Bangladesh

নির্বাচনের সময়ে চলছে সার্কাস

কাঁধের ব্যাগে পোষ্টার-ফেস্টুন, হাতে লিফলেট। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে হেঁটে নিজেই বিলি করছেন নিজের নির্বাচনী লিফলেট। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বাসিন্দা রশিদ মিয়া চট্টগ্রাম-১০ আসনের (ডবলমুরিং-হালিশহর-খুলশী) উপনির্বাচনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী। দলের মনোনয়ন মিললেও কর্মী-সমর্থক না থাকায় একাই নেমেছেন প্রচারণায়…

কাঁধের ব্যাগে পোষ্টার-ফেস্টুন, হাতে লিফলেট। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে হেঁটে নিজেই বিলি করছেন নিজের নির্বাচনী লিফলেট।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বাসিন্দা রশিদ মিয়া চট্টগ্রাম-১০ আসনের (ডবলমুরিং-হালিশহর-খুলশী) উপনির্বাচনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী। দলের মনোনয়ন মিললেও কর্মী-সমর্থক না থাকায় একাই নেমেছেন প্রচারণায়।

‘প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দুর গ্রামের এক যুবক এমপি হতে চট্টগ্রাম এসেছেন’- এ খবরে অনেকেই দেখতে আসছেন রশিদ মিয়াকে। এসময় রশিদ মিয়াও দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শুক্রবার দুপরে হালিশহর নুতন বাজার এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।

তার দল নিবন্ধিত হওয়ায় রশিদ মিয়া সমর্থক ছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। কিন্তু তিনি যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেন তাহলে তাকে তার নির্বাচনী এলাকা থেকে ১ শতাংশ স্বাক্ষর নিশ্চিত করতে হতো এবং কেবল এটি নিশ্চিতের পরই তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারতেন।

নির্বাচনী প্রচারণার ফাঁকে রশিদ মিয়ার সঙ্গে কথা হয় টিবিএস এর প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, “ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনের ইচ্ছা ছিল আমার, কিন্তু দলের আরেকজন সেখানে প্রার্থী হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এরপরে যখন চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলো, আমি সঙ্গে সঙ্গে এখানে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেই।”

“চট্টগ্রামের মানুষ অনেক ভালো। আমার বিশ্বাস, আমি যেহেতু এতদুর থেকে এসেছি তারা আমাকে আপন করে নেবে। আশা করছি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমি তাদের মন জয় করতে পারবো,” বলেন তিনি।

একক প্রচারের বিষয়ে রশিদ মিয়ার সোজা জবাব, “আমি পাস করলে সংসদে একা যাবো। তাহলে ভোট চাইতে সুপারিশ সঙ্গী কেন? সংসদে আমাকে একাই কাজ করতে হবে নিজের যোগ্যতায়। সুপারিশকারী ব্যক্তিবর্গ কোন কাজে আসবেনা।”

রশিদ মিয়া সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের হাজী আব্দুল করিম ছেলে। ২০২০ সালে দিরাই পৌরসভার নির্বাচনে রশিদ মিয়া মোবাইল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় আসেন। সে সময় তিনি প্রতিদন্দ্বী ৮ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে কম (১৩৫ ভোট) পেয়েছিলেন।

তবে বিগত নির্বাচনে কত ভোট পেয়েছেন এবং এই উপনির্বাচনেও কত ভোট পাবেন তা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন রশিদ মিয়া। তার দাবি, দেশের তরুণ ও সুশিল সমাজের মধ্যে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে যে অনিহা সৃষ্টি হয়েছে, সেই ধারণাকে বদলে দিতেই তিনি চট্টগ্রামে এসেছেন।

রশিদ মিয়া বলেন, “প্রায় ১৮ বছর বিদেশে ছিলাম। দেশে ফেরার পর মানুষের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা থেকেই মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। যদিও আমি জয়ী হইনি, তবুও মানুষ আমাকে জনগণের মেয়র বলে।”

“আমার ইচ্ছা আমি আইনমন্ত্রী হব। আমি চাই এমপি-মন্ত্রী হয়ে জনগণের উপকার করতে। এর আগে সিলেট মেয়র নির্বাচনেও আমাকে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী করার কথা ছিল,” বলেন তিনি।

