Bangladesh

নির্বাচনের তফশিল-পরবর্তী রাজনীতি, উলটো মেরুতে এখনো দুই দল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলেও এখনো উলটো মেরুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। পুরোদমে ভোটের মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীনরা। তারা বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভাও করেছে। আজ শুরু হচ্ছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার কার্যক্রম। জোটগতভাবে নির্বাচন করার ব্যাপারেও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি। অপরদিকে তফশিল প্রত্যাখ্যান করে চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করছে বিএনপি। সামনে ‘অসহযোগ’ আন্দোলনেরও চিন্তা করছে। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে থেকে আন্দোলন সফল করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট থেকে বিরত রাখতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি কৌশলী আওয়ামী লীগ শরিকদের তাড়াহুড়া ক্ষমতাসীনদের মতো ফরম বিক্রি শুরু সমমনাদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জোটগতভাবে করার বিষয়ে আগেই ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দাবি ছিল-আগেভাগেই আসন ভাগাভাগির বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার। কিন্তু এ বিষয়ে কৌশলী আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফশিল হয়ে গেলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো ফয়সালা হয়নি। এরই মধ্যে আজ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরমও বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে জোটের নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট সূত্রগুলো বলছে-নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ চলছে। বিশেষ করে নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটের হবে নাকি, আবারও মহাজোট হবে-বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ বিএনপি নির্বাচনে এলে এক ধরনের পরিকল্পনা, না এলে অন্য পরিকল্পনায় নির্বাচনে যাবে ক্ষমতাসীনরা। এর ওপর নির্ভর করবে জোটভুক্ত দলগুলোর আসন সংখ্যা বাড়া বা কমা। ১৪ দলের নেতারা জানান, তারা চান-এই মুহূর্তে জোটকে আরও দৃশ্যমান করা ও ১৪ দলের মধ্যে আসন বণ্টন করে প্রার্থীদের এখনই মাঠে নামিয়ে দিতে। এ বিষয়ে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের দৃষ্টি আকর্ষণও করছেন তারা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতো নিজেরাও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু করছে। ঠিক করছেন নিজেদের প্রার্থী তালিকা। শিগগিরই এ বিষয়টি জোটনেত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব। এটা আমরা আগেই বলেছি। জোট শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আওয়ামী লীগ সভাপতি, জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করবেন। খুব শিগগিরই তিনি জোট নেতাদের ডাকবেন, তাদের সঙ্গে বসেই এটা ঠিক করবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তাদের নিজেদের নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে। গঠন করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এই কমিটির প্রথম সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার। সেখানে কো-চেয়ারম্যান পদে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাকে মনোনীত করা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে উপকমিটিগুলোও। আজ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরমও বিক্রি শুরু করবেন তারা। কিন্তু এখনো শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করেননি তারা। দলীয় সূত্র বলছে-তফশিল ঘোষণা হলেও বিএনপি তফশিল প্রত্যাখ্যান করলেও আওয়ামী লীগ এখনো নিশ্চিত নয়, তারা ভোটে আসবে কিনা। ফলে এখনো বিষয়টি নিয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচন করবে, নাকি জোটগতভাবে করবে? জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোটে থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, তার দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সময়মতো সব জানানো হবে।

এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখনো আসন নিয়ে ফয়সালা না হলেও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ইতোমধ্যে জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ফলে আজকের মধ্যেই ইসিতে চিঠি দিয়ে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে রাখছেন তারা। চিঠিতে নিজ দলের প্রতীক বা একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন দুটি বিষয়ই ইসিকে জানিয়ে রাখবেন তারা। পাশাপাশি নিজেরাও আওয়ামী লীগের মতো দলগতভাবে নিজেদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবেন। শরিক দলের নেতারা বলছেন-জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে আমরা একমত। তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো সময় আছে। আশা করছি দ্রুতই জোটের আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।

