি দাম আরও চড়েছে। জিনিসপত্রের দাম আর কবে কমবে? পেঁয়াজ আলু কোনোটার দামই তো সরকার কমাতে পারল না। উল্টো আরো বেড়েছে। বেড়েছে মানে, বাড়তির পথেই আছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের কেজি একশ এবং মরিচের কেজি তিনশ টাকা অবাক করার ঘটনা।
মূলত নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা মানুষ। কয়েক মাস ধরে বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য উর্ধ্বমুখি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা শুধু দাম বেঁধে দিয়ে দায় সারছেন। বাধ্য হয়ে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অনেকে মৌলিক খাবারও কাটছাঁট করছেন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে গত মাসে আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেঁধে দেয় সরকার। এরপর তিন সপ্তাহ পার হলেও বাজারে তার কার্যকারিতা মেলেনি। বরং দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া বাজারে ফের বেড়েছে মুরগির দাম। এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা অধিদপ্তর অভিযানের নামে কিছু জরিমানা করছে। এই পর্যন্তই।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা প্রতি পিস।
সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও তা মানছেন না বিক্রেতারা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তবে বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে আলু। বাজারে শালগম ৮০ টাকা কেজি, গাজর ১২০ টাকা, বেগুন ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও শসা ৭০ টাকা এবং পেঁপে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কচুছড়া ১০০ টাকা কেজি, কাকরোল ৮০ টাকা কেজি, পটল ৭০ টাকা কেজি, লতি ৮০ টাকা কেজি, ঢেড়স ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শনিরআখড়ার কাঁচা বাজারের এক সবজি বিক্রেতারা বলেন, গত সপ্তাহে ফুলকপি বিক্রি ছিল ৫০ টাকা, আজ ৬০ টাকা। মূলা আর শালগম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি গত সপ্তাহে ছিল, বর্তমানে ৮০, একই দাম। এখন শীতকালীন সবজি মৌসুম শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টি-বাদল। বৃষ্টির কারণে সবজি বাজারে পর্যাপ্ত আসছে না। তাই শীতকালীন সবজির দাম একটু বেশি।
এদিকে বাজারে মুরগির দাম আরো বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজির দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। বাজারে এই মুরগি গত বুধবার বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়।
পেঁয়াজের বাজারেরও একই অবস্থা। বিক্রি হচ্ছে না সরকারের বেঁধে দেয়া দামে। যাত্রাবাড়ি, দয়াগঞ্জ, ক্যাপ্তান বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। দয়াগঞ্জের এক বিক্রেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, আমরা কী করবো ? আমরা আনি আড়ত থেকে। সেখানেও জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারে না। ফলে আমরা যে দামে আনি তার থেকে ৫-৬ টাকা বেশি দরে বেচি। এতে ক্রেতাদের সাথে আমার তর্ক-বিতর্ক হয়। লসেতো আর বেচা যায় না।
এদিকে কিছু ক্রেতা অভিযোগ করেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে তাদের কিনতে হচ্ছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই দাম কি কখনই কমবে না? এভাবে রোজ দাম বাড়লে চলাটাই মুশকিল। একেকদিন একেক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের

সংশ্লিস্ট সূত্র বলেছে, সিন্ডিকেটের কারণে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। এই চক্রের কারণেই পণ্যমূল্য বেঁধে দিয়েও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না।

যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর, মহাখালি ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য জানা যায়।

গতকাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা,  নতুন শিম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পটোল, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোট আকারের একটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজি সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। এছাড়া গতকাল বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

এদিকে সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দর বেঁধে দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া আলুর কেজি বিক্রি হয় ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। অথচ সরকার প্রতি কেজি আলুর দর সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সিন্ডিকেট করে আলুর কোল্ড স্টোরেজগুলো (হিমাগার) সাধারণ মানুষের টাকা শুষে নিয়েছে। 

গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির পাশাপাশি মাছের দামও বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ চাষের মাছ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন। চাষের পাঙাশের কেজিই বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। বছরখানেক আগেও তা ১৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে। বাজারে অন্য মাছের মধ্যে  তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা,  কই ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা,   রুই, কাতল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, শোল ৪৫০ থেকে ৬০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা ও এক কেজি ওজনের ইলিশ দেড় হাজার টাকার বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাজারে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। যে কারণে দেশীয় পণ্যের দামও বাড়ছে। তিনি বলেন, পণ্যের দর বেঁধে দিয়ে তখনই সুফল পাওয়া যাবে, যদি বাজারে পর্যাপ্ত তদারকি করা সম্ভব হয়।

Show More

8 Comments

  1. Hi there, i read your blog from time to time and i own a similar one and i
    was just wondering if you get a lot of spam feedback?
    If so how do you stop it, any plugin or anything you can suggest?
    I get so much lately it’s driving me mad so any assistance
    is very much appreciated.

    Here is my site: vpn coupon code ucecf

  2. My developer is trying to persuade me to move to .net from
    PHP. I have always disliked the idea because of
    the costs. But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on a number of websites for about a year and am concerned about switching to another platform.
    I have heard excellent things about blogengine.net.
    Is there a way I can import all my wordpress posts into it?

    Any help would be really appreciated!

    my site; eharmony special coupon code 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button