Bangladesh

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি চূড়ান্ত হতে পারে কাল, মালিকেরা কত প্রস্তাব দেবে

ঢাকার মিরপুর ও আশুলিয়া এবং গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে গতকাল মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা সড়কে নামেননি।

শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নতুন মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও মালিকপক্ষ। আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার সেগুনবাগিচায় বোর্ডের কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই সভায়ই পোশাকশ্রমিকের মজুরির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাকশ্রমিকেরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করলেও ঢাকার মিরপুর ও আশুলিয়া এবং গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে গতকাল রোববার শ্রমিকেরা রাস্তায় নামেননি। এই তিন এলাকার সব পোশাক কারখানায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কাজ হয়েছে।

তবে আশুলিয়ার তিনটি কারখানার কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছে। কারখানা তিনটি হলো আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার ছেইন অ্যাপারেলস, বেরন সরকার মার্কেট এলাকার হা-মীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশনস ও ধনাইদ ইউসুফ মার্কেট এলাকার ডিসাং সোয়েটার। শ্রমিক আন্দোলনের সময় এই কারখানা তিনটিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গত শুক্রবার মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহিল কাফী।

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য এপ্রিল মাসে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন।

এর বিপরীতে মালিকপক্ষ মজুরি প্রস্তাব দেয় ১০ হাজার ৪০০ টাকা, অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক। মালিকপক্ষের এই মজুরি প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা পরদিন থেকে আন্দোলনে নামেন। প্রথমে গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকায়ও ছড়ায়।

ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, মালিকপক্ষ নতুন কী প্রস্তাব দেয়, সেদিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য মজুরি প্রস্তাব না হলে শ্রমিকেরা আবার রাস্তায় নামতে পারেন—সেই আশঙ্কা রয়েছে।

মালিকেরা কত প্রস্তাব দেবেন

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে গতকাল পোশাক খাতের মজুরি নির্ধারণের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নেতারা গত কয়েক দিনে নিজেদের সদস্যদের পাশাপাশি শ্রমিকনেতা, বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বায়িং হাউসের মালিক এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

শ্রমিক আন্দোলন সামাল দিতে ও বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত করতে তাঁরা এখন দ্রুত মজুরি নির্ধারণের কাজটি করতে চান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালিকপক্ষের একজন নেতা জানান, মজুরি বোর্ডের সভায় মালিকপক্ষ ১২ হাজার টাকার বেশি প্রস্তাব দেবে—এমন সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, মঙ্গলবারই মজুরি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। মজুরির বিষয়ে আমরা সুন্দর একটা সমাধান চাই।

আমাদের শিল্পের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, অন্যদিকে শ্রমিকদেরও বেঁচে থাকতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বোর্ডে নতুন মজুরি প্রস্তাব ও এ সম্পর্কে আলোচনা করবেন আমাদের প্রতিনিধি।’ মালিকপক্ষ কত মজুরি প্রস্তাব করবে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

আশুলিয়া ও গাজীপুর শান্ত

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ১১ দিন আন্দোলনের পর গতকাল আশুলিয়া ও গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। কোথাও কোনো বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক।

যদিও সতর্কতার অংশ হিসেবে শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গাজীপুরের ভোগড়া, বাসন সড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, তেলিচালা ও চন্দ্রা এবং আশুলিয়ার কাঠগড়া, বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

কোনাবাড়ীর স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিক আলিমুর রহমান বলেন, ‘সরকার আমাদের বেতন নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছে শুনেছি। আশা করছি, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করে আমাদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে। যেহেতু আলোচনা চলছে, তাই আমরা আন্দোলন বাদ দিয়ে কাজে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনে ছিলেন এমন শ্রমিকদের ছাঁটাই করাও শুরু হয়েছে।

আজকে (গতকাল) শুধু একটি কারখানায়ই ৩৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এসব করছে মালিকপক্ষ।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button