নির্বাচন সামনে রেখে শুক্রবার সভা করেছে ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে সভায় বলা হয়-এবারের নির্বাচনি লড়াই যে প্রতিবেশ-পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাতে ১৪ দলের ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। সে কারণে এই মুহূর্তে ১৪ দলকে আরও দৃশ্যমান করা ও ১৪ দলের মধ্যে আসন বণ্টন করে প্রার্থীদের এখনই মাঠে নামিয়ে দিতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টি এ ব্যাপারে ১৪ দলের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় পার্টির পক্ষ থেকে ৩০টি আসনে প্রার্থিতা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়, যাদের শুক্রবার থেকেই মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে।

১৪ দলের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন ও জোটগতভাবে নির্বাচনে ইসিতে অবহিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন যুগান্তরকে বলেন, আমরা সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদও শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন বোর্ড, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবেন তারা। ২৩ নভেম্বর জাসদ মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে বলে জানান দলটির দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন।

নির্বাচন সামনে রেখে আলাদাভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে আরেক শরিক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলও। দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা ১০টি আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করব। এরপর ১৪ দলীয় জোটে আলোচনা করে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে ইসিকে চিঠি দিয়ে অবহিত করার কথাও বলেন তিনি।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা গতবারও যেভাবে করেছি, আগে যার যার দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। এরপর ১৪ দলের প্রার্থীদের তালিকা আমরা জোটনেত্রীর কাছে পাঠাই। উনি দেখে ঠিক করে দেন, এই কয়টা আসনে আওয়ামী লীগ, এই কয়টাতে শরিক দলের অন্যরা। দলীয় না জোট প্রতীকে নির্বাচন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গতবারও দুটি অপশনই রেখেছিলাম। এবারও ইসিতে চিঠি দিয়ে সেটাই জানিয়ে দেব।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের আসন ভাগাভাগিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এটার সময় এখনো আছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই বৈঠক হবে। বৈঠকে ৫-৭টি আসন চাইবেন বলেও জানান তিনি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে জোট গঠন করা হলে, তার মধ্যে থেকে যে কোনো একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত দলগুলোর প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এমন প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখাস্ত দাখিলের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনি জোটের প্রতীকের জন্য আজকের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচনে ২০টি দল ভোট করে প্রধান দুই দলের প্রতীক-‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষ’ নিয়ে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল তাদের জোটসঙ্গী ১০টি দল। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগে ১১টি দল নৌকা প্রতীকে ভোট করতে চাইলেও প্রতীক বরাদ্দের সময় আরও পাঁচটি দলকে নৌকা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। বিএনপির সঙ্গে আরও ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষে ভোট করার কথা জানিয়েছিল। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর তা দাঁড়ায় আট দলে।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে (মহাজোটের বাইরে) ১৪ দলীয় জোট গঠনের পর এখন পর্যন্ত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন জোট নেতারা। এর মধ্যে নবম জাতীয় নির্বাচনে ১৪, দশম জাতীয় নির্বাচনে ১৮ ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জোট শরিক দলগুলোকে ১৩ আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন জোট শরিক দলের ৫ নেতা। ‘অসহযোগ’ কর্মসূচির ভাবনা বিএনপির, বিদেশিদের তৎপরতার দিকে নজর নেতাদের

নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তবে তফশিল হলেও সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটছে না বিএনপি। আপাতত চলমান আন্দোলনকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত টেনে নিতে চায় দলটি। তাই সামনের দিনগুলোতে প্রতি সপ্তাহে দু-এক দিন বিরতি দিয়ে আরও কয়েক দফা হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন নেতারা। তখন তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির আলোকে ‘অসহযোগ’ নাম দিয়ে হরতাল ও অবরোধ একই সঙ্গে পালনেরও প্রস্তাব আছে। এজন্য বিদেশিদের তৎপরতার দিকেও নজর রাখছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি চলমান কর্মসূচিসহ আগামী দিনের আন্দোলনে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা আরও জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। তারা এ সময় পর্যন্ত চলমান আন্দোলনকে টেনে নিতে চান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাবও বোঝার চেষ্টা করবেন। নির্বাচনের পথে কারা হাঁটলেন তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে এই সময়ে। তারপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান। তবে তফশিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের আলোচনা ছিল। এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ‘অসহযোগ’ কর্মসূচির মধ্যেই কমিশন ঘেরাওয়ের কথা আলোচনায় রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু তারা ভাবছেন না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। চলমান আন্দোলন সফল হবেই।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চলমান আন্দোলন সামনে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগণ প্রাণ হাতে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন সব স্বৈরাচারীর জন্য হবে সতর্কবার্তা। দেড় দশকের রাজনৈতিক সংকট এখন এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা। সরকারের পতন না ঘটিয়ে এবার তারা ঘরে ফিরবে না।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক গণতন্ত্রের যুগে এ লড়াই শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, এ লড়াই পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী সব মানুষের। এ লড়াই বাংলাদেশের মানুষের হারিয়ে যাওয়া, অজস্র মৃত্যু, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া জনগণের ভোটাধিকার অর্জনের লড়াই। বিশ্ব বিবেক আজ জাগ্রত। বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্ঠুর সরকারের শোষণ-অত্যাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষও।

এদিকে বিএনপি ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে আছে। পাশাপাশি তারা সরকারের বিরুদ্ধে থাকা অন্য দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখতে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ঘনিয়ে এলে কোনো দল মত বদলায় কিনা-তা নিয়েও শঙ্কা আছে বিএনপির মধ্যে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, আন্দোলন থেকে হঠাৎ সরে আসতে হলে সংলাপে বসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রও শর্তহীন সংলাপের তাগাদা দিয়ে তিনটি দলকে চিঠি লিখেছে। বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ওই চিঠির জবাব দিয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে হলে সংলাপ একমাত্র পথ। এজন্য নির্বাচনের তফশিল পিছিয়ে নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে পরিবেশ তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তবে এ বিষয়ে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তফশিল ঘোষণা হওয়ার পর এখন সরকার ছোট দলগুলোকে ভোটে টানতে চাইবে। এজন্য নানা ধরনের ‘প্রলোভন’ ও চাপে থাকবে দলগুলো। তারপরও সরকারবিরোধী দলগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে তার বিশ্বাস।

অবশ্য সমমনা রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের বিষয়ে কিছুটা সন্দেহও আছে বিএনপির। বিষয়টি এখনই প্রকাশ্যে আনতে চায় না তারা। যে দল যে মনোভাবই দেখাক, সবাই যাতে সরকারবিরোধী মনোভাব ধরে রাখে, সেজন্য দলের নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, গত এক সপ্তাহে স্থায়ী কামিটি, কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, আন্দোলনের সফলতা নিয়ে হাইকমান্ড খুব আত্মবিশ্বাসী। খুব শিগগিরই বিদেশি প্রভাবশালী একটি দেশের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে বলেও তাদের ধারণা দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন প্রসঙ্গে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, সাবেক সংসদ-সদস্য, সম্ভাব্য প্রার্থী ও পদে থাকা নেতারাসহ সব স্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে থেকে কর্মসূচি সফলের। এই আন্দোলন বিএনপির জন্য বাঁচা-মরার উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, যারা পদ-পদবি পাননি, দলের সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো তা করতে হয়েছে। কিন্তু সবার এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে মাঠে থাকতে হবে। আন্দোলন সফল হলে আগামী দিনের মাঠে থাকা পদবিহীন নেতাদেরও যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।

তৃণমূল নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান চলছে। যে কারণে বেশিরভাগ নেতাকর্মী ঘরে কিংবা আত্মীয়ের বাসায়ও থাকতে পারছেন না। ইউনিয়ন থেকে মহানগর পর্যায়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েও গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও প্রতিটি নেতাকর্মী মাঠে থাকার বিষয়ে অনড়। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তারা যে কোনো মূল্যে আন্দোলনের সফলতা চান।

একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে তার একটি খসড়াও হাইকমান্ডের কাছে দেওয়া হয়েছে। যতই তফশিল ঘোষণা করা হোক না কেন, নির্বাচন প্রতিহতের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। আগামী দিনে ঢাকা মহানগরেও কর্মসূচি জোরদারভাবে পালনের নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ীই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন।

২৯ অক্টোবর থেকে ১ দিনের হরতালসহ ইতোমধ্যে পাঁচ দফা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। রোববার ভোর ৬টা থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি শুরু হবে। একই কর্মসূচি পালন করছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এলডিপিসহ অন্তত ৩৯টি রাজনৈতিক দলও। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামীও।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bandar togel
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor