Bangladesh

নৌকা পেতে দৌড় একঝাঁক তারকা, ব্যবসায়ী, আমলার, ভোটের আগে নৌকা পেতে জোর লড়াই

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। এবার ৩০০ আসনে দলটির ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি আসনে গড়ে বিক্রি হয়েছে ১১টির বেশি। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ক্রিকেট ও বিনোদন জগতের একঝাঁক তারকা। দলের বর্তমান এমপি ও রাজনীতিবিদের পাশাপাশি চিত্রতারকা, সংগীতশিল্পী, ক্রিকেটার, ফুটবলার, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, প্রশাসন ও পুলিশের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম রয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায়। দল কিংবা সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে নেই– এমন ব্যক্তিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। বাদ যাননি উপজেলা চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিরা। আইন মানতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ পদত্যাগ করে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।

এখন আগ্রহীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের প্রথম সভা বসবে। বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০০ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে তিন-চার দিন লাগতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। 

যেসব তারকা প্রার্থী হতে চান

ক্রীড়াঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাগুরা-১ ও ২ এবং ঢাকা-১০ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নোয়াখালী-২, ফুটবলার দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল মানিকগঞ্জ-২ এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাফুফের সদস্য সত্যজিৎ দাশ রুপু চট্টগ্রাম-১২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। 

বিনোদন জগতের তারকাদের মধ্যে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), সিমলা (ঝিনাইদহ-১), নায়ক মাসুদ পারভেজ রুবেল (বরিশাল-৩), অভিনেত্রী শমী কায়সার ও রোকেয়া প্রাচী (ফেনী-৩), অভিনেতা ড্যানি সিডাক (ঢাকা-১০) ও সিদ্দিকুর রহমান (ঢাকা ১৭ ও টাঙ্গাইল-১), চিত্রনায়ক শাকিল খান (বাগেরহাট-৩) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন।

আমলা

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন খুলনা-১ আসনে সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, ভোলা-৪ আসনে সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, নওগাঁ-৩ আসনে সাবেক সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, চাঁদপুর-১ আসনে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব গোলাম হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে সাবেক সচিব জিল্লার রহমান এবং সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক। 

পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল-৫ আসনে মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া মাহবুব উদ্দিন আহমদ (এসপি মাহবুব) বীরবিক্রম, শরীয়তপুর-১ আসনে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে সাবেক ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ, জামালপুর-১ আসনে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, ময়মনসিংহ-৮ আসনে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিম এবং সাতক্ষীরা-৪ আসনে সাবেক সিনিয়র এএসপি শেখ আতাউর রহমান। 

ব্যবসায়ী

প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, কুমিল্লা-৩ আসনে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, ঢাকা-১৭ আসনে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এবং ফরিদপুর-১ আসনে প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী সিরাজুল ইসলাম। 

সাংবাদিক

বিশিষ্ট সাংবাদিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ফেনী-২, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম কুমিল্লা-১০, ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। 

চিকিৎসক

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন। তারা হচ্ছেন– বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম-৩, সাবেক সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান রাজবাড়ী-২, স্বাচিপের সাবেক মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ ময়মনসিংহ-৪, বিএমএর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী সিলেট-৩, দলের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সীগঞ্জ-১, স্বাচিপের সাবেক সহসভাপতি ডা. রউফ সরদার নরসিংদী-৪ এবং খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. শহীদ উল্লাহ খুলনা-৬ আসন। 

গত শনিবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলেছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলা ও তিনতলায় স্থাপিত বিভাগওয়ারি ১০টি বুথ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করেন। জমা দেন নিচতলার বুথে। এবারই প্রথম অনলাইনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

এবারের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা কম। গত নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৪ হাজার ৩৭ জন। আসনপ্রতি গড় প্রার্থী ছিলেন ১৩ জনের বেশি। সেবার মনোনয়ন বিক্রি খাতে দলীয় তহবিলে জমা হয়েছিল ১২ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবার মনোনয়ন ফরমের দাম ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করায় দলের আয় বেড়েছে।

এবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমাদানকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকের বিশাল শোডাউন ছিল নজিরবিহীন। মিছিল-স্লোগান, বাদ্য-বাজনা, ট্রাক-পিকআপ আর মোটরসাইকেলের পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ির মহড়া– সর্বোপরি উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছিল নির্বাচনী আমেজ। পরিস্থিতি এমনটাই দাঁড়িয়েছিল, গতকাল বিকেল ৪টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শেষ করে দেওয়া হলেও জমা নিতে হয়েছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর অনলাইনে ফরম জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে আজ বুধবার পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ও তার মিত্রদের নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা খুব কম– এমনটা মনে করেই বেশির ভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত এমনটাও মনে করছেন মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা। তা ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এবার দলীয় হাইকমান্ড অনেকটাই নমনীয় থাকবে বলেও ধারণা এসব প্রার্থীর। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে থাকতেও তারা দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

বর্তমান মন্ত্রিসভার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য ও আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতা দলের ভেতরে চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দলের অনেকেই মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসনে দলের একক প্রার্থী। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আট নেতার বিরুদ্ধে কেউ মনোনয়ন চাননি। 