রশিদ মিয়া নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরের একটি আবাসিক হোটেলে গত একমাস ধরে থাকছেন। অনেক চেষ্টা করেও তার দলের জন্য একটি অফিসের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলেন জানান রশিদ মিয়া। তবে এমপি নির্বাচিত হলে পাকাপাকিভাবে বাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামে থাকার ইচ্ছা তার।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, রশিদ মিয়া স্বশিক্ষিত। বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক সময়ের প্রবাসী রশিদ মিয়ার কৃষিখাত থেকে বছরে আয় হয় দুই লাখ টাকা। এছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান কোনো আয় নেই তারা। স্ত্রী ও সন্তানরা থাকেন যৌথ পরিবারে।

কিভাবে নির্বাচনের ব্যয় জোগান দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, “দল থেকে মনোনয়ন দিলেও কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। আমি যেহেতু সমাজ সেবামূলক কাজ করি। তাই বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে টাকা আসে।”

“এছাড়া আমি যখন চট্টগ্রামে নির্বাচনে ঘোষণা দিলাম, তখন থেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সহযোগীতা করছে। এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকার মত পেয়েছি। নির্বাচনকালে যা খরচ হবে সেটাও পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা,” বলেন তিনি।

এদিকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত একটি দলীয় প্রার্থীর এই করুণ দশা নিয়ে সমালোচনায় মেতেছে চট্টগ্রামের ভোটাররা। চট্টগ্রামের মত মহানগরে যে দলের একটি অফিস নেই, প্রচারণার জন্য কর্মী নেই- সেই দল কিভাবে নিবন্ধন নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।

দিরাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোহন চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, “যার ইউপি সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নেই, তিনি কিভাবে একটি দলের এমপি নমিনেশন পান? বিষয়টি আমার বুঝে আসছে না।”

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এবং টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “এসবকে নির্বাচন না বলে তামাশা বলাই ভালো। যেমন নির্বাচন, তেমন প্রার্থী হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে জনগণের আশার কিছু নেই।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের পরিচালনা বোর্ড প্রধান আবু লায়েস মুন্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে আমরা তাকে সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দিয়েছি।”

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী রশিদ মিয়া লড়ছেন ‘ছড়ি’ প্রতীক নিয়ে।

নির্বাচনের বাকি প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া।

গত ২ জুন ঢাকার একটি হাসপাতালে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে আসনটি (ডবলমুরিং-হালিশহর-খুলশী) শূন্য হয়।

দশ বছর আগে নিবন্ধিত হয় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। কিন্তু বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দলটির কোনো কার্যালয় না থাকায় রশিদ মিয়ার প্রচারণা কঠিন হয়ে পড়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। কার্যালয়টি পরিদর্শন শেষে এ পর্যন্ত উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তরের পাওয়ার বদলে বরং আরো বেশি প্রশ্নই তৈরি হয়।

নিউমার্কেটের কাছে প্রিয়াঙ্গন মার্কেটের পেছনে অবস্থিত দলের কার্যালয়।

অপেক্ষাকৃত পুরানো একটি পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় কার্যালয়টির অবস্থান। নাম ফলক দেখে বোঝা যায়- এটি একটি পার্টি অফিস।

ভবনটিতে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসের পাশাপাশি আরেকটি রাজনৈতিক দল – বাংলাদেশ জাতীয় লীগ- এর অফিসও রয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ ভবনটির মালিক। তৃতীয় তলায় থাকেন তিনি।

কিন্তু কার্যালয়ে যাওয়ার পর শুধু অফিস সহকারি রানাকে দেখতে পান টিবিএসের প্রতিবেদক।

কার্যালয়ের স্বল্প আলোকিত রিসিপশনের অংশের লাইটটি ছিল ভাঙা। সামান্য ওই আলোতেই সেখানে কয়েকটি সোফা এবং কিছু লাউঞ্জ চেয়ার দেখা যায়।

বামদিকে দেখা যায় একটি বড় কক্ষ, যেটি আইনজীবী ও পার্টির চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ তার ল চেম্বার হিসেবে ব্যবহার করতেন।

অফিসে আরো দুটি কক্ষ দেখা যায়। একটা ডাইনিং রুম, আরেকটা ছোট মিটিং রুম।

সামনের দিকে আরেকটি কক্ষের সামনে দেখা যায় একটি ব্যানার টানানো। সেখানে লেখা ছিল ‘মতবিনিময় ও আলোচনা সভা’।

