Bangladesh

পর পর দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা)ভোটে জামানত বাঁচে না

পর পর দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে জয়ী হওয়া তো দূরের কথা, জামানতই বাঁচাতে পারছেন না। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও চারটিতে জামানত হারিয়েছেন দলটির প্রার্থীরা। নির্বাচনী আইন অনুসারে কোনো নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৮ শতাংশের কম পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামানত হারান।

সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনেও এই দলের প্রার্থীদের সাফল্যের হার তলানিতে। ব্যতিক্রম শুধু এরশাদের নিজ এলাকা রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গত ডিসেম্বরে এই নির্বাচনে মেয়র পদে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

সার্বিক এ অবস্থা সম্পর্কে দলটির দাবি, জাতীয় পার্টির পক্ষে জনসমর্থন কমেনি।

কিন্তু বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই ভোটের ফলাফলে জনমতের প্রতিফলন ঘটছে না।

জাতীয় সংসদে অবস্থান

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টি আসন পায় ২৭টি। মহাজোটের শরিক হিসেবে কম ভোট পেয়েও এ সাফল্য লাভ করে দলটি। অন্যদিকে বিএনপি ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়েও আসন পায় ৩০টি।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৪টি আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা অর্জন করে।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন

১৭ জুলাই ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান এক হাজার ৩২৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম জাতীয় পার্টির তুলনায় এ নির্বাচনে চার গুণেরও বেশি পাঁচ হাজার ৬০৯ ভোট পান। এই নির্বাচনে গুলশানের সরকারি কালাচাঁদপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে শূন্য ভোট পান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এ ছাড়া তিনটি কেন্দ্রে একটি করে, ১৯টি কেন্দ্রে দুটি করে এবং ৯টি কেন্দ্রে তিনটি করে ভোট পড়ে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে।

২৪৩

২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৬৭ হাজার ৬৬৯ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী হান্নান শাহকে হারিয়েছিলেন। এরশাদ ভোট পেয়েছিলেন এক লাখ ২৩ হাজার ৯৩৬ আর বিএনপি প্রার্থী হান্নান শাহ পেয়েছিলেন ৫৬ হাজার ২৬৭ ভোট।

চার সিটিতেই জাপা প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন

রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জন সত্ত্বেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ভোট প্রাপ্তিতে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। সিলেট সিটি করপোরেশন বাদে অন্য চার সিটিতেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন।

গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিজাম উদ্দিনের অবস্থান ছিল পঞ্চম। তিনি পেয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার ৩৮২ (২.৯%) ভোট। অন্য দলগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ (৪১.৭%) ভোট, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৬ (৩৮.৯%) ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫২ (৭.৯%) ভোট এবং বাংলাদেশ গণফ্রন্টের প্রার্থী আকুল ইসলাম পান ১৬ হাজার ৯৭৪ (২.৯%) ভোট পান।

গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থীদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেননি। ভোট প্রাপ্তিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। খুলনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ৭৮ ভোট। বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৩৫৪ ভোট।

গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা। এই অবস্থায়ও রাজশাহীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর তুলনায় অনেক বেশি ভোট পান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৩ হাজার ৪৮৩ ভোট। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন ১০ হাজার ২৭২ ভোট। জাকের পার্টির প্রার্থীও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর তুলনায় এ নির্বাচনে ৪৪১ ভোট বেশি পেয়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই শুধু ভোট প্রাপ্তিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এক লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোটের বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী পান ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।

গত বছর অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি বা দেয়নি।

ইউপি ও পৌর নির্বাচনেও জাপার সাফল্য তলানিতে

২০০০ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি ধাপে ২৩০টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এতে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী একটিতে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ১৮৫টিতে। বিএনপি প্রার্থীরা ১১টিতে, জাসদ একটিতে আর ৩২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। স্বতন্ত্রদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন।

জাপা বলছে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে জনপ্রিয়তা নির্ণয় করা যায় না

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভোট প্রাপ্তি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ভোট ও দলের জনপ্রিয়তা কমেনি। সমস্যা হচ্ছে বর্তমান সরকারের নির্বাচনীব্যবস্থা। বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকারি দলের প্রার্থীরাই সবখানে প্রাধান্য পেয়েছেন। এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে কোনো দল বা প্রার্থীর প্রকৃত জনপ্রিয়তা নির্ণয় করা যায় না। এমন নির্বাচনের ফলাফলে বলা যাবে না জাতীয় পার্টির ভোটের হার নিম্নগামী হচ্ছে বা জাতীয় পার্টি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d