নির্বাচনের আগে আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি ১৪২% ছাড়িয়েছে
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি চরম সংকটে পড়েছে। তিন দশক আগে দেশটি চরম তারল্য সংকটে পড়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর গত মাসে ফের একই ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দ্রুত গতিতে বেড়েছে। সরকারি তথ্যানুসারে, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ১৪২ দশমিক ৭ শতাংশ ছুঁয়েছে। আর্জেন্টিনার জনগণ পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে আগামী রোববার। অর্থমন্ত্রী সার্জিও মাসা ও কট্টরপন্থী নেতা জাভিয়ের মাইলির মধ্যে ভোটাভুটি হবে। জাভিয়ের মিলি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ধ করা এবং তিন অংকের মূল্যস্ফীতি হ্রাসের জন্য লেনদেন ডলারে করার প্রস্তাব করছেন। একটি জরিপের তথ্যানুসারে, ডলারের বিপরীতে আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসোর মূল্য শূন্য দশমিক ২ সেন্ট থেকে প্রায় ২৬ দশমিক ১ সেন্টের মধ্যে থাকে। মাসিক ভিত্তিতে অক্টোবরে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের চিত্রের চেয়ে এক ধাপ কম। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়ে কম।
অক্টোবরে পরিবহন, পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ভোটের কে জিতবেন তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। তবে এ কথা বলা যায় আর্জেন্টিনার পরবর্তী নেতার জন্য মূল্যস্ফীতি হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বৈদেশিক মুদ্রার দুর্বল রিজার্ভের কারণে স্থানীয় মুদ্রার দ্রুত অবমূল্যায়ন হয়েছে। নতুন সরকার আয়-ব্যয়ের ব্যবধান ঘোচাতে ভর্তুকি তুলে দিলে জীবনযাপনের ব্যয় হবে ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, বছরের শেষ নাগাদ বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ১৮৫ শতাংশে পৌঁছবে। এটা পূর্ববর্তী ১৮০ দশমিক ৭ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। একই সমীক্ষা অনুসারে, মোট দেশীয় পণ্য চলতি বছর ২ ও ২০২৪ সালে ১ দশমিক ৬ শতাংশে সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি প্রবল হওয়ায় আর্জেন্টিনার লোকজন সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাক খুঁজতে সেকেন্ড-হ্যান্ড বাজারের দিকে ঝুঁকছে। অনেকে পুরনো পোশাক বিক্রি করে নগদ অর্থ সংগ্রহ করছে। রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, আর্জেন্টিনা একসময় দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ছিল। শস্য রফতানিকারক দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। দুই-পঞ্চমাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে অর্থনৈতিক মন্দা অনুভূত হচ্ছে। ভোটারদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাভিয়ের মাইলিকে কিছুটা হলেও জনপ্রিয় করে তুলেছে। যেখানে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য ক্ষমতাসীন পেরোনিস্ট জোটের প্রার্থী অর্থমন্ত্রী সার্জিও মাসার বিজয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বুয়েনস আইরেসের ২২ বছর বয়সী ছাত্র আইলেন চিক্লানা বলেন, ‘আজকাল শপিং মলে গিয়ে পছন্দমতো কোনো কিছু কেনা যায় না, যেমনটা আগে করা যেত। এত দাম, কল্পনাও করা যায় না।’ তিনি জানান, নতুন জিন্সের দাম এক বছর আগের দামের দ্বিগুণের বেশি, যা আর্জেন্টিনার মাসিক ন্যূনতম মজুরির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। দেশটির পরিসংখ্যান অফিস জানায়, অক্টোবরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ১৪২ দশমিক ৭ শতাংশ ছুঁয়েছে। মাসিক বৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও এটি আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের চেয়ে কম ছিল। আর্জেন্টিনা বছরের পর বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অর্থনীতিবিদরা মুদ্রা ছাপানো ও স্থানীয় পেসোতে আস্থায় অভাবকে দায়ী করেছেন।