এ ছাড়া বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়নের জন্য বর্তমান এমপির পাশাপাশি এমপির ভাইবোন ও ছেলেরা দলের প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। কুমিল্লা-১ আসনে বাবার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন ছেলে। কক্সবাজার-৩ আসনে বর্তমান এমপির সঙ্গে মনোনয়নের দৌড়ে শামিল হয়েছেন সহোদর দুই ভাইবোন। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে এমপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তাঁর ভাই, ছেলে ও ভাতিজা।

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি আসনে গড়ে বিক্রি হয়েছে ১১টির বেশি। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় দলের বর্তমান এমপি ও রাজনীতিবিদের পাশাপাশি চিত্রতারকা, সংগীতশিল্পী, ক্রিকেটার, ফুটবলার, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আমলা, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম রয়েছে। দল কিংবা সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে নেই– এমন ব্যক্তিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। বাদ যাননি উপজেলা চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিরা। আইন মানতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ পদত্যাগ করে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল শরিকদের মধ্যে গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার ও বাসদের (রেজা) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খানসহ চার নেতা নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। এ দুটি দলের নিবন্ধন নেই। বেশ কয়েকটি আসনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী প্রার্থী হয়েছেন।

গত শনিবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলেছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলা ও তিনতলায় স্থাপিত বিভাগওয়ারি ১০টি বুথ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করেন। জমা দেন নিচতলার বুথে। এবারই প্রথম অনলাইনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

এবারের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা কম। গত নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৪ হাজার ৩৭ জন। আসনপ্রতি গড় প্রার্থী ছিলেন ১৩ জনের বেশি। সেবার মনোনয়ন বিক্রি খাতে দলীয় তহবিলে জমা হয়েছিল ১২ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবার মনোনয়ন ফরমের দাম ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করায় দলের আয় বেড়েছে।

এবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমাদানকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকের বিশাল শোডাউন ছিল নজিরবিহীন। মিছিল-স্লোগান, বাদ্য-বাজনা, ট্রাক-পিকআপ আর মোটরসাইকেলের পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ির মহড়া– সর্বোপরি উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছিল নির্বাচনী আমেজ। পরিস্থিতি এমনটাই দাঁড়িয়েছিল, গতকাল বিকেল ৪টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শেষ করে দেওয়া হলেও জমা নিতে হয়েছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর অনলাইনে ফরম জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে আজ বুধবার পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ও তার মিত্রদের নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা খুব কম– এমনটা মনে করেই বেশির ভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত এমনটাও মনে করছেন মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা। তা ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এবার দলীয় হাইকমান্ড অনেকটাই নমনীয় থাকবে বলেও ধারণা এসব প্রার্থীর। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে থাকতেও তারা দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত বৃহস্পতিবার

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ সমকালকে জানিয়েছেন, প্রথম দিনের বৈঠকে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি রয়েছে। এর পর মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি বৈঠকে অন্য বিভাগগুলোর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। 

ঢাকায় সর্বোচ্চ, সিলেটে সর্বনিম্ন

দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, এবার সরাসরি ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে ৩ হাজার ২৪১টি। এ ছাড়া ১২১টি অনলাইনে সংগ্রহ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ঢাকা বিভাগে– ৭৩০টি। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে– ১৭২টি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, ময়মনসিংহে ২৯৫, বরিশালে ২৫৮, খুলনায় ৪১৬, রংপুরে ৩০২ ও রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হয়েছিল দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম। প্রথম দিন ফরম বিক্রি হয় ১ হাজার ৭৪টি। দ্বিতীয় দিন ১ হাজার ২১২, তৃতীয় দিন ৭৩৩ এবং শেষ দিন ৩৪৯টি ফরম বিক্রি হয়। 

সর্বোচ্চ মনোনয়নপ্রত্যাশী কুমিল্লা-৫ আসনে

আসনওয়ারি সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী কুমিল্লা-৫ আসনে। ২৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এই আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়েছিল। 

একক প্রার্থী ৯ আসনে

কমপক্ষে ৯টি আসনে একক প্রার্থী রয়েছেন। আসনগুলো হচ্ছে– আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ-৩, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালী-৫, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের গোপালগঞ্জ-২, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বরিশাল-১, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের পঞ্চগড়-২, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর দিনাজপুর-২, প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিনের বাগেরহাট-১, আরেক চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের খুলনা-২ ও শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের বাগেরহাট-২ আসন।

১৪ দলের শরিকরাও নিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম

১৪ দলের শরিক গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফরম জমা দেন তিনি। এর আগের দিন সোমবার ১৪ দলের আরেক শরিক বাসদের (রেজা) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান সিরাজগঞ্জ-৬ এবং কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল হক সুনামগঞ্জ-২ ও বকুল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন। 

স্বজনরাই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী

কুমিল্লা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। তাঁর ছেলে মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলীও একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

কক্সবাজার-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন তাঁর বোন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী এবং কমলের ভাই ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তাঁর ছেলে মাজহারুল ইসলাম এবং ভাই মোহাম্মদ আলী ও ভাতিজা আলী আসলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button