পাতে কমছে পদ
পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব ইফতারির বাজারে পড়েছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর তারা কম-বেশি ১৫টি আইটেম বিক্রি করেছেন। কিন্তু এবার তাদের বিক্রি সীমাবদ্ধ ৪-৫টি আইটেমে। প্রথম রোজার দিন গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাজারের যে চিত্র দেখা গেছে, তাতে বোঝা যায় এবার মানুষ ইফতারি থেকে অনেক আইটেম বাদ দিচ্ছেন।
ক্রেতারা বলছেন, গত বছর রোজার সময় একটি আইটেম যে দামে পাওয়া যেত এবার তার দাম অনেক বেড়েছে। ফলে চাইলেও ইফতারে গত বছরের মতো আইটেম আর পাতে রাখা যাচ্ছে না।
সরেজমিন ইফতারির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর যে জিলাপি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দামে কেনা যেত। সেই জিলাপির দাম বেড়ে এবার ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক দিন আগেও যে শিঙাড়া প্রতিটি ১০ টাকা ছিল, তা ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনি গত বছর ৬ টাকা বিক্রি হলেও এবার ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রান্না করা ছোলা বুট গত বছর ১৫০ টাকা কেজি দরে কেনা গেলেও এ বছর ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এভাবে প্রায় সব ধরনের ইফতারসামগ্রীর দামই বেড়েছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, বেইলি রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, দাম বেশি হওয়ায় বিক্রেতাদের আগের মতো বিক্রি নেই। ক্রেতারাও বেশি আইটেম কিনছেন না।
বংশালে ইফতারির বাজারে আসা মো. শুভ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আগের বছর থেকে এ বছর ইফতারির বাজার বেশ গরম। পাঁচ থেকে ছয় আইটেম কিনলেই ১ হাজার টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। খরচ বাঁচাতে আইটেম কম নিচ্ছি।’ তিনি জানালেন, বংশালে গত বছর যে জিলাপি কিনেছেন ১৬০ টাকা কেজি, সেই জিলাপি এবার কিনতে হচ্ছে ২২০ টাকা বেশি দামে। ভালো মানেরটার দাম প্রায় ২৮০-৩০০ টাকা।
আক্তারুজ্জামান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম, এত দাম দিয়ে ইফতারি কিনতে এসে সমস্যায় পড়তে হয়। গত বছর যে হালিমের এক বাটিরর দাম ছিল ৫০০ টাকা। এবার সেই বাটির দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মতো। তাই গত বছরের মতো আর বেশি আইটেম দিয়ে ইফতার করা যাবে না।
বঙ্গবাজারের ওয়ান স্টার হোটেলের কর্মী মো. শান্ত বলেন, ‘রমজানে আমাদের ইফতারির খুব চাহিদা থাকে। লোকজন এসে ভিড় করত এই রেস্টুরেন্টে। কিন্তু এ বছর আগের মতো বেচাবিক্রি হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যার জন্য ক্রেতারাও আগের মতো কিনছেন না।’
বঙ্গবাজারেরই আরেক হোটেলকর্মী মো. সামাদ মিয়া বলেন, ‘ক্রেতারা যদি না নেয়, তাহলে আমাদের তো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ আগে যারা ১০ থেকে ১৫ আইটেম ইফতারি নিতেন, এখন সেটি কমে ৪ থেকে ৫ আইটেম নিচ্ছেন। এতে করে আমাদের আয় কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা পুরো বছর আসায় থাকে রমজান মাসের জন্য। কিন্তু এখন যদি এই মাসেও বেচা-বিক্রি না হয়, তাহলে তো আমাদের অনেক লোকসান হয়ে যাবে।’
রাজধানীর অন্যতম বড় ইফতারির বাজার বেইলি রোডে এ বছর হাঁকডাক কমই দেখা গেল। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানকার গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। গতকালও বেইলি রোডের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকতে দেখা যায়। আর কয়েকটি দোকান খোলা থাকলেও আগের মতো বাহারি আইটেম দেখা যায়নি।
বেইলি রোডের এ ওয়ান নামের একটি ইফতারির দোকানের ম্যানেজার পারভেজ বলেন, ‘অগ্নিকা-ের পর আগের মতো জমজমাট নেই বেইলি রোড। গত বছরও প্রথম রোজায় মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে ইফতারি কিনতে এসেছিল। এবার সেই আমেজটাই নেই। এসব বিবেচনা করেই আমরা ইফতারির আইটেম বিক্রির আয়োজন করেছি। তবে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মানুষের বেশি বেশি আইটেম কেনার আগ্রহ দেখা যায়নি।’