এরপর টিবিএস এর প্রতিবেদক দলটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান মো. শাহ জামাল আমিরুলের সঙ্গে কথা বলেন।

তাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের অফিস রয়েছে জানতে চাইলে শাহ জামাল বলেন, “আসলে গণ মুক্তিজোট নামে আমাদের একটি জোট আছে। আর বাংলাদেশ জাতীয় লীগ আমাদের জোটের অধীনে থাকা দল। তারা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়।”

তিনি আরও বলেন, অফিসে একটি ল চেম্বার থাকলে সেটি দলের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।

“আমাদের এখন ৬-৭টি জেলায় অফিস রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী মাস থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় অফিস খোলা হবে।”

চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে দলের কোনো কার্যালয় নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নগরীতে সাংগঠনিক সম্প্রসারণে কিছুটা ‘গ্যাপ’ রয়েছে।

তবে আগামী মাসের পর সেখানেও একটি অফিস খোলা হবে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে তাদের মনোনীত প্রার্থী- যিনি কিনা সুনামগঞ্জের বাসিন্দা- একাই প্রচারণা চালাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে আমিরুল বলেন, “যেহেতু সেখানে আমাদের কোনো তৎপরতা নেই, তাই স্থানীয় কোনো প্রার্থী ছিল না। যিনি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন সেই প্রার্থীর আগ্রহ ছিল, সে কারণেই আমরা তাকে মনোনয়ন দিয়েছি। এটি জাতীয় নির্বাচনের আগে আমাদের বোঝাপড়াকে আরও গভীর করবে।”

তিনি আরও বলেন, প্রার্থী রশিদ চট্টগ্রামের বাসিন্দা না হওয়ায় তাকে একাই প্রচারণা চালাতে হয়েছে।

“তবে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী নেতা। তিনি দিনরাত প্রচারণা চালান,” বলেন আমিরুল।

তিনি আরও বলেন, রশিদ তার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আমিরুল বলেন, চট্টগ্রামে কর্মী না পাঠানোর আরেকটি কারণ ছিল জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি।

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা-১৭ উপ-নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থী কেন মাত্র ৬৪ ভোট পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আমিরুল বলেন, ভোটারদের আগ্রহের অভাবের কারণেই এটা হয়েছে।

“আমরাও এ নির্বাচনের জন্য সামনে থেকে কোনো প্রচারণা চালাইনি। আমাদের প্রার্থী শুধু অনলাইনে একটু প্রচারণা চালিয়েছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজনসহ অন্য কোনো প্রার্থীর তেমন কোনো প্রচারণা ছিল না,” যোগ করেন তিনি।

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে মুক্তিজোটের প্রার্থী ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন, যিনি হলফনামায় নিজেকে একজন সাংবাদিক ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আমিরুল বলেন, দলের মূল আগ্রহ জাতীয় নির্বাচন, যেখানে তারা সারাদেশে নিজেদের ৫০,০০০ নেতাকর্মীর পূর্ণশক্তি ব্যবহার করে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

“আরেকটি বিষয় হলো, জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা কোনো ধরনের ঝামেলায় জড়াতে চাই না। এ কারণেই আমরা এভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি,” বলেন তিনি।

তাহলে মানুষ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তজোটকে কেন ভোট দেবে?- এ প্রশ্নের জবাবে আমিরুল বলেন, “আমাদের চিন্তাভাবনা এবং সংস্কারের চেতনার কারণে জনগণ আমাদের ভোট দেবে। আগামী মাসে আমরা একটি সভা করব যেখানে আমরা সরকারের কাছে কিছু দাবি জানাব। আমরা দাবি পূরণে আন্দোলন শুরু করব। তারপর থেকে আমরা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। তখন জনগণ আমাদের সামর্থ্য বুঝবে এবং আমাদের সমর্থন করবে।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচন কমিশন বেশকিছু রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করেছে, যাদের মধ্যে অনেকগুলোই এখনও তাদের উপস্থিতি জাহির করতে পারেনি।

এবার প্রায় ৯৩টি দল নিবন্ধনের আবেদন করে, এরমধ্যে ১২টি দল প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত দুটি দল নির্বাচিত হয়। ১২টি দলের মধ্যে ৪টি দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য সঠিক বলে বিবেচিত হয়। পরবর্তীতে এ ৪ দলের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয় এবং এরমধ্যে ২টি দলকে বাছাই করা হয়। ফলে মোট নিবন্ধিত দলের সংখ্যা হয় ৪২।

