নির্বাচনমুখী প্রশাসন গড়ছে সরকার
ঢাকাসহ ১০ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ
আর মাত্র ৬ মাস পর অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও তাদের থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা। মাঠ প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বদলি-পদায়ন এবং পদোন্নতি হচ্ছে নির্বাচন মাথায় রেখে, যার অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০ জেলার প্রশাসক (ডিসি) পরিবর্তন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, টাঙ্গাইল, পাবনা, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে গত ১২ মার্চ ৮ জেলায় ডিসি পদে রদবদল এনেছিল সরকার।
গাজীপুরের ডিসি আনিসুর রহমানকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানকে রাঙ্গামাটি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের একান্ত সচিব (উপসচিব) শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনকে বান্দরবান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব) মো. কায়ছারুল ইসলামকে টাঙ্গাইল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মু. আসাদুজ্জামানকে পাবনার ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) আরিফুজ্জামানকে শরীয়তপুর, অর্থ বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব সুরাইয়া জাহানকে লক্ষ্মীপুর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানকে কুমিল্লা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে ফেনী ও বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামকে গাজীপুর জেলার ডিসি করা হয়েছে।
অন্য দিকে ফেনীর ডিসি আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসানকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব, লক্ষ্মীপুরের ডিসি মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব, রাঙ্গামাটির ডিসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, বান্দরবানের ডিসি ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিকে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব ও পাবনার ডিসি বিশ্বাস রাসেল হোসেনকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ জানুয়ারি ১১ উপসচিবকে বিভিন্ন জেলায় ডিসি হিসেবে নিয়োগের পর ‘ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগে তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-৪ শাখার উপসচিব নাফিসা আরেফীনের নিয়োগ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাকে নীলফামারীতে ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে মেহেরপুরে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলামকেও পদায়ন করা হয়নি। এ ঘটনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে ডিসি নিয়োগের জন্য প্রস্তাবনা পাঠাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়। নতুন পদায়ন হওয়ায় এসব কর্মকর্তার জীবনবৃত্তান্ত বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে যারা ছাত্রজীবনে সরকারদলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তাদের প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রশাসনের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে রাজনীতি করার সুযোগ না থাকলেও এক শ্রেণীর কর্মকর্তার রাজনীতি করার বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই হচ্ছে। এরাই মূলত প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করেন। একদল আওয়ামী লীগের সময়ে, আরেকদল বিএনপির সময়ে। গত দুই দশক ধরে এ প্রক্রিয়া চরম আকার ধারণ করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অতি আস্থাভাজন সিনিয়র কর্মকর্তারা নির্বাচনমুখী প্রশাসন সাজানোর কাজ শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদেও আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। এ দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদেও আস্থাভাজনদের বসানোর পরিকল্পনা চলছে।
বর্তমান বিভাগীয় কমিশনাররাও আস্থাভাজন। বিভাগীয় কমিশনাররাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন করে থাকেন। ডিসিরাও তাদের অধীনে থেকে কাজ করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ ও পদায়ন শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে সরকারের আস্থাভাজনদের। যারা নিয়োগ ও পদায়নে ভূমিকা রাখেন।