Bangladesh

রফতানির আড়ালে ১০ প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচার: কাস্টমস গোয়েন্দা

তৈরি পোশাক রফতানির আড়ালে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। পাচারের সাথে জড়িত ১০টি প্রতিষ্ঠানকেও শনাক্ত করেছে সংস্থাটি। ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামাসহ বিভিন্ন দেশে এই অর্থ পাচার করা হয়েছে।

এই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এমডিএস ফ্যাশন, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড, স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক শাসমুল আরেফিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রফতারি করেছে। তারা বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নাম্বার কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে না এসে রফতানির অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানসমূহ টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রফতানি দেখিয়ে অর্থপাচার করেছে।

তদন্তকালে ১০টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে এক হাজার ২৩৪টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছে। রফতানি সম্পন্ন হওয়া এসব চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ৯ হাজার ১২১ টন, যার প্রত্যাবাসনযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বিল অব এক্সপোর্টের কোড ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। ১০ প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপি তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি এবং সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ওই ব্যাংকে লিয়েন করা নয়।

প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড
সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড ২০১৯ সালে ৩৮৩টি ও ২০২০ সালে ৮টিসহ ৩৯১টি রফতানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছ। রফতানি করা পণ্যচালানগুলোতে ৩ হাজার ৮০ মেটন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬৯৯ মার্কিন ডলার বা ৯২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫ টাকা প্রায়। প্রতিষ্ঠানের রফতানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের কোম্পানি এমএজে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, অ্যান্ডজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জেজে অ্যাসোসিয়েট ও এক্সপ্রেস ফরোয়ার্ডারস।

ফ্যাশন ট্রেড
রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৭৩টি, ২০১৯ সালে ১১৬ ও ২০১৮ সালে ৫৭টিসহ ২৪৯ রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। রফতানি করা পণ্যচালানগুলোতে ১ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সুদান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৮০ লাখ ৫১ হাজার ৬৪০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৬ টাকা। জালিয়াতির সাথে জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্টের নাম এমজে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল এবং এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

এম ডি এস ফ্যাশন
ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত এমডিএস ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১৮২টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে প্রমাণ পাওয়া গেছে। রফতানি করা পণ্য চালানগুলোতে ১ হাজার ৩৭৬ টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও ফিলিপাইনে রফতানির কথা বলেছে। যার মূল্য প্রায় ৫১ লাখ ৮২ হাজার ৫৮৬ মার্কিন ডলার বা ৪৪ কোটি ১ হাজার ৫৫১ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের রফতানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো চট্টগ্রামের এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও পান বেঙ্গল এজেন্সি।

হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড
গাজীপুরের টঙ্গিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১৫৬টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। তার ১ হাজার ৯৬১ টন টি-শার্ট রফতানি করা কথা বলেছে। অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানির মাধ্যমে ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬ মার্কিন ডলার বা ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ টাকা পাচার করেছে বলে প্রমাণ পাওযা গেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি, পরাগ এসএমএস লিমিটেড, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল ও একে ইন্টারন্যাশনাল।

থ্রি-স্টার ট্রেডিং
ঢাকার বনানীতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালে ১২০টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। রফতানি করা পণ্য চালানগুলোতে ৮১৬ টন টি-শার্ট রফতানি করে। মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, কানাডা, মিসর প্রভৃতি দেশে রফতানির নামে ৩০ লাখ ৫৩ হাজার ১০৮ মার্কিন ডলার বা ২৫ কেটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ৮৬৯ টাকা। রফতানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি, আর এস সি অ্যান্ড এফ লিমিটেড ও এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

ফরচুন ফ্যাশন
ঢাকার মিরপুরের ঠিকানার প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ এবং ২০১১ সালে ৫৯টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। ৪৩৫ টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, মিশর, কানাডা প্রভৃতি দেশে রফতানি করে ১৫ লাখ ২৪ হাজার ৮১৩ মার্কিন ডলার বা ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬২৩ টাকা পাচার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও এম/এস এ. কে এন্টারপ্রাইজ।

অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড
রাজধানীর কচুক্ষেতের ঠিকানাধারী প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৪২টি রফতানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। পণ্য চালানগুলোতে ১৯৫ টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানির বিপরীতে প্রায় ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭০ মার্কিন ডলার বা ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা পাচার করেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো- পান বেঙ্গল এজেন্সি, এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জে জে অ্যাসোসিয়েট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এন এইচ কর্পোরেশন।

পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড
গাজীপুরের টঙ্গিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ২০টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করে ১৭০ টন টি-শার্ট রফতানি করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইনস, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে রফতানি দেখিয়ে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ২৮২ মার্কিন ডলার বা ৫ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৪১ টাকা পাচার করেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো- জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এন এইচ কর্পোরেশন।

স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড
রাজধানীর শাহবাগের ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১০টি রফতানি চালান জালিয়াতি করে ৬৬.৮ টন টি-শার্ট রফতানি করে। অধিকাংশ পণ্যচালান ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে রফতানির বিপরীতে প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৯ মার্কিন ডলার বা ২ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৯০২ টাকা পাচার করেছে। জড়িত সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হলো- জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি ও কে আর এস সি অ্যান্ড এফ লিমিটেড।

ইডেন স্টাইল টেক্স
রাজধানরি খিলক্ষেতে ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালে ৮টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। ৪২ টন টি-শার্ট ওমান, জুনাই, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে রফতানি করে প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫ মার্কিন ডলার বা ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা পাচার করেছে। রফতানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট হলো- জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সি ও কে আর এস সি এন্ড এফ লিমিটেড।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d