সম্প্রতি নিবন্ধনের জন্য বাছাইকৃত দুটি দলের মধ্যে একটি হলো- বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। এ দলের প্রধান হিসেবে রয়েছেন শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী, যাকে পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন তার নিজেরই ভাই-বোন।

তারা বিএসপিকে নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধও করেন।

একটি আবাসিক ভবনে বিএসপি’র পার্টি অফিস। সে ভবনে দলের প্রধানের ভাইবোনরাও থাকেন।

তাদের মধ্যে একজন, শাহজাদা সৈয়দ শহীদ উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ভাইবোনদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড় সাইফুদ্দিন। ১০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের পৈত্রিক সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছেন তিনি।

“এটা একটা আবাসিক বিল্ডিং। আমরা এখানে থাকি। এই বাড়িতে কিভাবে অফিস হতে পারে? আমরা এখন সারাক্ষণই ভয়ে ভয়ে থাকি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদেরকে সন্ত্রাসীদের ভয় দেখান উনি,” বলেন শহীদ উদ্দিন।

এ বিষয়ে বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন টিবিএসকে বলেন, “এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ইসি চাইলে আরও তদন্ত করতে পারে। এসব সম্পত্তি আমার বাবাই আমাকে দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এটি দেওয়ানি আদালতের বিষয়।

“আমাদের আইন অনুসারে, কোনো দল নিজস্ব জায়গায় বা ভাড়ায় অফিস পরিচালনা করতে পারে। একটি অভিযোগ এসেছে। আরও অভিযোগ আসলে আমরা আরও তদন্ত করব। আমরা উভয় পক্ষের কথা শুনব এবং এরপর সিদ্ধান্ত নেব। এখনও আমরা চূড়ান্তভাবে কাউকে নিবন্ধন করিনি। যে অভিযোগ আসছে বা সামনে যদি আসে তাহলে আমরা তা শুনব। অভিযোগ করার জন্য ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময় আছে।”

এরপর আসে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।

রাজধানীর শাহ আলীবাগের একটি গলিতে অবস্থিত চারতলা ভবনে এর কার্যালয়। গুগল ম্যাপে খুঁজে পাওয়া যায়না এ অফিস।

অফিসের একটি ব্যানারে বিএসপি চেয়ারম্যানের ছবি এবং দলের পাঁচটি ছাপানো হয়েছে।

বিএসপি’র দপ্তর সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “আমরা শান্তিবাদী, তাই আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একটি আন্তঃধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে তুলতে চাই, সুফিবাদ কায়েম করতে চাই। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

মাঠে খুব বেশি উপস্থিত না থাকায় দলটির সমালোচনা হলেও, ইব্রাহিম জানান, ৪০টি জেলায় তাদের কার্যালয় রয়েছে।

“আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আমরা ২২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আমাদের উল্লেখযোগ্য সমর্থক আছে।”

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে দল পরিচালিত হয়।

“অনেকে আমাদের অনুদান দিতে চায় কিন্তু আমরা তা নিচ্ছি না। আমাদের চেয়ারম্যান রপ্তানি-আমদানির ব্যবসা করতেন। কিন্তু তা ছেড়ে তিনি এখন পার্টিতে সময় দিচ্ছেন। জন্মসূত্রে তিনি বিপুল অর্থের মালিক। তিনি একাই ৪৮টি মাদ্রাসা চালান। কয়েকশ ইমাম খতিব তার ওপর নির্ভরশীল।”

ইসি বলছে, আইন অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ২২ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কার্যালয় থাকা বাধ্যতামূলক।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসলে একটি সার্কাস চলছে। যে দলের কোনো তৎপরতা নেই, সে দল কীভাবে নিবন্ধন পায় তা কেউ জানে না। ওইসব দলের তদন্তের বিস্তারিত তথ্য ইসিকে দিতে হবে।”

মুক্তিজোট সম্পর্কে তিনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের দল অংশ নেয়- এটা হাস্যকর। আমি কয়েকবার সুপারিশ করেছি ছোট দলগুলো যেন শুধু স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। সেখানে যদি তারা বড় আকারের সমর্থন [ইসি নির্ধারিত] অর্জন করতে পারে, কেবল তখনই যেন তাদেরকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bandar togel
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor