পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া মুজিবুল ১৮ দিন পর জনসমক্ষে
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দেওয়া সেই মুজিবুল হক চৌধুরীকে ১৮ দিন পরে জনসমক্ষে দেখা গেল রোববার। চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন তিনি।
মুজিবুল হক চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর ৮ নভেম্বর থেকে তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা রোববার প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম-১৬ আসন (বাঁশখালী) থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। পরে সন্ধ্যায় ঢাকায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বাসায় দলটির নেতা-কর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যান। সেখানে মুজিবুল হককেও দেখা যায়।
এত দিন কোথায় ছিলেন, জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, অসুস্থ ছিলেন। মনোনয়ন পাওয়ায় মোস্তাফিজুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন। এর বেশি কিছু বলেননি।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, পিটার হাসকে হুমকি দিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যান মুজিবুল। একপর্যায়ে আত্মগোপনে যান। তাঁকে কোনো মিছিলেও দেখা যায়নি। অথচ বিএনপির হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে প্রায় প্রতিদিন বাঁশখালীতে কোনো না কোনো কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মুজিবুলের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া
‘বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ ৬ নভেম্বর সমাবেশ ও সভার আয়োজন করে চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সেখানে পিটার হাসের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন মুজিবুল হক। বক্তব্যে তিনি বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করেন।
আঞ্চলিক ভাষায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে মুজিবুল হক বলেন, ‘পিটার হাস আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ, আমরা ইমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্টু তখন বুঝতে পারবেন।’
ড. ইউনূস সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের মধ্যে আবার আরেকজন আছেন। তিনি সুদ নেন। এ কারণে ইউনূস সফল হবেন না। অথচ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা টানেল চালু করেছেন।’
পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দিয়ে মুজিবুল হকের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। পিটার হাসকে মারার প্রকাশ্য হুমকিকে ‘সহিংস বক্তব্য’ হিসেবে আখ্যা দেয় তারা।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হুমকি দিয়ে মুজিবুল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভায়। ১০ নভেম্বর গণভবনে এ সভার সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ১২ নভেম্বর মুজিবুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রাকিব হাসান।
বিতর্ক মুজিবুলের ‘নিত্যসঙ্গী’
মুজিবুল হক গত বছরের ১২ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদে চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে গত ১৫ জুন চাম্বল ছাড়া বাঁশখালীর সব কটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী প্রচারণায় চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক দফায় দফায় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন। বিতর্কিত নানা মন্তব্যের কারণে তাঁর ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল।
গত বছরের ২৮ মে মুজিবুল এক সভায় বলেন, ‘বাটন টিপে দিতে (ভোট) কেন্দ্রে আমার লোক থাকবে।’ এরপর ২ জুন বলেন, ‘আমরা বললে (ভোট) সুষ্ঠু, আমরা না বললে অসুষ্ঠু। আঙুল তোমার, টিপ দেব আমি।’ তাঁর এ মন্তব্যে বিতর্ক ছড়ায়। এরপর নির্বাচন কমিশন চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি মুজিবের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।
এ ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য মুজিবুল ‘টিপ মারা মুজিব’ হিসেবেও পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বিতর্কিত এই নেতাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে দ্রুতই বহিষ্কার করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। রোববার তিনি বলেন, এত দিন মুজিবুলকে কোথাও দেখা যায়নি। বিতর্কিত ওই বক্তব্য সামনে আসার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি এর জবাবও দেননি। ফলে তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর ওই বক্তব্য বিব্রতকর।