International

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পরোয়ানায় বিপাকে বাইডেন

গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসনে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে।

দ্বিমুখী নীতির আশ্রয় নিয়ে হোয়াইট হাউস তার মিত্রকে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে চাইছে। তবে মাত্র বছরখানেক আগে রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এ আদালতের পরোয়ানার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন বাইডেন।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থি আইনপ্রণেতারা একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এতে নেতানিয়াহুসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসি পরোয়ানা জারি করলেই আদালত-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর ব্রিটিশ নাগরিক করিম খান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলীয় আলোচিত কংগ্রেসউইম্যান রাশিদা তালিব নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন। সব মিলিয়ে বাইডেন প্রশাসন এ ইস্যুতে চরম বেকায়দায় পড়েছে। 

প্রিন্সটন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ভিজিটিং প্রফেসর এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে এক নিবন্ধে লিখেছেন, ওয়াশিংটন রুশ নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ইসরায়েলি নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করছে। এটা ভুল। আইসিসির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত নয় বাইডেনের। তিনি লিখেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের মামলার মতো বাইডেন প্রশাসনের উচিত বাধাদান থেকে সরে দাঁড়ানো এবং আইসিসির প্রক্রিয়াকে নিজস্ব পথে চলতে দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা রোম সংবিধির পক্ষভুক্ত নয়। তবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে হেগভিত্তিক আদালতের চলমান তদন্তের সম্ভাব্য রায় নিয়ে উভয় দেশেই উদ্বেগ বাড়ছে বলে জানায় নিউজউইক। 

নেতানিয়াহু আশঙ্কা করছেন, আইসিসি শিগগিরই তাঁকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। তিনি সাহায্যের জন্য বাইডেন প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। এরপরই ওয়াশিংটন অভিযোগ দায়ের থেকে আইসিসির করিম খানকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।

তবে ইস্যুটি বাইডেন প্রশাসনের জন্য বিশেষভাবে জটিল। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গত বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় আইসিসির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন বাইডেন। তিনি বলেছিলেন, পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘ন্যায়সংগত’। মার্কিন সিনেট সর্বসম্মতভাবে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস করে।

আরেক পশ্চিমা নেতা জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর ঘোষণা করেছিলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।’

তবে আইসিসি নিয়ে সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র সুবিধাবাদী নীতিতে চলে। ৯ বছরের মেয়াদে তিনজন রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আইসিসিতে সফলভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন মোরেনো-ওকাম্পো। তিনি নিউজউইককে বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার বিষয়টি খতিয়ে দেখছিলেন। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা দুবার তাঁর প্রচেষ্টা বন্ধ করতে বলেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে চাপ দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধক।

মোরেনো-ওকাম্পো বলেন, ‘আমাদের এটা মেনে নেওয়া উচিত নয় যে কোনো সরকার বলবে, আপনি এই ব্যক্তির বিচার করতে পারবেন না। কারণ, তিনি আমার বন্ধু। আমি মনে করি, এটি একটি গুরুতর সমস্যা। কারণ, মার্কিন নীতি হলো তার বন্ধুদের রক্ষা করা।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছিলেন, মার্কিন কৌশল হলো আইসিসির শুধু সেই মামলাগুলোকে সমর্থন করা, যা যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করে। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না; যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে।’

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ লিবিয়া বা সুদানের দারফুরের মামলা আইসিসিতে পাঠালে মার্কিন কংগ্রেস তাকে সাধুবাদ জানায়। মোরেনো-ওকাম্পো বলেন, ‘অবশ্যই আপনি যখন শত্রুদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্র খুশি। সে ক্ষেত্রে প্রসিকিউটর স্বাধীন।’

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের জন্য আইসিসি মামলা নিলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষোভ ঢেলে দেন। তাঁর প্রশাসন পরে ভিসা প্রত্যাহার, নিষেধাজ্ঞাসহ আইসিসি কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মামলাটি শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে বাদ দেওয়া হয় এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। 

বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করার যে কোনো প্রচেষ্টার খোলাখুলি বিরোধিতা করলেও পুতিনের ক্ষেত্রে ছিল উল্টো চিত্র। আইসিসিকে এ বিষয়ে প্রমাণ প্রদানে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় হোয়াইট হাউস।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরও গত সপ্তাহে প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তের বিরোধিতা করেন। তবে পাশাপাশি তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন আইসিসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের হুমকি বা ভয় দেখানোর চেষ্টার স্পষ্ট বিরোধিতা করে। 

বাইডেন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিউজউইককে বলেছেন, হোয়াইট হাউস ট্রাম্প প্রশাসনের মতো আইসিসি কর্মকর্তাদের টার্গেট করার পরিকল্পনা নেয়নি।

করিম খানকে হুমকি মার্কিন সিনেটরদের

যুক্তরাষ্ট্রের ১২ মার্কিন সিনেটর আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপ নিলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

এক চিঠিতে টম কটনের নেতৃত্বে ১২ সিনেটর লিখেছেন, নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা কেবল অবৈধ হবে না, এর আইনি ভিত্তিও নেই। এ ছাড়া হাউস রিপাবলিকানরা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে ‘সাবধানতা’ হিসেবে আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আইন তৈরি করছে বলে জানায় ফক্স নিউজ। 

কংগ্রেসের উভয় দলের ইসরায়েলপন্থি সদস্যরা বারবার সতর্ক করেছেন, আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিকে এগিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিণতি ভোগের ঝুঁকি নেবে। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককল জানান, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আইন নিয়ে কাজ চলছে। আইনপ্রণেতারা আইসিসি প্রসিকিউটর করিম খানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে জোর দিয়ে বলতে চাই যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পথে যাওয়া সত্যিই একটি খারাপ ধারণা এবং এতে সম্পর্ক নষ্ট হবে।’

তবে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে করিম খান বলেন, তাঁর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয় দেখানো বা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার সব প্রচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d